আরবিতে একটি প্রবাদ আছে- ‘আন নাছু বিল লেবাস’ অর্থাৎ মানুষের সৌন্দর্য প্রকাশ পায় পোশাক দ্বারা। আর এই সৌন্দর্যের সূচনা হয় প্রথম মানব হযরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর মাধ্যমে।
এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘হে বনী আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদের পরিচ্ছদ দিয়েছি এবং তাকওয়ার পরিচ্ছদ, এটাই সর্বোৎকৃষ্ট।
এটা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সূরা আরাফ, আয়াত : ২৬)। এ আয়াতের পূর্ববর্তী ২১ ও ২২ নম্বর আয়াত দ্বয়ে হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.)কে জান্নাত থেকে বের করার জন্য শয়তানের কুমন্ত্রণার কথা বলা হয়েছে এবং জান্নাতের বৃক্ষের পাতা দ্বারা তাদের লজ্জাস্থান ঢাকার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং মানুষের পোশাক পরিধানের এখানেই সূচনা। পরবর্তীকালে যুগে যুগে পোশাকের নানা শ্রেণীর উদ্ভব ও পরিধানের রীতিনীতি প্রবর্তিত হয়েছে। ইসলাম পূর্ব জাহেলি যুগে কাফেরদের অসংখ্য কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসের মধ্যে একটি ছিল এই যে, তারা হজ ও ওমরার সময় উলঙ্গ হয়ে কাবার তওয়াফ করত। বিধি মোতাবেক পোশাক পরিধান করে ইবাদত করতে আয়াত নাযিল হয়। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা সূরা আরাফে বলেন, ‘হে বনী আদম! প্রত্যেক সালাতের (নামাজ) সময় তোমরা সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান করবে, আহার করবে ও পান করবে, কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (আয়াত : ৫১)।
খোদা প্রদত্ত পোশাক মানুষের শরীর ঢাকার ও সৌন্দর্যের মাধ্যম, তার ইবাদতের সময় অন্যান্য সময় অপেক্ষা অধিক ব্যবহারযোগ্য অর্থাৎ বিশেষভাবে নামাজের জন্য মসজিদে গমনের সময় উত্তম পোশাক পরিধান করা উচিত, যাতে অমুসলিমরা দেখে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আয়াতে যেসব বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে, সবই আল্লাহর প্রদত্ত নেয়ামত, এবং প্রত্যেকটি সৌন্দর্যের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও সুস্থতার স্বার্থে জরুরি। তাই কারো কারো মতে : ‘জামাআল্লাহুত তিব্বা কুল্লাহু ফি নিসফি আয়াতি হি’ অর্থাৎ আল্লাহ সমগ্র ‘তিব্ব’ বা চিকিৎসা বিজ্ঞানকে অর্ধেক আয়াতে একত্রিত করে দিয়েছেন।
উপরে বর্ণিত ২৬ আয়াতে ‘লেবাসুত-তাকওয়া’ অর্থাৎ পরহেজগারির পোশাকের কথা বলা হয়েছে, এই তাকওয়ার লেবাস কী তারও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আছে। তফসিরি ব্যখ্যা অনুযায়ী, ‘তাকওয়ার লেবাস’ যা সৌন্দর্যের মাধ্যম। অর্থাৎ পুরুষ রেশমি পোশাক পরবে না এবং কাপড়ের আঁচল দীর্ঘ করবে না এবং যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা করবে না, এবং নারী খুব পাতলা কাপড় পরবে না। যাতে লোকদের দৃষ্টি পড়ে এবং তার সৌন্দর্য প্রদর্শন করবে না, যার উল্লেখ আগে করা হয়েছে।
প্রত্যেক হাদীস গ্রন্থে ‘কিতাবুল লেবাস’ অর্থাৎ পোশাক অধ্যায় রয়েছে। যাতে রাসূল (সা.)-এর বহু প্রকারের হাদীস সন্নিবেশিত রয়েছে। ফেকাহর গ্রন্থাবলিতেও পোশাকের নানা বিবরণ ও পরিধানের বিধিসমূহ বর্ণিত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের ওলামায়ে কেরাম সে অনুযায়ী সুন্নতি লেবাস পরিধান করে থাকেন। আল্লামা ইকবাল তার এক কবিতায় এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন- কী অন্যায় কথা! মুসলমানগণ তো খ্রিষ্টানদের শক্রতার কথা বলে থাকেন অথচ তারাই খ্রিষ্টান রীতিনীতি, পোশাক-আশাক এবং তাদের জীবন পদ্ধতি, তাদের দাড়ি কামানো (শেইভ) এবং তাদের ভাষা শিখে থাকেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন