বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পুলিশে ৫০ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৪ পিএম, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশের জনবল যথেষ্ট নয়। তাই আমরা পুলিশে আরও ৫০ হাজার নতুন পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, গত সাত বছরে আমরা পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে ৭৩৯টি ক্যাডার পদসহ ৩২ হাজার ৩১টি পদ সৃষ্টি করেছি। এ সত্ত্বেও দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশের জনবল যথেষ্ট নয়। তাই আমরা আরও ৫০ হাজার নতুন পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে ২৭৭টি ক্যাডার পদসহ ১৩ হাজার ৫৫৮টি পদে পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে রাজারবাগ পুলিশলাইন্সে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে প্যারেড অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে বলেন, প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে বিশ্বস্ত বন্ধুর মত দাঁড়াতে হবে। আমি আশা করি, পুলিশ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্য সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তাদের জনগণের সেবক হতে হবে। তাদেরকে অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে বিশ্বস্ত বন্ধুর মত দাঁড়াতে হবে, যাতে মানুষ তাদের ওপর নির্ভর করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্যদের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথাযথভাবে রক্ষার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। আমি আশা করি, আমাদের লক্ষ্য অর্জন এবং ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে আপনারা অবদান রাখবেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী একটি খোলা জিপে চড়ে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের দৃষ্টিনন্দন কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। তিনি অভিবাদনও গ্রহণ করেন। তিনি অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহিদুল হক ও অতিরিক্ত আইজিপি প্যারেড কমিটির প্রেসিডেন্ট মোখলেসুর রহমান তাকে স্বাগত জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক কার্যকলাপ প্রতিরোধ, জঙ্গিবাদ দমন, যুদ্ধাপরাধের বিচার, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, চতুর্থ উপজেলা নির্বাচন, তিন সিটি কর্পোরেশন ও দেশব্যাপী পৌরসভা নির্বাচনসহ সকল জাতীয় প্রয়োজনে প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সহায়তায় সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৬ জন বীর সদস্য জীবন দিয়েছেন। এর মধ্যে ২১ জন হচ্ছেন পুলিশ সদস্য। আমি পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শহীদ সদস্যদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। পবিত্র সংবিধান, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষার জন্য এই আত্মত্যাগ এক বিরল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের এ অবদান গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, সহিংসতা ও পেট্রোল বোমায় ২৩১ জন নিরীহ মানুষ নিহত ও ১১৮০ জন আহত হন। তাদের নিষ্ঠুরতা-নির্মমতার শিকার হয়ে নিরীহ বাস ড্রাইভার, বাস-টেম্পু-সিএনজি যাত্রী, প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ-বিজিবি-আনসার, সেনাবাহিনীর সদস্য, এমনকি স্কুলের শিক্ষক এবং শিশুও নিহত হয়েছে। এটা অকল্পনীয় যে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে।
বিগত বছরগুলোতে বিএনপি-জামায়াত-শিবির চক্রের সন্ত্রাস ও সহিংসতার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের অনৈতিক ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও সাহসী ভূমিকা পালনের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের আবারো ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের কর্মক্ষেত্র ও কর্মব্যপ্তি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চুরি-ডাকাতি, হত্যা-রাহাজানি বন্ধ নয়- সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মাদকপাচার, স্বর্ণ চোরাচালান ও নারী-শিশু পাচার রোধে পুলিশকে কাজ করতে হয়। এ কারণে আমরা পুলিশ বাহিনীকে উন্নত প্রশিক্ষণ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রয়োগে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। এক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। পুলিশ বাহিনীকে দেশের শান্তি নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক পুলিশ সদস্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রথম পুলিশ সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষণ থেকে একটি অংশ এ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশি শোষকদের পুলিশ নন, জনগণের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা। আপনাদের বাহিনী এমন যে, এর লোক বাংলাদেশের গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। আপনাদের নিকট বাংলাদেশের মানুষ একটি জিনিস চায়। তারা যেন শান্তিরত ঘুমাতে পারে। তারা আশা করে, চোর বদমাইশ, গুন্ডা, দুর্নীতিবাজ যেন তাদের উপর অত্যাচার করতে না পারে। আপনাদের কর্তব্য অনেক’।
পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের গৃহীত কার্যক্রমের বর্ণনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, তার সরকার ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), টুরিস্ট পুলিশ, রিভার পুলিশ, স্পেশাল সিকিউরিটি এন্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন গঠন করেছে। পুলিশ এসব উদ্যোগের ফল পেতে শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার জাতির পিতার দেয়া ‘আইজিপি র‌্যাঙ্ক ব্যাজ’ পুনরায় চালু করেছে এবং সাব-ইন্সপেক্টর/সার্জেন্ট পদকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ও ইন্সপেক্টর পদকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করেছে।’
কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম আরো জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই পুলিশ ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশের কার্যক্রম আরো গতি সঞ্চারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনবল বৃদ্ধি ও বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যানবাহন এবং অন্যান্য অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধির জন্য তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ চলমান থাকবে। সকল ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ধাপে ধাপে প্রতিটি খাত পুনর্গঠন করেছে এবং আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের প্রায়োগিক বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে দেশে জনগণের মাখাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৩১৪ ডলার এবং দারিদ্র্য হার ৪১.৫ শতাংশ থেকে কমে ২২.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আমরা সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ১২৩ শতাংশ বাড়িয়েছি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ এবং উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেক সদস্য এই সাফল্যের সমঅংশীদার। আমরা বিজয়ী জাতি, আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থাকবো না। আমরা ২০২১ সাল নাগাদ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবো এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, এই এ্যাওয়ার্ড ভবিষ্যতে তাদের কাজে আরো উৎসাহিত করবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গত এক বছরে পুলিশ সদস্যদের সাহসিকতা ও তাদের সার্ভিসের জন্য ৪টি ক্যাটাগরিতে ১০২ জন পুলিশ সদস্যের মাঝে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) হস্তান্তর করেন। ১৯ জন সদস্য বিপিএম এ্যাওয়ার্ড এবং ৪০ জন পিপিএম এ্যাওয়ার্ড এবং ২৩ জন বিপিএম সার্ভিস এ্যাওয়ার্ড ও অপর ৪০ জন পিপিএম সার্ভিস এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন