বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন রূপালী ব্যাংকের ম্যানেজার

প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা : নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে রূপালী ব্যাংকে গ্রাহকদের একাউন্ট থেকে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকার সঠিক পরিমাণ জানা না গেলেও প্রায় ১০ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় শত শত গ্রাহক ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। অভিযুক্ত ব্যাংক ম্যানেজার বেলায়েত হোসেন পলাতক রয়েছে। এ ব্যপারে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গতকাল সরজমিনে রূপালী ব্যাংক সোনাইমুড়ীর আমিশাপাড়া শাখায় গিয়ে দেখা যায় শত শত গ্রাহক তাদের একাউন্টের খোঁজ খবর  নিচ্ছেন।  কয়েক জন ভুক্তভোগী কান্না জড়িত কন্ঠে জানান তারা বিদেশে কষ্টে অর্জিত টাকা বেসরকারি ব্যাংকে জমা না রেখে সরকারি ব্যাংকে রাখে। কিন্তু ব্যাংক ম্যানেজার ও কর্মকর্তার যোগসাজসে তাদের টাকা আত্মসাৎ করা হয়। গ্রাহকরা আরো জানান ম্যানেজার বেলায়েতের কাছে তাদের একাউন্টের হিসেব চাইলে তিনি ভুয়া হিসেব বিবরণী দিয়ে আসছিল। সম্প্রতি বিষয়টি জানা জানি হলে ম্যানেজার বেলায়েত পালিয়ে যায়। ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর রূপালী ব্যাংক আমিশাপাড়া শাখায় ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন বেলায়েত হোসেন।  তার পর থেকে  প্রবাসীদের সই জাল করে তিনি তাদের  নামে চেক ইস্যু করে। পরে চেকের মধ্যে বিভিন্ন অংকের টাকা লিখে  সই জাল করে টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায়।
জানা গেছে  ওই শাখায় ৫ হাজার ৬ শ’ ৩৪ জন সেভিং একাউন্ড হোল্ডারের ডিপোজিট রয়েছে ২৪ কোটি টাকা। এদিকে সাংবাদিকদের উপস্থিতি জানতে পেরে ব্যাংকের সামনে জড়ো হয় শতাধিক ভুক্তভোগী গ্রাহক ও তাদের স্বজনরা। সৌদী  প্রবাসী গ্রাহক মোঃ সেলিম  (সেভিং একাউন্ট নম্বর ৬৪৬২) তার একাউন্টে জমা ছিল ৪৪ লক্ষ ১ হাজার টাকা বর্তমানে রয়েছে ৫৫ হাজার টাকা । স্থানীয় পালপাড়া গ্রামের নুরুল হকের  ছেলে  সৌদী প্রবাসী কামাল উদ্দিন  (একাউন্ট নম্বর ৪১৫৩) এর একাউন্টে  ছিল ১৮ লক্ষ টাকা বর্তমানে রয়েছে ৭৪ হাজার টাকা, বারাইনগর গ্রামের  আমেরিকান প্রবাসী আব্দুল বারিকের ছেলের (একাউন্ট নং ৩৫০২) সেভিং একাউন্টে  ছিল  ১৯ লাখ টাকা বর্তমানে রয়েছে ২ হাজার ৭শ’ টাকা আমেরিকা প্রবাসী মফিজ উল্যার (সেভিং একাউন্ট নং ৬৫০২) তার একাউন্টে ছিল ৮ লক্ষ টাকা বর্তমানে রয়েছে ২ লক্ষ টাকা সৌদী প্রবাসী তাজু মিয়া (সেভিং একাউন্ট নং ৬৬২১)  এতে ছিল ৮ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা বর্তমানে রয়েছে ৩১ হাজার টাকা,  সৌদী প্রবাসী রফিক উল্যা (সেভিং একাউন্ড নং ৭২৮৩) এতে ছিল ৭ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা বর্তমানে রয়েছে ১ হাজার ১ শত টাকা,  কুয়েত প্রবাসী ওসমান গনি (সেভিং একাউন্ট নং ৮৫৭৫)  এতে ছিল ১৯ লক্ষ টাকা বর্তমানে রয়েছে ৫শ’ টাকা।  দুবাই প্রবাসী আবু সাঈয়েদ (সেভিং একাউন্ট ৩৩৮৩) এতে ছিল  ৮ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা বর্তমানে রয়েছে ৭ হাজার ৫শ টাকা,  ওমান প্রবাসী হারুনুর  রশিদ (সেভিং একাউন্ড নং ৮৮৫৪) ছিলো ৮ লক্ষ টাকা বর্তমানে  রয়েছে ২ লক্ষ টাকা,  সৌদী প্রবাসী মনির হোসেনের (একাউন্ট নং ৯১১২) ছিল ৩ লক্ষ টাকা বর্তমানে রয়েছে ১ লক্ষ টাকা, সৌদী প্রবাসী সাহাব উদ্দিন (সেভিং একাউন্ট নং ৩৫৪২)  ছিল ৭ লক্ষ টাকা বর্তমানে রয়েছে ৬৯ হাজার টাকা, সৌদী প্রবাসী হেলাল উদ্দিনের (একাউন্ট নং ৬২৫৭) ছিল ৯ লক্ষ টাকা বর্তমানে রয়েছে ৬শ’ টাকা। উপস্থিত গ্রাহক ও তাদের স্বজন থেকে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে।  তার মধ্যে কত টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়ে গেছে তা সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না।
তবে এলাকাবাসীর ধারণা ১০ কোটি টাকা হতে পারে। রূপালী ব্যাংক আমিশাপাড়া শাখার বর্তমান ম্যানেজার মোশারফ হোসেন জানান তিনি যোগদানের পর কয়েক জন গ্রাহক তাদের একাউন্টের টাকার হিসেবে গড়মিলে অভিযোগ করেন। আমি বিষয়টি ব্যাংকের  ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। রূপালী ব্যাংকের নোয়াখালীর ডিজিএম অহিদুর রহমান জানান ব্যাংকের হেড অফিস  এ ব্যপারে একজন এজিএম এর  নেতৃত্বে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি  কমিটি গঠন করেছে। ইতিমধ্যে তদন্ত টিম কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজার বেলায়েত হোসেন কোথায় আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন তাকে নোয়াখালী জোনাল অফিসে বদলী করা হয়েছে। কিন্তু তিনি সেখানে যোগদান করেননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন