উত্তর : আরবি ‘আমানত’ শব্দের অর্থ গচ্ছিত রাখা, নিরাপদ রাখা। পরিভাষায়, কারো কাছে কোন অর্থ সম্পদ, বস্তু, সামগ্রী, গচ্ছিত রাখাকে আমানত বলা হয়। যিনি গচ্ছিত বস্তুকে বিশ্বস্তার সাথে সংরক্ষণ করেন, যথাযথভাবে হিফাজত করেন এবং মালিক চাওয়া মাত্রই কোন টালবাহানা ছাড়া ফেরত দেন তাকে আল-আমীন তথা বিশ্বস্ত সত্যবাদী আমানতদার বলা হয়। আমানতের প্রচলন জীবনের সর্ব ক্ষেত্রেই দেখা যায়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিটি স্তরে প্রতিটি বিষয়ে আমানত রক্ষা করা, ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
লেনদেনের আমানত, কথার আমানত- যেসব বিষয় প্রকাশিত হলে বা যেসব কথা বললে পারস্পরিক সম্পর্ক অবনতি ঘটবে, মনো-মালিন্য ও সংঘাত সৃষ্টি হবে, এমন বিষয় প্রকাশ না করা এবং না বলাও আমানত। সর্বক্ষেত্রে আমানত রক্ষা করা একজন মুমিনের পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।
আমানতদারিতাকে আল্লাহতায়ালা মুমিনের অন্যতম গুণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এরা সেই লোক যারা আমানতের প্রতি লক্ষ্য রাখে এবং স্বীয় অঙ্গীকার হেফাজত করে।’ (সূরা আল মুমিনুন, আয়াত : ৮)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন আমানত তার মালিককে যথাযথভাবে প্রত্যার্পণ করো।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ৫৮।)
প্রিয়নবী (দ.) অসংখ্য হাদিস শরীফে আমানতদারিতার মহৎ গুণকে ঈমানের আলামত বলেছেন। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নূরনবী (দ.) বলেছেন, যার আমানত দারিতা নেই তার ঈমান নেই, আর যে ওয়াদা পালন করে না তার মধ্যে দ্বীন নেই (বায়হাক্বী)। সততা, ন্যায় পরায়ণতা, বিশ্বস্ততা ও আমানতদারিতা রক্ষা না করা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, কথায় কথায় মিথ্যাচার করা ইত্যাদি গর্হিত আচরণকে মুনাফিকির নিদর্শন বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, ‘মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি। কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, যখন তার কাছে কোন বস্তু আমানত রাখা হয়, তা খিয়ানত করে। (বুখারি)। এ হাদীস শরীফ থেকে বুঝা যায় যে, যারা মুনাফিক প্রকৃতির লোক, তারা আমানত রক্ষা করার প্রতি যতœশীল থাকে না। হকদারের প্রাপ্য হক তাকে প্রত্যার্পণ করে না। হয় নিজে আত্মসাৎ করে অথবা অপব্যবহারের মাধ্যমে তা নষ্ট করে।
হকদারের প্রাপ্য হকও আমানতের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই পবিত্র কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী হকদারের যে কোনো হক আমাদের ওপর রয়েছে, তা আদায় করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। এ সকল হকের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর হক, বান্দার হক। বান্দার হকসমূহের মধ্যে আবার কিছু আছে দীন সংক্রান্ত। আর কিছু দুনিয়াবী বিষয়ক। কিছু আত্মীয়-স্বজন সম্পর্কিত। কিছু অন্যদের সাথে জড়িত। আবার কিছু আছে বড়দের হক। কিছু ছোটদের এবং কিছু সমকক্ষদের হক।এ সকল হক সম্পর্কে আমাদের অনেকের অবগতি না থাকার কারণে অথবা অমনযোগিতা ও উদাসীনতার কারণে অনেকে এসব হক আদায়ের প্রতি যথাযথ যত্মশীল থাকে না। যার ফলে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করার কারণে পরকালে তো তার শাস্তির সম্মুখীন হতেই হবে, এ ছাড়াও দুনিয়াতেও নানা রকম জটিলতা ও সমস্যা, ফেতনা-ফাসাদ, অরাজকতা-অশান্তি প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে এবং হতেই থাকবে। তাই এসব হকের ব্যাপারে সচেতন হওয়া ও হক আদায়ে যত্মশীল হওয়ার জন্য এ সম্পর্কে অবগতি লাভ করা সকলের জন্য আবশ্যক। বিজ্ঞ আলেমদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাদের ইলমি মজলিসে বসে এসব বিষয় জেনে নিতে হবে।পবিত্র কুরআন সুন্নাহর আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে প্রকৃত আমানতদার হিসেবে কবুল করুন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন