বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সুন্নতি লেবাস-২

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৮ এএম, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

আরবিতে একটি প্রবাদ আছে- ‘আন নাছু বিল লেবাস’ অর্থাৎ মানুষের সৌন্দর্য প্রকাশ পায় পোশাক দ্বারা। আর এই সৌন্দর্যের সূচনা হয় প্রথম মানব হযরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর মাধ্যমে।
এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘হে বনী আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদের পরিচ্ছদ দিয়েছি এবং তাকওয়ার পরিচ্ছদ, এটাই সর্বোৎকৃষ্ট।
এটা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সূরা আরাফ, আয়াত : ২৬)। এ আয়াতের পূর্ববর্তী ২১ ও ২২ নম্বর আয়াত দ্বয়ে হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.)কে জান্নাত থেকে বের করার জন্য শয়তানের কুমন্ত্রণার কথা বলা হয়েছে এবং জান্নাতের বৃক্ষের পাতা দ্বারা তাদের লজ্জাস্থান ঢাকার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং মানুষের পোশাক পরিধানের এখানেই সূচনা। পরবর্তীকালে যুগে যুগে পোশাকের নানা শ্রেণীর উদ্ভব ও পরিধানের রীতিনীতি প্রবর্তিত হয়েছে। ইসলাম পূর্ব জাহেলি যুগে কাফেরদের অসংখ্য কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসের মধ্যে একটি ছিল এই যে, তারা হজ ও ওমরার সময় উলঙ্গ হয়ে কাবার তওয়াফ করত। বিধি মোতাবেক পোশাক পরিধান করে ইবাদত করতে আয়াত নাযিল হয়। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা সূরা আরাফে বলেন, ‘হে বনী আদম! প্রত্যেক সালাতের (নামাজ) সময় তোমরা সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান করবে, আহার করবে ও পান করবে, কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (আয়াত : ৫১)।
খোদা প্রদত্ত পোশাক মানুষের শরীর ঢাকার ও সৌন্দর্যের মাধ্যম, তার ইবাদতের সময় অন্যান্য সময় অপেক্ষা অধিক ব্যবহারযোগ্য অর্থাৎ বিশেষভাবে নামাজের জন্য মসজিদে গমনের সময় উত্তম পোশাক পরিধান করা উচিত, যাতে অমুসলিমরা দেখে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আয়াতে যেসব বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে, সবই আল্লাহর প্রদত্ত নেয়ামত, এবং প্রত্যেকটি সৌন্দর্যের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও সুস্থতার স্বার্থে জরুরি। তাই কারো কারো মতে : ‘জামাআল্লাহুত তিব্বা কুল্লাহু ফি নিসফি আয়াতি হি’ অর্থাৎ আল্লাহ সমগ্র ‘তিব্ব’ বা চিকিৎসা বিজ্ঞানকে অর্ধেক আয়াতে একত্রিত করে দিয়েছেন।
উপরে বর্ণিত ২৬ আয়াতে ‘লেবাসুত-তাকওয়া’ অর্থাৎ পরহেজগারির পোশাকের কথা বলা হয়েছে, এই তাকওয়ার লেবাস কী তারও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আছে। তফসিরি ব্যখ্যা অনুযায়ী, ‘তাকওয়ার লেবাস’ যা সৌন্দর্যের মাধ্যম। অর্থাৎ পুরুষ রেশমি পোশাক পরবে না এবং কাপড়ের আঁচল দীর্ঘ করবে না এবং যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা করবে না, এবং নারী খুব পাতলা কাপড় পরবে না। যাতে লোকদের দৃষ্টি পড়ে এবং তার সৌন্দর্য প্রদর্শন করবে না, যার উল্লেখ আগে করা হয়েছে।
প্রত্যেক হাদীস গ্রন্থে ‘কিতাবুল লেবাস’ অর্থাৎ পোশাক অধ্যায় রয়েছে। যাতে রাসূল (সা.)-এর বহু প্রকারের হাদীস সন্নিবেশিত রয়েছে। ফেকাহর গ্রন্থাবলিতেও পোশাকের নানা বিবরণ ও পরিধানের বিধিসমূহ বর্ণিত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের ওলামায়ে কেরাম সে অনুযায়ী সুন্নতি লেবাস পরিধান করে থাকেন। আল্লামা ইকবাল তার এক কবিতায় এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন- কী অন্যায় কথা! মুসলমানগণ তো খ্রিষ্টানদের শক্রতার কথা বলে থাকেন অথচ তারাই খ্রিষ্টান রীতিনীতি, পোশাক-আশাক এবং তাদের জীবন পদ্ধতি, তাদের দাড়ি কামানো (শেইভ) এবং তাদের ভাষা শিখে থাকেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Ameen Munshi ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪২ এএম says : 0
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দাড়ি লম্বা করতেন, লম্বা জুব্বা পরিধান করতেন, মাথায় টুপি ব্যবহার, টুপির ওপর পাগড়ি বাঁধতেন, চুল কাঁধ পর্যন্ত লম্বা রাখতেন, তিনি অতিথি পরায়ণ ছিলেন ও সব ধরনের লৌকিকতা মুক্ত থাকতেন। এগুলো উম্মত হিসেবে আমাদের জন্য সুন্নত আমল।
Total Reply(0)
Ameen Munshi ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪২ এএম says : 0
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দাড়ি লম্বা করতেন, লম্বা জুব্বা পরিধান করতেন, মাথায় টুপি ব্যবহার, টুপির ওপর পাগড়ি বাঁধতেন, চুল কাঁধ পর্যন্ত লম্বা রাখতেন, তিনি অতিথি পরায়ণ ছিলেন ও সব ধরনের লৌকিকতা মুক্ত থাকতেন। এগুলো উম্মত হিসেবে আমাদের জন্য সুন্নত আমল।
Total Reply(0)
Mohammad Mosharraf ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৩ এএম says : 0
মহানবী (সা.) আরব অঞ্চলের আঞ্চলিক সব প্রথাকে গ্রহণ করেননি। বরং যেগুলোতে আপত্তি ছিল তিনি সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মূর্তি ও মদ আরবের শুধু ঐতিহ্যই ছিলো না বরং এ দু’টি ছাড়া আরবদের ভাবাই যেত না। পিতার মৃত্যুর পর বিমাতাকে আরবরা নিজেদের জন্য বৈধ মনে করত। এমন অনেক রীতি ও প্রথা যা আরবে প্রচলিত ছিল- সেগুলোকে রাসূল গ্রহণ করেননি বরং নিষিদ্ধ করেছেন।
Total Reply(0)
তমিজ শেখ বারি ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৪ এএম says : 0
ইসলামের বিধানের মানদণ্ডে নির্দিষ্ট কিছু নীতি ঠিক রেখে যে কোনো পোশাক পরার অনুমতি বা বৈধতা ইসলামে রয়েছে। সেটা হলো- বৈধতার বিষয়। ইচ্ছা করলে শর্ত ঠিক রেখে একজন মুসলমান তার অঞ্চলের আঞ্চলিক পোশাক অবশ্যই পরিধান করতে পারবেন। এতে কোনো গোনাহ হবে না। কিন্তু নবী করিম (সা.) যে ধরণের পোশাক পরেছেন, যে বেশ গ্রহণ করেছেন সার্বিক বিবেচনায় তা অবশ্যই সুন্নতি পোশাক এবং তা পরিধান করা অন্য যে কোনো বৈধ পোশাক পরিধানের চেয়ে অবশ্যই উত্তম।
Total Reply(0)
শাখাওয়াত প্রিন্স ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৪ এএম says : 0
কেউ যদি চায় তার পোশাক সর্বোত্তম হোক তাহলে তার জন্য করণীয় হলো- হাদিসের গ্রন্থাবলীতে পোশাক অধ্যায়ে নবী করিম (সা.)-এর পোশাকের যে বিবরণ দেওয়া আছে, সেগুলোকে সওয়াবের নিয়তে অনুসরণ করা। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
শাখাওয়াত প্রিন্স ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৪ এএম says : 0
কেউ যদি চায় তার পোশাক সর্বোত্তম হোক তাহলে তার জন্য করণীয় হলো- হাদিসের গ্রন্থাবলীতে পোশাক অধ্যায়ে নবী করিম (সা.)-এর পোশাকের যে বিবরণ দেওয়া আছে, সেগুলোকে সওয়াবের নিয়তে অনুসরণ করা। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
Faruque Mahmoud ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৬ এএম says : 0
পোশাক-পরিচ্ছদ মানুষের দেহ সজ্জিত করা এবং সতর আবৃত করার মাধ্যম। ইসলামে পেশাকের গুরুত্ব অপরিসীম। এর দ্বারা লজ্জা নিবারণের পাশাপাশি এটা ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। পোশাকের মাধ্যমে ব্যক্তির প্রকৃতি অনুভব করা যায়।
Total Reply(0)
Hasnine Shishir ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৬ এএম says : 0
‘হে আদাম সন্তান! আমরা তোমাদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার জন্য এবং শোভা বর্ধনের জন্য। আর তাক্বওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম। ওটা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে একটি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে’ (আ‘রাফ ৭/২৬)।
Total Reply(0)
গাজী ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৭ এএম says : 0
পুরুষের ফরয সতর আবৃত হ’লে বাকী দেহের জন্য পাতলা কাপড়ের পোশাক পরিধান আপত্তিকর নয়। তবে আঁটসাঁট ও সতর প্রকাশকারী পোশাক সর্বাবস্থায় বর্জনীয়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন