প্রশ্ন ঃ হযরত মুহাম্মদ (সা.) কি উম্মতের কল্যাণ কামনাকারী ?
উত্তর ঃ অপরের কল্যাণ বা মঙ্গল কামনা করা হলো মুসলমানের বৈশিষ্ট্য। একজন মুসলমান, তার পাশের ভাইয়ের কল্যাণ কামনা করাই হলো ঈমানের অংশ। একজন মোমিন ব্যক্তি নিজের জন্য যা পছন্দ করবে বা উত্তম মনে করবে, তা অপর মুসলমান ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করতে হবে। নতুবা ঐ ব্যক্তি কখনও মোমিন হতে পারবে না। হযরত মুহাম্মদ (সা.) সমগ্র মাখলুকাতের কল্যাণ কামনাকারী ও হিতাকাংখী। ইহাতে কোনো প্রকার সন্দেহ কিংবা সংশয় নেই। উম্মতের জন্য নবী মুহাম্মদ (সা.) এর মতো হিতাকাংখী, এ জগত সংসারে দ্বিতীয় আর কেউ নেই। হযরত মুহাম্মদ (সা.) উম্মতের ব্যাথায় ব্যাথিত হন। উম্মতের দু:খ কস্ট তাঁর হৃদয়কে স্পর্শ করে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন, তোমাদের দু:খ-কষ্ট তার কাছে কষ্ট দায়ক। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, অত্যান্ত দয়ালু। অত:পর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে বল, ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি তাঁরই উপর তাওয়াক্কুল করেছি। আর তিনিই বিশাল আরশের প্রতিপালক’। (সূরা তাওবা:১২৮-১২৯)।
নবী রাসূলগণ হলেন, তার কওমের জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ। আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে মানুষের হেদায়াতের জন্য রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন। তিনি শত বিপদ-আপদ, দু:খ, দুর্দশা ও প্রতিক‚ল পরিবেশে থেকেও মানুষকে আলোর পথে ডেকেছেন। আল্লাহর কিতাবের আদেশ-নির্দেশ গুলো পড়ে শুনিয়েছেন। মানুষকে হিকমাত শিক্ষা দিয়েছেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ আইয়্যামে জাহেলিয়াত থেকে বেড়িয়ে এসেছিলো। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই আল্লাহ মোমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের মধ্য থেকে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন। যিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াত সমূহ তিলাওয়াত করেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেন। যদিও তারা ইত:পূর্বে ভ্রান্তিতে ছিল।’ (সূরা আল-ইমরান:১৬৪)।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মতের জন্য সতর্ককারী ও জান্নাতের সুসংবাদদাতা। আমাদের মৃত্যুর পর পরকালিন জীবন রয়েছে। ঐ জীবনের কোনো শেষ নেই। এ দুনিয়ার নেক আমল ও ভালো কাজের উপর পরকালের সুখ-শান্তি নির্ভর করবে। নবী ও রাসূলের জীবনাদর্শ অনুসরণ করে জীবন যাপন করলে, পরকালে জাহান্নামের আগুন থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। এজন্যে আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা হিসেবে পাঠিয়েছেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘আমি তোমাকে (নবী) প্রেরণ করিয়াছি স্বাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। যাহাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং তোমরা রাসূলকে শক্তি যোগাও তাহাকে সম্মান কর।’ (সূরা ফাতাহ : ৮-৯)।
হযরত মুহাম্মাদ (সা.) জীবনাদর্শে দুনিয়া ও আখেরাতের সকল প্রকার কল্যাণ নিহিত রয়েছে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘ আর তোমাদের যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আহযাব:২১)। হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে আল্লাহ তায়ালা শুধুমাত্র মুসলমানের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেননি, তিনি সকল জাতি গোষ্ঠীর জন্য নেয়ামত স্বরূপ। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনাকে বিশ্ব জগতের প্রতি কেবল রহমত স্বরূপ প্রেরণ করিয়াছি।’ (সূরা আম্বিয়া: ১০৭)।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে যারা ভালোবাসবে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসবেন। যারা নবী (সা.) এর পথ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিবে। আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুস্ট হবেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা ও রাসূলের কথা মেনে চলো, তারা যদি মূখ ফিরিয়ে নেয় আল্লাহ পাক কখনও কাফেরদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা আলো-ইমরান:৩২)। যারা নবীর দেখানো পথে মতে চলবে, আল্লাহ তাদেরকে পরকালে মহাপুরস্কার দিবেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে আরো যারা নেক কাজ করেছে, সর্বদা যারা মহান আল্লাহকে ভয় করে চলেছে, এদের সবার জন্যে রয়েছে মহাপুরস্কার।’ (সূরা আলে-ইমরান:১৭২)। উম্মতের কল্যাণ কামনাকারী নবী (সা.) এর দেখানো পথ অনুসরণ করে জীবন যাপন করার জন্যে, আল্লাহ তায়ালা সকলকে তৌফিক দান করুক। আমীন।
উত্তর দিচ্ছেন : ফিরোজ আহমাদ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন