বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

হিন্দু ধর্মগ্রন্থে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

শায়খ মুশাহিদ আলী চমকপুরী | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বিশ্ব জগতের মাঝে এই পৃথিবী মহান আল্লাহ তা‘য়ালার এক অনুপম সৃষ্টি। পৃথিবীকে তিনি সুশোভিত করেছেন পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর, নদ-নদী, গাছপালা, তরু-লতা, পশু-পাখি, আরো অনেক জানা-অজানা রহস্যের মাধ্যমে। এসব সৃষ্টি করেছেন মানুষের কল্যাণ ও উপভোগের জন্য। আর প্রতিনিধি মর্যাদা দিয়ে একমাত্র তাঁরই গোলামী, উপাসনা করার জন্য সৃষ্টি করলেন মানুষ। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “আমি জ্বীন ও মানব জাতিকে কেবল আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি (আল-কুরআন ৫১:৫৬)

খিলাফত ও ইবাদতের মহান পরিকল্পনায় তিনি মানবজাতির আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও তার সঙ্গী হিসেবে হযরত হাওয়া আলাইহাস সালামকে সৃষ্টি করেন। এরপর প্রতিনিধি হিসেবে দুনিয়ায় পাঠান এ ঘোষণা দিয়ে, “যুগে-যুগে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের জন্যে পথ নির্দেশনা যাবে, যারা ওই নির্দেশনা মেনে চলবে তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা চিন্তাগ্রস্থ হবে না। (আল-কুরআন ২:৩৮) হযরত আদম আলাইহিস সালাম ইন্তেকাল পর্যন্ত নবুওয়াত ও খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর যুগ-শতাব্দীর পরিক্রমায় মানবজাতির হেদায়েতের জন্যে বহু নবী-রাসূলকে প্রেরণ করেন। নবী-রাসূলগণের ধারাবাহিকতায় আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য আগমন করেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম- যিনি সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তার আগমন সম্পর্কে অতীতের সমস্ত নবী-রসূলগণ তাদের অনুসারীদেরকে অবহিত করেছেন এবং তার অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই স্থান-কাল, গোত্র-ধমর্, বর্ণ ও ভাষা নির্বিশেষে কেয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য তিনি সর্বশেষ ও একমাত্র নবী। আল্লাহ তায়া’লা বলেন, “আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করে পাঠিয়েছি, অথচ অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (আল-কুরআন ৩৪:২৮)
কালের গর্ভে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের সহীফা, কিতাব, অমীয় বাণীগুলো নানান বিকৃতির স্বীকার হলেও বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত বিকৃত ধর্মগ্রন্থগুলোতে উল্লিখিত মহাসত্যের সন্ধান পাওয়া যায়। বিকৃত ধর্মগ্রন্থ ছাড়াও মানুষের কল্পনাপ্রসূত স্বহস্তে লেখিত ধর্মগুলোতেও মহাসত্য আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (স.)-র নবুওয়াতের প্রমাণ পাওয়া যায়।
বলাবাহুল্য যে, কোনো গ্রন্থ বই কিতাবে কিঞ্চিৎ সত্য বচন বা উক্তি পাওয়া ঐ গ্রন্থ বা বইয়ের সঠিকত্বের প্রমাণ বহন করে না। একক সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসূল (স.)-র নিদর্শন এসব বিকৃত ও মানব রচিত ধর্মগ্রন্থগুলোতে পাওয়া যাওয়া, মহান আল্লাহ তা’য়ালারই অসীম কুদরতের নিদর্শন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,“আর তাঁরই কাছে আছে অদৃশ্যের কুঞ্জি। তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। স্থলে ও জলে যা কিছু আছে, সে সম্পর্কে তিনি অবহিত। (কোনও গাছের ) এমন কোনও শস্যদানা অথবা আর্দ্র বা শুষ্ক এমন কোনও জিনিষ নেই যা এক উন্মুুক্ত কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই”। (আল-কুরআন ৬:৫৯) যদিও এ মহাসত্য তাদের ধর্মগ্রন্থে লেখার ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য ছিলনা কিন্তু তাদের বিবেক ও দৃষ্টিশক্তির অগোচরে তারা তা লিপিবদ্ধ করে নিয়েছে-যা তারা কখনই উপলব্ধি করতে পারেনি।
পৃথিবীতে বহুল প্রচলিত ধর্ম সমূহের মধ্যে হিন্দুধর্ম উল্লেখযোগ্য। আমরা হিন্দু ধর্মগ্রন্থের আলোকে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত আলোচন করবো। কিন্তু অনেকেই হিন্দু ধর্মগ্রন্থের পরিচয় সম্পর্কে অবগত নন। তাই সংক্ষেপে ধর্মগ্রন্থের পরিচয় জানা প্রয়োজন মনে করছি। হিন্দুধর্মের ধর্মগ্রন্থ কয়টি তা হিন্দুধর্মের অনেক পন্ডিতই অবগত নন। হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ। বেদগ্রন্থ চার ভাগে বিভক্ত- (১) ঋগে¦দ, (২) সামবেদ, (৩) যজুর্বেদ ও (৪) অথর্ববেদ। বেদচতুষ্টয়ের মধ্যে সর্বপ্রথম লেখা হয় ঋগে¦দ-যা প্রধান বেদ হিসেবে হিন্দুধর্ম শাস্ত্রীগণের নিকট স্বীকৃত। হিন্দুধর্মগ্রন্থের মধ্যে বেদই সর্বপ্রথম রচিত-এ দৃিষ্টকোণ থেকে হিন্দুধর্মের উৎপত্তি আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর পূর্বে-এ মতটি গ্রহণ করেছেন প্রখ্যাত হিন্দুধর্মশাস্ত্রবিদ আচার্য্য ড. দূর্গাদাস বসু।
উল্লিখিত প্রধান চতুর্বেদ ছাড়াও বেদসংশ্লিষ্ট কিছু গ্রন্থ আছে। যেমন, আয়ুর্বেদ, গান্ধর্ববেদ, ধনুর্বেদ, উপনিষদ, উত্তরায়ণ বেদ, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক প্রভৃতি। রামায়ণ, মহাভারত, মনুসংহিতা, শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, কল্কিপুরাণ ও শ্রীগীতা অন্যতম ধর্মগ্রন্থ।
মূল আলোচনায় প্রবেশ করার পূর্বে আমাদেরকে আরো কয়েকটি বিষয় বুঝতে হবে। তার একটি হলো, যুগ। হিন্দুধর্মীয় শাস্ত্রমতে যুগ চারটি। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর,কলি। পূর্বের যুগে যেভাবে অবতার এসেছিলেন, তেমনি কলিযুগেও একজন ‘কল্কি অবতার’ বা ‘অন্তিম অবতার’ আগমনের বিস্তারিত আলোচনা হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বিদ্যমান।
অবতারের পরিচয়: হিন্দুধর্ম মতে, পৃথিবীতে যখন ধর্মের পরাজয় হয়, অধর্ম অন্যায় ও অত্যাচার যখন জগৎ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়, তখনই অবতার ধরাধামে আগমন করেন। এ পৃথিবীকে পাপমুক্ত করার জন্য। (শ্রীগীতা ৪/৭-৮) হিন্দুধর্ম মতে পাপ বিনাশের জন্য যে কোনো রূপে অবতার আসতে পারে। হিন্দুধর্মে অবতার দশজন। যথাক্রমে মৎস (মাছরূপে), কূর্ম (কচ্ছপরূপে), বরাহ (শূকররূপে), নৃসিংহ (দেহের উপরিভাগ মানুষ ও নিম্নভাগ সিংহের আকৃতি বিশিষ্ট), বামন (তিন পা বিশিষ্ট ক্ষুদ্রাকৃতির মানুষ), পরশুরাম, রাম, বলরাম, গৌতমবুদ্ধ ও কল্কি অবতার।
উল্লেখ্য যে, অবতার অর্থ: অবতীর্ণ, প্রেরিত, বার্তা বাহক। আরবী প্রতিশব্দ হলো, নবী, রাসূল। আর কলি মানে শেষ, আরবি প্রতিশব্দ হলো “খাতামুন”। আর অবতার মানে ‘অবতীর্ণ’ আরবি প্রতিশব্দ হলো “নাবিয়্যুন”। এবার দু’টি শব্দকে একত্রিত করলে “খাতামুন নাবিয়্যুন” বা শেষ নবী হবে। কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, “মুহাম্মাদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন, কিন্তু তিনি আল্লাহর রাসূল এবং নবীদের মধ্যে সর্বশেষ”। -(আল-কুরআন ৩৩:৪০)
আমরা বলছি না যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিন্দুধর্মের কল্কি অবতার বা দেবতা। কল্কি অবতার হওয়া না হওয়ার সাথে আমাদের ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে কল্কি অবতারের যে সকল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে, সেসকল বৈশিষ্ট মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে। এ জন্যেই ধর্মাচায্য অধ্যাপক ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় বলেছেন, বেদ-পুরানে উল্লেখিত ‘কল্কি অবতার’ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া আর কেউ নন। কারণ, ধর্মগ্রন্থে উল্লেখিত সকল গুণাবলি একমাত্র তাঁর মধ্যেই পাওয়া যায়। অন্য কারোর মধ্যে সবগুলো বৈশিষ্ট্য একসঙ্গে পাওয়া যায় না। অপরপক্ষে কল্কি অবতার হওয়ার দ্বারা এটা বিশ্বাস করার কোনো অবকাশ নেই যে, হিন্দুধর্ম সত্য এবং তাদের পূর্ববতী অবতারগণ সত্য ছিলেন। আমরা সংক্ষেপে দলিল-প্রমাণের আলোকে কল্কি অবতারের পরিচয় পেশ করছি।
কল্কি অবতারের নাম: হিন্দু ধর্মগ্রন্থ মতে, কল্কি অবতারের নাম ‘নরাশংস’। বাংলা অর্থঃ প্রসংশিত এর আরবী প্রতিশব্দ “মুহাম্মাদ”। ড. শ্রীবাস্তব বলেন, ‘নর’ অর্থ পুরুষ এবং ‘আশংস’ অর্থ প্রশংসিত। বেদে বলা হয়েছে,
“নরাশংসং সুধৃষ্টযমপশ্যং সপ্রথস্তমং” -ঋগে¦দ ১/১৮/৯
রাসূল স.-এর প্রসিদ্ধ নাম ‘মুহাম্মাদ’। -(আল-কুরআন ৪৮:২৯, ৩৩:৪০)
হিন্দুধর্মের শতাব্দীর সংস্কারক শ্রী শ্রী বালক ব্রহ্মাচারী সামবেদের
“মদৌ বর্তিতা দেবাদকারান্তে প্রকৃত্তিতা। বৃষাণাংভক্ষয়েৎ সদামেদা শাস্ত্রে চ স্মৃতা”
(অর্থাৎ: যে দেবের নামের প্রথম অক্ষর ‘ম’ এবং শেষ অক্ষর ‘দ’ হবে এবং যিনি গরুর মাংস ভক্ষণ করাকে সর্বকালের জন্য বৈধ ঘোষণা করবেন, তিনিই হবেন বেদানুযায়ী শেষ ঋষি। -কল্কি অবতার) উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, ‘মুহাম্মাদ’ নামের প্রথম অক্ষর ‘ম’ এবং শেষ অক্ষর ‘দ’ হওয়ায় তাঁকে মান্য করা আমাদের শাস্ত্রেরই নিদের্শ। আর তিনিই গরুর মাংস খাওয়াকে কিয়ামত পর্যন্ত বৈধ ঘোষণা করেছেন।
কল্কি অবতার তথা শেষনবীর আরেকটি নাম হচ্ছে ‘আহমদ’। (আল-কুরআন ৬১:৬) এই নামটিও বেদে আছে। “আহমিদ্ধি পিতুষ্পরি মেধামৃতস্য জগ্রভ” -ঋগে¦দ ৮/৬/১০
মুহাম্মাদ স. সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন, ঋগে¦দ ১/১৮/৯, ১/১০৬/৪, ২/৩/২, ৫/৫/২, ১/১৩/৩, ২/২২/৬, ১/১৪২/৩, যজুর্বেদ ২৯/২৬, ২০/৩৭, ২০/৫৭, ২১/৩১, ২১/৫৫, ২৭/১৩, ২৮/২, ২৮/১৯, সামবেদ পুর্বার্চিক, আগ্নেয় কান্ড, ১/৭/৬৪,
কল্কি অবতারের পিতার নাম: হিন্দু ধর্মগ্রন্থ মতে কল্কি অবতারের পিতার নাম ‘বিষ্ণুযশ’। বাংলাতে মালিকের দাস, আরবিতে ‘আব্দুল্লা’। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,“জনিতা বিষ্ণুযশসো নাম্না কল্কির্জগৎপতি।” -ভাগবত মহাপুরান ১/৩/২৫
মহা ভারতে আছে,“কালক্রমে বিষ্ণুযশ নামেতে ব্রাহ্মণ। সম্ভল গ্রামেতে জন্ম লইবে তখন।
মহাবীর্য্য মহাবুদ্ধি কল্কী তাঁর ঘরে। জন্মিবে যথা কালে দেব কার্য্য তরে...” –মহাভারত বনপর্ব্ব
হযরত মুহাম্মদ (স.)-র পিতার নাম ছিল আবদুল্লাহ। (সুনান তিরমিযি-৩৫৩২, বাইহাকী-১/১৭০) সীরাতে ইবনে হিশাম, সীরাতে মুস্তফা।
কল্কি অবতারের মাতার নাম: ‘সুমতি’ বাংলা অর্থ শান্তি, আবরীতে ‘আমিনা’।
“শম্ভলে বিষ্ণুযশসো গৃহে প্রাদুর্ভবাম্যহম্সুমত্যাং সুমত্যাং মাতরি বিভোঃ” -কল্কি পুরাণম্ ২/৪
হযরত মুহাম্মদ (স.)-র মাতার নাম ছিল আমিনা। (মুসতাদরাকে হাকেম-৩২৯২, বাইহাকী-১/১৮৯)
কল্কি অবতারের জন্ম স্থান: “সম্ভলগ্রমুমুখ্যস্য ব্রাহ্মণস্য মহাত্মন ঃ
ভবনে বিষ্ণুযশসঃ কল্কিঃ প্রাদুর্ভবিষ্যতিঃ” -ভাগবত মহাপুরান ১২/২/১৮
‘সম্ভল’ অর্থ সংরক্ষিত এলাকা, শান্তির ঘর, আরবী হয় “দারুল আমান/বালাদুল আমীন”।
মক্কা শরীফকে উভয় নামেই আখ্যায়িত করা হয়েছে। -কুরআন ৯৫
অথবা ‘সম্ভল’ বলা হয়, এমন স্থানকে যা নিজের প্রতি অন্যকে আকৃষ্ট করে রাখে। এও স্পষ্ট যে, মক্কা শরীফে বায়তুল্লাহ থাকার কারণে মক্কা সকল মানুষকে তাঁর দিকে আকৃষ্ট করে রেখেছে।
অধ্যাপক ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় বলেন, পৌরাণিক বা হিন্দুশাস্ত্র মতে পৃথিবীকে সাতটি দ্বীপে বিভক্ত করা হয়েছে। আর এর মধ্যে একটি দ্বীপের নাম হলো ‘সম্ভল দ্বীপ’। সম্ভলদ্বীপের অবস্থান আরব এবং এশিয়া মাইনরে। মুহাম্মাদ স. আরব দেশে মক্কা নগরীতে জন্ম গ্রহন করেছেন। -কল্কি অবতার
কল্কি অবতারের জন্ম তারিখ: “তিনি মাধব মাসের শুক্লপক্ষের দ্বাদশ তারিখে জন্ম গ্রহন করবেন।” মাধব মাস মানে বৈশাখ মাস আর ‘বিক্রমী ক্যালেন্ডার’ মতে বৈশাখ মাসকে ‘বসন্ত’ বলা হয়। বসন্তের আরবী রূপান্তর হল ‘রবিউ’। শুক্লপক্ষ বলা হয় প্রথম অংশকে, আরবী বলা হয় ‘আওয়াল’।
এবার একত্রিত করলে হবে ‘রবিউল আওয়াল। দ্বাদশ তারিখ মানে ১২ তারিখ। দেখুন,
“দ্বাদশ্যাং শুক্লপক্ষস্য মাধবে মাসি মাধবঃ
জাতেদদৃশতুঃ পুত্রং পিতরৌ হৃষ্টমানসৌঃ” -কল্কি পুরাণম্ ২/১৫
অর্থ: বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষীর দ্বাদশীতে তিনি জন্ম গ্রহণ করবেন। তাঁর জন্মে তাঁর মাতা এবং দাদা অতিশয় আনন্দিত হবেন।
লক্ষণীয় হলো, কল্কি অবতারের জন্ম গ্রহণে তাঁর মাতা এবং দাদা আনন্দিত হবেন। এখানে পিতার কথা বলা হয়নি। কারণ, পিতা তখন দুনিয়াতে থাকবেন না। মুহাম্মাদ স. -এর জন্মের সময় তাঁর পিতা দুনিয়াতে ছিলেন না।
প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) ১২ রবিউল আওয়াল জন্ম গ্রহন করেছিলেন। -সীরাতে মুস্তফা স. ১-৬৮
অন্তিম অবতারের বৈশিষ্ট্য: হযরত মুহাম্মাদ (স.) জন্ম গ্রহণের পর মাত্র চারদিন তাঁর মায়ের দুধপান করেন। অতঃপর হযরত হালিমা সাদিয়া রাযি. তাঁকে দুধপান করান। বেদে আছে, এ শিশুটি হবে বড়ই বিচিত্র, সে তাঁর মায়ের দুধ বেশী দিন পান করবেন না। বরং দুধমাতার দুধপান করবে। “চিত্র ইচ্ছেশোস্তরুণম্য বক্ষথো ন যো মাতরাবম্বেনি ধাতবে।” -সামবেদ ৭/৬৩
শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরানের ১২স্কন্ধ, ২ অধ্যায়, ১৯,২০,২১ মন্ত্রে কল্কি অবতার তথা মুহাম্মাদ স.-এর বিশেষ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লে¬খ করা হয়েছে।
*তিনি অশ্বারোহী হবেন।
*বিশ্ব মানব হবেন।
*তরবারি হস্তে পরিচিত দুষ্টদের দমন করবেন।
*তার চেহার মোবারক থেকে আলো বিচ্ছুরিত হবে।
*সকল সৎগুণের অধিকারী হবেন।
*তার দেহ এত কান্তিময় হবে যে, এর বর্ণনা দেয়া সম্ভব নহে। অর্থাৎ তিনি অধিক সুন্দর হবেন।
*খৎনা করা অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করবেন।
*তাঁর শরীর থেকে সুগন্ধি বের হবে।
*তাঁর সংস্পর্শে ধন্য মানুষের মন নির্মল ও পবিত্র হবে।
*দস্যু দমন কাজ সমাপ্ত হলে গ্রামে গঞ্জে নিবাসকারীরা দলে দলে তাঁর ধর্মে দিক্ষিত হবে।
“অশ্বমাশুগমারুহ্য দেবদত্তং জগৎপতিঃ
অসিনাসাধুদমনমষ্টৈশ্বর্যগুণান্বিতঃ
বিচরন্নাশুনা ক্ষোণ্যাং হয়েনাপ্রতিমদ্যুতিঃ
নৃপলিঙ্গচ্ছদো দস্যূন্ কোটি শো নিহনিষ্যতিঃ
অথ তেষাং ভবিষ্যন্তি মনাংসি বিশাদানি বৈ।
বাসুদেবাঙ্গরাগাতিপুণ্যগন্ধানিলস্পৃশাম্
পৌরজানপদানাং বৈ হতেষ¦খিলদস্যুষ্যুঃ।”
উল্লেখ্যত সকল গুণের অধিকারী ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (স.)।
মূর্তিপূজা লোপকারী:
“বেদা ধর্ম্মঃ কৃতযুগং দেবা লোকাশ্চরাচরাঃ
হৃষ্টাঃ পুষ্টাঃ সুসন্তুষ্টাঃ কল্কৌ রাজনি চাভবন্
নানাদেবাদিলিঙ্গেষু ভূষণৈর্ভুষিতেষু চ।
ইন্দ্রজালিকবদ্বৃত্তিকল্পকাঃ পূজকাঃ জনাঃ
ন সন্তি মায়ামোহাঢ্যাঃ পাষন্ডা: সাধুবঞ্চকাঃ।
তিলকাঙ্কিতসর্ব্বাঙ্গাঃ কল্কৌ রাজনি কুত্রচিৎ”
অর্থ: তিনি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হলে বেদ, ধর্ম, সত্যযুগ, দেবগণ, স্থাবর, জঙ্গমাদি বিশ্বের জীব সকল হৃষ্টপুষ্ট ও প্রীত হইলেন। পূর্বযুগে ব্রাহ্মণ পূজারীগণ নানাবিধ অলঙ্কার দ্বারা ভূষিত দেবমূর্ত্তি সকলকে ইন্দ্রজালিকদের ন্যায় ব্যবহার করিয়া সকলকে যে মোহিত করিতেন, তাহা দূর হইবে। কল্কি সিংহাসনে অধিষ্টিত হইলে সর্বাঙ্গে তিলকচিহ্ন (উল্কি অঙ্কিত) মায়ামোহ অলংকৃত, সাধুবেশী প্রবন্ধক (প্রতারক) পাষন্ড দেখা যাইবে না। (কল্কিপুরাণম্, তৃতীয় অংশ, ষোড়শোহধ্যায়, ২-৪ মন্ত্র) কারণ, শ্রীগীতার মধ্যে আছে, গর্দভরাই মূর্তিপূজা করে। “কামৈস্তৈস্তৈহৃতজ্ঞানাঃ প্রপদ্যন্তেহন্যদেবতাঃ
তং তং নিয়মমাস্থায় প্রকৃত্যা নিয়তাঃ স্বয়া” -গীতা ৭/২০
পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র হযরত মুহাম্মদ (দ.)-ই সেই ব্যক্তি, যিনি মক্কা বিজয়ের টর কা’বাগৃহ থেকে অসংখ্য মূর্তি ধ্বংস করেছেন, যার সংখ্যা ৩৬০টি ছিল।
সুমিষ্টভাষী হবেন: “নরাশংসমিহ প্রিয়ই স্মিন্যজ্ঞ উপহ্বয়ে
মধুজিহ্বাৎ হবিষ্কৃকতম্” -ঋগে¦দ ১/১৩/৩
মহানবী কখনো কাউকে ধমক দেননি, নিজের প্রয়োজনে কারো উপর রাগ করেননি। আম্মাজান আয়িশা সিদ্দিকা রাযি. বলেন, রাসূল স্বহস্তে কাউকে কোনো দিন প্রহার করেন নি, তাঁর স্ত্রীকেও না, গোলাম বা খাদেমকেও না। কেবলমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ ব্যতিত। আর তিনি তাঁর ক্ষতিকারী ব্যক্তি থেকে প্রতিশোধও গ্রহণ করেন নি। তবে আল্লাহ তাআলার মর্যাদাহানিকর কিছু ঘটলে তিনি তার প্রতিশোধ নিতেন। -(মুসলিম ৫৮৪৪, আবু দাউদ ৪৭৮৬)
তিনি সুন্দর ও উত্তম কথা বলতেন এবং তাঁর উম্মতদেরকেও সুন্দর ও উত্তম কথা বলার নির্দেশ দিতেন, উৎসাহিত করতেন। -(বুখারী ৭২৮, ইবনে হিব্বান ৪৭২)
উজ্জ্বল মুখাবয়বধারী হবেন: “নরাশংসঃ প্রতি ধামান্যঞ্জন তি স্রো দিবঃ প্রতি মহ্না স্বর্চিঃ।” -ঋগে¦দ ২/৩/২
এখানে স্বর্চি শব্দের সন্ধি-বিচ্ছেদ হচ্ছে- শোভনা অর্চিয়স্য সঃ অর্থাৎ সুন্দর দীপ্তি। সুং শব্দার্থ সুন্দর। স্বর্চি শব্দের তাৎপর্য হচ্ছে, তার মুখমুন্ডল এমন সুন্দর ও কান্তিময় হবে, যেন তা থেকে আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়ছে।
রাসূল সর্বাপেক্ষা সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট ছিলেন। আর তিনি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি নাতিদীর্ঘ আকৃতির লোক ছিলেন। -(বুখারী ৩৩৫৬, মুসলিম ৬২১২)
কৌরম বা দেশত্যাগী:
“ষষ্টিং সহস্র নবতিং চ কৌরম আ রুশমেষু দন্মহে”
অনুবাদ: ওহে কৌরম (দেশত্যাগী) রুশগণের মধ্যে মোরা
ষষ্টি সহস্র নবতি পাইয়াছি আমরা। -অথর্ববেদ ২০/৯/৩১/১
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কৌরম তথা দেশত্যাগ (হিযরত) করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনা গিয়েছিলেন।
উর্ধাকাশে ভ্রমণকারী: “বর্স্মা রথস্য নি জিহীড়তে দিব ঈষমাণা উপস্পৃশঃ”
অর্থ: ঐ রথচূড়া স্বর্গ স্পর্শ না করিয়া
সদাই থাকছে উহা অবনত হইয়া।
বলা হচ্ছে, তিনি রথে চড়ে আকাশ । -অথর্ববেদ ২০/৯/৩১/২
পবিত্র কুরআনুল কারিমের সূরা বনি ইসরাঈল-০১ আয়াতে রাসূল (স.)-র উর্ধাকাশে বা মিরাজে যাওয়ার বর্ণনা রয়ছে।
তাঁর চারজন বিশিষ্ট সহচর থাকবে: হিন্দু ধর্মগ্রন্থে রয়েছে কল্কি অবতারের চারজন বিশিষ্ট সহচর ছিলেন। “চতুর্ভির্ভ্রাতৃভির্দেব! করিষ্যামি কলিক্ষয়ম্” -কল্কিপুরাণম্ ২/৫
হযরত মুহাম্মদ (স.)-র চারজন প্রসিদ্ধ সাহাবী বা সহচর ছিল। হযরত আবু বকর (রা.), হযরত ওমর (রা.), হযরত ওসমান (রা.), হযরত আলী (রা.)।
ধর্মাচার্য অধ্যাপক ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়: ধর্মাচার্য অধ্যাপক ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় লিখেছেন, “যে ইসলাম গ্রহন করে না এবং হযরত মুহাম্মাদ স. ও তাঁর ধর্মমতকে মানে না, সে প্রকৃতপক্ষে হিন্দুও নয়।” কারণ হিন্দু ধর্মগ্রন্থে কল্কি অবতার পৃথিবীতে আগমনের পর তাঁকে ও তাঁর ধর্মমতকে মানতে বলা হয়েছে। সুতরাং যে হিন্দু নিজ ধর্মগ্রন্থের উপর বিশ্বাস রাখে, সে অবশ্যই মুহাম্মাদ স.-কে মানবে। যদি তাকে মানা ব্যতিত মৃত্যু বরণ করে, তাহলে নরকের আগুনে জ্বলবে, স্রষ্টার দর্শন থেকে বঞ্চিত হবে এবং তাঁর ক্রোধের শিকার হবে। অল্লোউপনিষদে ‘আল্লাহ’ ‘রাসূল’ ‘মুহাম্মাদ’ তিনটি আরবী শব্দযোগে যে শ্লোকটি লিখিত আছে, তাতে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, আল্লাহ সর্বশেষ্ঠ এবং মুহাম্মাদ স. তাঁরই রাসূল। শ্লোকটি নিম্নরূপ,
“হোতার মিন্দ্রো হোতার মিন্দ্রো মহাসূরিন্দ্রাঃ
অল্লো জ্যৈষ্ঠং শ্রেষ্ঠং পরমং ব্রহ্মণং অল্লাম
অল্লো রসূল মোহাম্মদ রকং বরস্য অল্লো অল্লাম
আদাল্লাং বুকমেকং অল্লাবুকংল্লান লির্খতকমঃ” -কল্কি অবতার ২৩পৃ.
মুহাম্মাদ স.-কে মানার উপকারিতা: মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের, যাতে তোমাদের উপর রহমত করা হয়।”(কুরআন ৩:১৩২) এর দ্বারা বুঝা যায়, আমাদের মহান স্রষ্টা আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ও ভালোবাসা পেতে হলে মুহাম্মাদ স.-এর অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থে আছে, ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’র আশ্রয় ব্যতিত পাপ মোচনের আর কোনো আশ্রয় নেই। ইল্লাহ (আল্লাহ)-এর আশ্রয়ই প্রকৃত আশ্রয়। বৈকুণ্ঠে জন্ম লাভ করতে হলে মুহাম্মাদ স.-এর অনুসরণ করতে হবে।
“লা ইলাহা হরতি পাপম্ ইল ইলাহা পরম পাদম
জন্ম বৈকুণ্ঠ অপ্ ইনুতি ত জপি নাম মুহাম্মদ” -উত্তরয়ণ বেদ
বেদে বলা হয়েছে, যে অন্তিম অবতারের [মুহাম্মাদ] অনুসরণ করবে, সে স্বর্গে যাবে। -সামবেদ ১৩/৫/১
মহর্ষি কল্কি অবতার সম্পর্কে হিন্দুধর্মীয় অন্যান্য গ্রন্থেও ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। সেসব গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য; মৎস্যপুরাণ, কূর্মপুরাণ, বরাহপুরাণ, নৃসিংহপুরাণ, বমানপুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, দেবী ভাগবত, ভবিষ্যপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, গরদপুরাণ, জৈনমহাভস্ম, বৃহদধর্মপুরাণ, হরিভস্মপুরাণ, বিষ্ণুধর্মত্র, বায়ুপুরাণ, মহাভারত, কল্কিপুরাণ প্রভৃতি।
হিন্দুধর্মাবলম্বিদের প্রতি আমাদের এই খোলা চিঠি পেশ করছি যে, হিন্দু ধর্মগ্রন্থের আলোকেই স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে তাদের আকাঙ্খিত কল্কি অবতার ইসলাম ধর্মের মহানবী আব্দুল্লাহর ছেলে হযরত মুহাম্মাদ (স.)। যার অপেক্ষায় কেবল হিন্দুধর্ম নয়; বরং পৃথিবীর সকল ধর্মপ্রাণ মানুষ অপেক্ষা করছিল, দেড় হাজার বছর পূর্বে তাঁর আবির্ভাব হয়েগেছে। হিন্দু ধর্মের প্রসিদ্ধ পন্ডিতবর্গের দৃষ্টিভঙ্গি হল, “এখন হিন্দুধর্মের অনুসারীদের হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করা উচিত”। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ধর্মই সৃষ্টিকর্তার পক্ষথেকে একমাত্র মনোনিত ধর্ম। সাম্প্রতিককালে আমেরিকা, ইউরোপ, ব্রিটেনসহ পৃথিবীর প্রান্তে-প্রান্তে নানান ধর্মের মানুষ ইসলামধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে। এবং হযরত মুহাম্মদ (স.)-র জীবনাদর্শে জীবনকে সুসজ্জিত করছে। আর তাঁর অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে স্বর্গীয় ও ইহকালীন সুখ-সাচ্ছন্দ্যের ফোয়ারা।
অনু লেখক ঃ মু.জাকারিয়া শাহিন

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
মোঃ ইলিয়াছ ৯ অক্টোবর, ২০২২, ৩:৪৬ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ অনেক কিছু জানলাম
Total Reply(0)
শিমুল ৩ মার্চ, ২০১৯, ৪:১৪ পিএম says : 0
জয়, মুহাম্মদ(সা:) এর জয়। এছাড়া হিন্দু ধর্মে ইমাম মাহাদি(অ:) এর কথাও বলা আছে।............................
Total Reply(0)
Aatkutri Noydirja ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১১:০৫ পিএম says : 0
মন্তব্য: ১) মুসলমানরা জানে যে , পৃথিবীতে মোট চারটি রেসালাত প্রেরিত হয়। তন্মধ্যে তাওরাত ১ম রেসালাত। সাম্প্রতিকালের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে চীন দেশে প্রাচীনকালে ইহুদি বসবাস শুরু হয়,যদিও সঠিক সময় নিরুপন করা সম্ভব হয়নি। তবে এটা ঠিক যে উক্ত বসতি খ্রীষ্টপূর্ব সময়কালে শুরু হয়েছিল। চীনা ইহুদিদের DNA পরীক্ষায় জানা তারা খাজার বঙশের উত্তরসুরী এবং নবীজীর জমানায় মদিনায় বনু কোরাইজা বনু নজর ও বনু খাওয়ারাজ নামক ইহুদি গোত্রের বসতি ছিল। যাদের কিছু সদস্য মুসলমান হন। কিন্তু ৬৫৭ খ্রীষ্টাব্দে সিফফিনের যুদ্ধের আপোষ রফা লঙ্ঘন করে আহলে সুন্নাহ জামায়াত থেকে বের হয়ে খারিজি হয়ে যায়। খাজারিয়ান দের গবেষণায় ইদানিং জানা গিয়েছে খ্রীষ্টপূর্ব সময়েও তাদের বসতি ছিল অর্থাৎ তারা হযরত মূসা (আ:) বনি ইসরাইল গোত্রের উত্তরসুরী। অতএব খুব সহজেই অনুমেয় যে ভারতবর্ষের ভূপ্রকৃতি ও আবহাওয়া মানব বসতির জন্য পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে অনুকূল হওয়ায় প্রাচীন মানব সভ্যতার বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বনি ইসরাইল গোত্রের লোকেরা চীনে আগমনের পাশাপাশি ভারতবর্ষেও এসেছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় ঐ সকল গোত্রীয় পুরোহিতরা/সমাজপতিরা তাদের হীন স্বার্থ রক্ষায় ধর্মকে বিকৃত করে। যা সমগ্র পৃথিবীতে বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বিকৃত হয়েছে। একইভাবে প্রাচীন পারস্যের খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৮ সালে বা তার পূর্বে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তাও মূলত তাওরাত রেসালাতের আওতাধীন। যা কালক্রমে বিকৃত হয়ে অন্য দিকে মোড় নিয়েছিল। ২) হযরত ঈসা আঃ ফিলিস্তিনে জন্মগ্রহণ করেন বিধায় তিনি আরবী ভাষার ছিলেন ও তার অনুসারীরা আরব ছিল। কিন্তু হযরত ওমর রা: এর শাসনামলে যখন মুসলমানদের হাতে জেরুজালেম বিজয় হয় তখন সেখানে কোন খ্রীষ্টান পাওয়া যায়নি, সেখানে সবাই ইহুদি ছিল। তাহলে প্রশ্ন উঠে খ্রীষ্টান জাতি কোথায় নির্বাসিত হয়েছিল এবং কেন ও কিভাবে ইউরোপ মহাদেশ খ্রীষ্টান জাতির দখলে গিয়েছে? জবাবে বলতে হয় আল্লাহ তায়ালা যখন হযরত ঈসা আঃ কে আসমানে উঠিয়ে নেন, তখন নবীর হাওয়ারি অর্থাৎ ঘনিষ্ঠ অনুসারীরা এত অধিক মাত্রায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে যে, তাদের সামনে কি ঘটছে তা অনুধাবন করার বুদ্ধিও হারিয়ে ফেলে। এই দুর্বলতার সুযোগ নেই 'পল' Paul নামক জনৈক ইহুদি, যে কিনা নবীর অনুসারীদের মধ্যে আত্মগোপন করে ছিল এবং নবীর চেহারার অনুরূপ এক রোমান সৈনিকের জারজ সন্তানকে যিশু পরিচয়ে ক্রুশবিদ্ধ করলেও নবী প্রকৃত অনুসারীরা সেই প্রতারণা ধরতে ব্যর্থ হয়। (কেউ এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ করলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। ইদানিং এতদসংক্রান্ত গবেষণায় প্রাপ্ত ইংরেজি তথ্য আমার কাছে অনেক আছে অথবা wordpress media সাবস্ক্রাইব করুন ও সার্চ করুন অনেক পাবেন, যা পড়তে পড়তে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলবেন। ভুলে যাবেন না বর্ণিত wordpress মিডিয়া কোন মুসলিম নিয়ন্ত্রিত নয় বরং তা পশ্চিমা খ্রীষ্টান নিয়ন্ত্রিত)। অবশেষে খ্রিষ্টীয় ১ম শতাব্দীর মধ্যেই খ্রীষ্টান ধর্ম রোমান ও গ্রীক ইহুদিদের আয়ত্তে চলে যায়। এর প্রধান কারণ বর্ণনা করায় আমার মূল লক্ষ্য। মুসলিম উলামা মাশায়েখ জানেন যে, হযরত ঈসা আঃ এর অনুসারীরা এক প্রতিজ্ঞা করে বসে যে তারা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লোকালয় ত্যাগ করে নির্জন পাহড় পর্বতের গুহা বা জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে একাকী তপস্যা করবেন এবং তা তারা করেন। তাদের কে কোথায় হারিয়ে যান তার কোন ইতিহাস হদিস খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ভৌগলিক পরিক্রমায় প্রতীয়মান হয় যে ফিলিস্তিন বা আরব মরুর বুকে একাকী নির্জন বসবাসে টিকে থাকার মত উপযোগী যায়গা নেই। যারা সেখানে গিয়েছেন তারা জানেন যে বৈরী আবহাওয়া কত ভয়াবহ। মানুষ বসবাসের জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন পানি ছায়া ও মাটি। সেখানে এই তিনটির বড়ই অভাব। মাটি না থাকলে গাছ নেই ছায়া নেই ফলে প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদিত খাবার প্রাপ্তি অসম্ভব। ছায়া ব্যতীত টিকে থাকা অসম্ভব। হ্যাঁ হয়তোবা পাহাড়ের গুহায় ছায়া মিলতে পারে কিন্তু পানি ও খাবারের কি উপায়? এজন্য অনুমান করা কঠিন নয় যে ঐ লোকগুলো কোথায় গিয়েছিলেন। হাঁ তারা পূর্ব দিকে ও পশ্চিম দিকে অর্থাৎ এশিয়া ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েন। ফলে ইউরোপ এখন খ্রীষ্টান জাতির রাজত্ এবং উক্ত Christianity বিশুদ্ধ নয়, যেহেতু তা প্রথমেই ইহুদিদের হস্তগত হয়। তেমনি ভাবে এশিয়ায় আগতদের অনেকে ভারতবর্ষেও আসেন। কিন্তু আগেই বলেছি ইহুদিরা পূর্বেই ভারতবর্ষে এসেছে, তাই এশিয়ার খ্রীষ্টান ধর্মের একই অবস্থা এবং হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম মূলতঃ ইহুদি খ্রিস্টান ধর্মের যৌথ ফলাফল। তার ফলশ্রুতিতে বেদপুরানে আল্লাহ ও হযরত মুহাম্মদ এর নাম পাওয়া যায় যদিও হিন্দু পুরোহিতের হাতে তা ভিন্ন ভাষায় কৌশলগত আঙ্গিকে দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ হিন্দু ধর্মের প্রাচীন বয়সের যে দাবী তা নিছক কাল্পনিক। এখন প্রশ্ন হল ডা: জাকির নায়েক অনেক বড় বড় কথা বলেন কিন্তু এই মূল্যায়ন কেন করেননি? তার কারণ আমি অন্য একটা পোষ্টে আহলে হাদীস গোষ্ঠীর আলোচনায় কিছূটা উল্লেখ করেছি বাকীটা বুঝে নেয়ার চেষ্টা করুন।
Total Reply(1)
Mojammel ২২ আগস্ট, ২০২০, ৩:৫১ পিএম says : 2
hahahahaha....... ৪ টা কে বলসে ভাই...? ক্লাস ৪-৫ এর বই পরলেও ১০৪ টার কথা জানতে পারতেন
তানিম ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৫৯ পিএম says : 0
অথর্ববেদ ২০/৯/৩১/২ এই সংখ্যা গুলো দ্বারা কি বুঝিয়েছেন খন্ড? নাকি অধ্যায়? নাকি শ্লোক নাম্বার একটু বুঝিয়ে দিলে ভালো হয়।
Total Reply(0)
মো এ,সালাম কমরুদ্দিন ১ মার্চ, ২০২১, ৯:২৬ এএম says : 0
সুবহানাল্লাহ। এই লেখা প্রতি দিন প্রথম পৃস্ঠায় ছাপানো জরুরী ।
Total Reply(0)
Laden ২৭ মার্চ, ২০২১, ২:৩৯ এএম says : 0
আমার এক হিন্দু প্রিয় বন্ধুর জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল। আমি ওকে ইসলামের পথে আনার চেষ্টা করব। সবাই দোয়া করবেন।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ নাহিয়ান করিম চৌধুরী ২৭ মার্চ, ২০২১, ৪:০৪ পিএম says : 0
Josss!
Total Reply(0)
মোহাম্মদ নাহিয়ান করিম চৌধুরী ২৭ মার্চ, ২০২১, ৪:০৪ পিএম says : 0
Josss!
Total Reply(0)
উম্মেহানী ১৭ জুলাই, ২০২১, ৫:০০ পিএম says : 0
পড়লাম।???? আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন।???? আমিন।????????
Total Reply(0)
Md Sabbir ১৭ আগস্ট, ২০২১, ৭:৩২ পিএম says : 0
Right
Total Reply(0)
Zaman Misu ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১০:২৬ পিএম says : 0
অনেক কিছু জানতে পারলাম , ধন্যবাদ
Total Reply(0)
Jesmin Jahan ২১ মার্চ, ২০২২, ১:২৮ এএম says : 0
কিন্তু হিন্দুরা বেদ নিয়ে মাথা ঘামায়না। তারা কেবল গীতার স্লোক মুখস্ত করে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন