শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

ইসলাম ও সংস্কৃতিতে বিনোদনের ব্যবস্থা

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

(পূর্বে প্রকাশিতের পর) 

বিনোদনমূলক কর্মকান্ড ইসলামী শরীআতের পরিপন্থি হবে না ঃ বিনোদনমূলক ব্যবস্থা কোন মতেই ইসলামী শরীআতের মূলনীতির পরিপন্থি হতে পারবে না। বিনোদনের এ মূলনীতিটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম যে সমস্ত কথা, কাজ আচার আচরণ ও তৎপরতা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, তা কখনো বিনোদনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। এককথায়, এ ক্ষেত্রে শরীআতের মূলনীতির বিরোধিতা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন- এমন পন্থায় বিনোদন না করা, যাতে অন্যের প্রতি ঠ্রাট্রা বিদ্রুপ বা নিন্দা করা হয় অথবা কারো প্রতি ভয় প্রদর্শন কিংবা অন্যের সম্পদ নষ্ট না করা হয়।
মুমিনগন কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে, কেননা সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। আর কোন নারী যেন অপর নারীদের উপহাস না করে, কেননা হতে পারে তারা তাদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারূপ কর না। এবংঅপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাকে মন্দ নামে ডাকা গুনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তাওবা না করে তারাই যালিম। মুমিনগন, তোমরা অনেক ধারণা করা থেকে বেঁচে থাকো, নিশ্চয় কতক ধারণা গুনাহ এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না, তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করতে পারবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।
উপর্যুূক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইমানদারদেরকে কিছু বিষয় থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেগুলো হলো: ক. কারো প্রতি ঠাট্রা বিদ্রুপ করা। খ. কাউকে মন্দ নামে ডাকা। গ. কারো ব্যাপারে অহেতুক কু ধারণা পোষণ করা। ঘ. কারো দোষ অণ্বেষণ করা। ঙ. পরনিন্দা করা।
তামাশাচ্ছলে অন্যের সম্পদ গ্রহণ করা প্রসঙ্গে রাসূল স. বলেন- অবশ্যই তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের সম্পদ (দ্রব্য সামগ্রী) খেলাচ্ছলে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়ে না ফেলে।
কোন মুসলিমকে ভয় দেখানো সম্পর্কে তিনি বলেন-কোনো মুসলিমই অপর মুসলিমকে ভয় দেখানো বৈধ নয়।
এমন বিনোদন না করা, যাতে অপর ভাইকে কথায় বা কাজে, শারীরিক বা মানসিক কিংবা আর্থিকভাবে কষ্ট দেয়া হয়। মহান আল্লাহ বলেন: যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ পাপের বোঝা বহন করবে। রাসূল স. ইরশাদ করেন, মুসলিম যে ব্যক্তি যার মুখ ও হাতের কষ্ট থেকে অপর মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে।
সুতরাং বিনোদনের নামে এমন কর্মকান্ড কখানো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, যা নানাভাবে মানুষকে কষ্ট দেয় কিংবা কষ্টের কারণ হয়। আমাদের সমাজে দেখা যায়, বিনোদনের নামে আয়োজিত কর্মসূচীগুলো অনেক সময় মানুষের ইবাদত বন্দেগী পালনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, অসুস্থ ব্যক্তিকে অস্তির করে তোলে বা মানুষের আরামের ঘুমকে দূর করে দেয়। আবার কোনো কোনো সময় যুব সমাজকে অধ্যয়নের মহান ব্রত থেকে বিচ্যূত করে চরিত্রহীনতার দিকে নিয়ে যায়। এসব কিছু ইসলাম প্রবর্তিত বিনোদন ব্যবস্থার সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
বিনোদনের ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় না নেওয়া এ প্রসঙ্গে রাসূল স. বলেন, ঐ ব্যক্তির জন্যে ধবংশ যে মানুষকে হাসাবার জন্যে এমন কথা বলে, যাতে সে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। উপর্যুক্ত হাদীস থেকে জানা যায় মানুষকে আনন্দ বা খুশি করার জন্যে মিথ্যা গল্প গুজব বলা বা ঘটনা বর্ণনায় মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করা জায়িয নেই।
বিনোদন যেন এমন না হয়, যাতে সম্পদের অপচয় হয় ঃ পবিত্র কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিভঙ্গি হলো- যে কোনো বৈধ কাজেও যদি কেউ অপ্রয়োজনীয় খরচ করে, তা অপচয় হিসেবে গণ্য হবে। অতএব, যদি অবৈধ বিষয়ে অল্পও খরচ করে, তাহলে তাও অপচয় বলে বিবেচিত হবে। প্রথমটিকে কুরআনের ভাষায় ইসরাফ এবং দ্বিতীয়টিকে তাবযীর বলা হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন: আত্মীয় স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্থ ও মুসাফিরকে ও এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।
আল কুরআনের উপর্যুক্ত আয়াতের মাধ্যমে আত্মীয় স্বজন, অসহায় ও মুসাফিরদের জন্যে ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। মানুষের আয় রোজগার থেকে এসব জরুরী খাতে ব্যয়ের সীমারেখা যেখানে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে এ কথাই বলা বাহুল্য যে, বিনোদনের মত মুবাহ একটি বিষয়ে অযথা ব্যয় মোটেই ইসলামে অনুমোদিত হতে পারে না। বিনোদন যেন নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার মাধ্যম না হয়।
ইসলাম নারী পুরুষের অবাধ সংমিশ্রণকে হারাম ঘোষণা করেছে। বিনোদনের নামে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার মাধ্যমে অনৈতিক কাজে জড়ানো ইসলাম স্বীকৃত বিনোদন নয়। ইসলামের শিক্ষা হলো, পুরুষ তার নিজস্ব পরিমন্ডলে বিনোদন উপভোগ করবে। পক্ষান্তরে নারী নিজ নিজ পরিধিতে ইসলামের সীমারেখা মেনে বিনোদন উপভোগ করতে পারবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “তোমরা তাঁদের (নবী পত্মীদের) কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে।”
উপর্যুক্ত আয়াতে বিশেষভাবে নবী স. এর পত্মীগণের উল্লেখ থাকলে ও বিধান সমগ্র উম্মতের জন্যে প্রযোজ্য। এ বিধানের সারমর্ম এই যে, নারীদের কাছ থেকে ভিন্ন পুরুষের কোন ব্যবহারিক বস্তু, পাত্র, বস্ত্র ইত্যাদি নেয়া জরুরী হয়ে পড়লে সামনে এসে নেবে না; বরং পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এ থেকে জানা যায়, নারী পুরুষের সংমিশ্রণ তথা অবাধ মাখামাখি কিংবা পর্দাহীনভাবে উঠাবসা বা চলাফেরা ইসলামে নিষিদ্ধ। কাজেই বিনোদনের নামে ইসলাম এমন কোন তৎপরতা বা আয়োজনকে সমর্থন দেয় না, যাতে নারী পুরুষের পারস্পরিক পর্দার বিধান লংঘিত হয়।
বিনোদন এমন হবে না, যা ব্যক্তিকে শরীয়ত কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব অথবা সামাজিক দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখে।
ইতঃপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, বিনোদন মানুষের মুখ্য বিষয় নয়; বরং আনন্দময় জীবনের একটি সহায়ক উপায় মাত্র। এ জন্যে বিনোদনের যে সমস্ত উপায় উপকরণ মানুষকে স্রষ্টার বন্দেগী থেকে গাফিল করে এবং সামাজিক নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের অমনোযোগী করে তুলে, সর্বোপরি যা মানুষকে হারামের দিকে ধাবিত করে এ রকম বিনোদন ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিশিষ্ট গবেষক আবু যুহরা রহ. বলেন: শরীআতপ্রণেতা যখন বান্দার ওপর কোন বিষয় পালন করা বাধ্যতামূলক করে দেন, তখন ঐ বিষয় পালনের যা মাধ্যম তাও বান্দাহর কাছ থেকে প্রত্যাশিত। পক্ষান্তরে যখন শরীআতপ্রণেতা কোন বিষয় থেকে মানুষকে নিষেধ করেন, তখন ঐ নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি যে সব বিষয় ব্যক্তিকে ধাবিত করে তাও হারাম হিসেবে গণ্য। (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন