বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশি পোশাক খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে

বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘ সংস্থার মূল্যায়ন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (এসকপ) বলেছে, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের আরও কাজের আদেশ ও সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে।
সংস্থাটি আশা করছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পোশাক শিল্পের রফতানি আদেশ সবচেয়ে বেশি আসবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এবং বড় রফতানি আদেশের মাধ্যমে পোশাক শিল্পে শক্তিশালী অবস্থায় আসবে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। গত বুধবার ব্যাংককের জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (এসকপ) অফিসে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংস্থা (আপটির)। এ রিপোর্ট উন্মোচন করে আপটির বলেছে, উন্নয়নশীল এসব দেশে সস্তা শ্রমের কারণে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে। আপটির পরিসংখ্যানে, বাংলাদেশে এ খাতে ২০১৭ সালে প্রত্যক্ষ বা সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ এসেছিল ৪২২ মিলিয়ন ডলার, যা এর এক বছর আগের চেয়ে ১ শতাংশ বেশি। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের পোশাক খাতের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ থাকা স্বত্তেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে একই সঙ্গে সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘতর হলে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
বাণিজ্য সংকট থাকলেও ২০১৮ সালে রফতানি ২ দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে, যা ২০১৮ সালে রফতানির পরিমাণে প্রায় ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে ৪ শতাংশ ছাড়ের পরও এ অঞ্চলে এফডিআই প্রবৃদ্ধি আগামী বছরগুলোতে নিম্নগতিতে চলতে থাকবে বলে ধারনা করছে সংস্থাটি। সংস্থাটি বলেছে, বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী জিডিপি ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আঞ্চলিক জিডিপি ৪০ বিলিয়ন ডলারে কমে যাবে বলে। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ প্রধান রফতানি শিল্পগুলি তুলনামূলকভাবে শ্রম-নিবিড়, সেই কারণে রফতানি সংকোচনে অনেক শ্রমিক সাময়িক কষ্টে ভূগতে পারে।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চাকরীতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন মানুষ। এদেও মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বে অশিক্ষিত শ্রমিক এবং নারী।
সংস্থাটি বলেছে, বাণিজ্যযুদ্ধ ২০১৯ সালেও অব্যহত থাকলে ভোক্তার আস্থা কমে যাবে এবং এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী জিডিপি প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলারে কমে যাবে এবং আঞ্চলিক জিডিপি ১১৭ বিলিয়ন ডলারে নামবে। সংস্থাটি যে আশঙ্কার কথা বলছে তা হল, এ অঞ্চলে প্রায় ৯ লাখ মানুষকে চাকরিচ্যুত করা হতে পারে।
সংস্থার পরিচালক মিয়া মিকিক বলেন, উৎপাদন পরিবর্তনের ফলে এবং বাণিজ্য বিরোধের কারণে সেক্টর ও সীমান্ত জুড়ে সম্পদগুলি পুনরায় বরাদ্দ করা হয়। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক তাদের বর্তমান কর্মস্থল ছেড়ে নতুন চাকরি খোঁজার জন্য বাধ্য হতে পারে।
আঞ্চলিক ইন্টিগ্রেশন নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ হবে। তিনি বলেন, তবে শ্রম, শিক্ষা ও পুনরাবৃত্তি নীতির পাশাপাশি অন্যান্য পরিপূরক নীতিগুলি পাশাপাশি নেতিবাচকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে সমর্থন করার জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাও নীতিমালা বিষয়ক এজেন্ডাগুলিতে উচ্চতর করা উচিত।
অন্যদিকে সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ইকোনমিস্টের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগ ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) এক রিপোর্টে এ পূর্বাভাস দিয়েছে যে, বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত ও ভিয়েতনামের পোশাক শিল্পও এ যুদ্ধ থেকে বেশ উপকৃত হবে। আর শ্রীলংকা ও পাকিস্তান কিছুটা সুবিধা পাবে। অন্যদিকে মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ার পোশাক খাত ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। ‘যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধে এশিয়ার সুবিধাভোগীরা’ শিরোনামে ইআইইউর রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন চীনের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক। বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও বাংলাদেশের রফতানি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বাংলাদেশের প্রধান সুবিধা হলো এর নিম্ন-উৎপাদন ব্যয়। এইচঅ্যান্ডএম, গ্যাপ, লিভাইস ও জারার মতো বড় বড় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিচ্ছে। চীন থেকে পোশাক আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়ালে এসব ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে আমদানি বাড়িয়ে দেবে। ভবিষ্যতের এ সুবিধা কাজে লাগাতে বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে ইআইইউ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সুবিধা হলো এর উৎপাদন ব্যয় অন্যদের চেয়ে বেশি। তবে ভারত তৈরি পোশাকের কাঁচামাল তুলার বড় উৎপাদক। বাংলাদেশকে তুলার জন্য বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হয়। ভারতের একটি বড় দুর্বলতা হলো এর শ্রম আইন বেশ পুরনো।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন