ঋতু পরিবর্তণের দেশ বাংলাদেশ । এইত শুরু হল শীতকাল এবং আগামী কয়েক মাস থাকবে। প্রতি বছর ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরে নানা প্রকার সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় বিভিন্ন রকমের শীতকালীন টাটকা শাক-সবজি, ফল-মূল পাওয়া যায়। টাটকা শাক-সবজি, ফল-মূল খাওয়ার জন্য শীতকালে সাধারণতঃ রোগ ব্যধি কম হয়। কিন্তু তারপরও আবহাওয়ার বিপর্যয়, পরিবেশ দূষণের কারণে শীতকালেও অনেক রোগ ব্যধি দেখা দেয়। অনেক সময় শীতকালে নাক, কান, গলায় বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে। যেমনঃ সর্দি, কাশি, অ্যালার্জি, টনসিলে প্রদাহ, গলা ব্যাথা ইত্যাদি। ইহা ছাড়া অ্যাজমা, শিশুদের নিউমোনিয়া এবং বিভিন্ন্ রকম চর্ম রোগ দেখা দিতে পারে।
সর্দিঃ শীতকালে অতিরিক্ত ঠান্ডার ফলে সর্দির সৃষ্টি হয়। অনেক সময় সর্দি লাগলে কানে ব্যথা করে এবং নাক দিয়ে রক্তও পড়তে পারে। যার ফলে অনেক সমস্যা যেমন সাইনুসাইটিস হতে পারে।
কাশিঃ শীতকালে ঠান্ডায় কাশির প্রকোপ বেড়ে যায়। ফলে বুকে ও গলায় ব্যথা দেখা দেয়। অতিরিক্ত কাশির ফলে ঘুমের ব্যঘাত ঘটে। অনেক সময় কাশির সাথে কফ বা রক্তও বের হতে পারে।
এলার্জিঃ এলার্জি প্রতিটি মানুষের দেহে কম-বেশি বিদ্যমান। অতিরিক্ত ঠান্ডার ফলে মানুষের নাক কান ও গলায় এলার্জি প্রকোপ দেখা দেয়। ফলে হাঁচি, কাশি বেশি হয়। এলার্জির জন্য চোখে কনজাঙ্কটিভাইটিসও হতে পারে ।
টনসিলঃ শীতে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার কারণে গলার ভিতেরের টনসিলে ইনফেকশন হতে পারে। টনসিলে ইনফেকশনের কারণে গলায় ব্যথা, জ্বর হতে পারে। টনসিলাইটিসের জন্য শিশুদের পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটে এবং বড়দের অফিস ও দৈনন্দিন কাজে বিগ্ন সৃষ্টি হয়।
গলা ব্যাথাঃ শীতকালে অতিরিক্তি ঠান্ডার ফলে বিভিন্ন কারণে গলায় ব্যথা হয়ে থাকে। যেমন- হঠাৎ করে ঠান্ডা পানি পান করলে, শীতে গরম কাপড় না পড়লে, গলায় ব্যথা হতে পারে। এছাড়া টনসিলের কারণে গলায় ব্যথা হতে পারে।
অ্যাজমাঃ শীতকালে অ্যাজমা দেখা দিতে পারে। অ্যাজমা বা হাঁপানী রোগীদের খুবই সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। নিয়মিত অ্যাজমার ঔষধ বা ইনহেলার গ্রহণ করা প্রয়োজন। এবং সময়মত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। অনেক সময় শীতকালে ভোর রাত্রে অ্যাজমা এ্যটাক বেড়ে যায়। তখন রোগীকে নেবুলাইজেশন করে অনতিবিলম্বে রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া উচিত।
বয়স্ক লোকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এসময় বেশি সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের দেশে উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশী। শীতের প্রকোপে প্রতি বছরই কিছু বয়স্ক লোক মৃত্যুবরণ করে। তাই শীতের সময় বয়স্ক লোকদের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
শিশুদের নিউমোনিয়াঃ শীতে সবচেয়ে বড় সমস্যা শিশুদের নিউমোনিয়া। যারা শীতকালে জন্মগ্রহণ করে তাদের ক্ষেত্রে বেশি ভয় হলো নিউমোনিয়া। শিশু বয়সে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ রোগ হলো নিউমোনিয়া। শীতে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার ফলে শিশুদের নিউমোনিয়া হতে পারে। তাই শিশুদের অতি যত্নে রাখতে হবে।
শীতের মধ্যে ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রীম খাওয়া এবং গরম কাপড় না পড়ার কারণে নাক, কান, গলার সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। বিশেষ করে শিশুদের ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে শিশুদের নিউমোনিয়াও হয়ে যেতে পারে। যার ফলে এসময় শিশু ও বয়স্কদের বেশি রোগ ব্যধি লেগেই থাকে। তারপরও এসময় মাম্স, ভাইরাসজনিত জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
প্রতিকারঃ
শীতকালে সাবধানে থাকতে হবে। যাতে সর্দি, কাশি ও ভাইরাসজনিত জ্বর না হয়।
ঠান্ডা জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। যেমনঃ ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রীম ইত্যাদি।
বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বেশি নজর দিতে হবে।
প্রয়োজনীয় গরম কাপড় পরিধান করতে হবে।
এরপরও শীতকালে সর্দি, কাশি হওয়ার পরও গুরুত্ব দেয়া হয় না বা অবহেলা করা হয়। তাই যখন নাক, কান, গলায় সমস্যা দেখা দিবে তখনই একজন নিকটস্থ ইএনটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অন্যথায় অনেক সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে।
শীতকালে সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। পরিশেষে বলা ভালো, চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
অধ্যাপক ডাঃ এম আলমগীর চৌধুরী
নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন
বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি বিভাগ
আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,
রোড ৮, ধানমন্ডি, ঢাকা, ০১৯১৯ ২২২ ১৮২
ই-মেইলঃ alamgir.chowdhury07@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন