শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ইন্টারনেটের গতি কমানো সমর্থনযোগ্য নয়

| প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম


নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের দিন ইন্টারনেটের গতি কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দিন বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। ইতিপূর্বে নির্বাচন কমিশনের সচিব ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের দায়িত্ব পালন বিষয়ে উদ্ভট নির্দেশনা জারি করেছিলেন। ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনে অনিয়ম সম্পর্কে প্রিজাইডিং অফিসারকে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না, ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া যাবে না, মূর্তির মত দাঁড়িয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে হবে, ইত্যাদি নির্দেশনা জারি করে বিতর্কের ঝড় তুলেছিলেন। পরে অবশ্য এ বিষয়ে সংশোধিত নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে। এমনিতেই দেশের নির্বাচনী পরিবেশ এবং গণমাধ্যমের একপেশে ভ‚মিকায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ও জনমতের প্রতিফলন নিয়ে বড় ধরনের আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তা তৈরী হয়েছে। এসব আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তা দূর করে সামগ্রিক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করা নির্বাচন কমিশনের অন্যতম দায়িত্ব হলেও তার গৃহিত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ আস্থাহীনতা বাড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার দলীয় ক্যাডারদের আগ্রাসী ভ‚মিকায় তাদের নিববতায় ইসির প্রতি রাজনৈতিক দল ও সাধারণ ভোটারদের অনাস্থা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি অবাধ স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে, প্রার্থী ও ভোটারদের নির্ভয়-নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনের সামগ্রিক পরিবেশ সম্পর্কে সব মহলে একটি স্বচ্ছ ধারণা তুলে ধরা। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারে। মেইনস্ট্রীম গণমাধ্যমের সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এ ক্ষেত্রে বিকল্প মিডিয়া হিসেবে কাজ করছে।
সঠিক ও তাৎক্ষনিক সংবাদ পরিবেশনে মূলধারার গণমাধ্যমকে বাঁধাগ্রস্ত করা হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সুযোগ নিয়ে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর ঝুঁকি থাকলেও ইন্টারনেট বন্ধ করে বা গতি স্লো করে দিলে গুজবসহ জনমনে আশঙ্কার ডালপালা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশী। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ভোটের দিন ইন্টারনেটের গতি কমানোর চিন্তা ভাবনার তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মহল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সব প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তাতে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, ইসির এমন সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষও সহজভাবে মেনে নিচ্ছে না। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সংগঠনের সভাপতির পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভোটের দিন ইন্টারনেটের গতি কমানোর সিদ্ধান্ত নির্বাচনকে বিতর্কিত করবে। ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ নির্বাচন হওয়ার কারণে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবার বাংলাদেশে এসে সরাসরি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে না পারলেও ২০১৪ সালের বিতর্কিত একপাক্ষিক নির্বাচনের পর এবারের নির্বাচনের প্রতি সারাবিশ্বের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম এবং ইন্টারনেটই হচ্ছে নির্বাচনকে সাধারণ মানুষ ও বিশ্বের কাছে স্বচ্ছ বিশ্বাসযোগ্য রাখার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
মহাজোট সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়ণ করছে। তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় জনজীবনের অনেক কিছুতেই পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। এটা শুধু বাংলাদেশের বিষয় নয়, বৈশ্বিক অগ্রগতিরই অংশ।একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রধান দুই জোটের ইশতেহারেও ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ও জনবান্ধব নীতিমালা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। বিশ্বের চলমান ঘটনা ও তথ্যভান্ডারকে সব মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তি। এখন ঘরে বসেই বিশ্বের যে কোনো অঞ্চলের ঘটনা লাইভ দেখা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে জাতীয় নির্বাচনের মত জনগুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে লোকচক্ষুর বাইরে রাখা প্রায় অসম্ভব। নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং ভোটকেন্দ্র থেকে নির্বাচনের সংবাদ পরিবেশনে নির্বাচন কমিশনের কথিত বিধি নিষেধ এবং নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা এ কারণেই জনমনে সন্দেহের উদ্রেগ করেছে। প্রকৃত ঘটনাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখা হলে ঘটনা সম্পর্কে গুজব ছড়ানোর সুযোগকেই উস্কে দিতে পারে। নির্বাচনের দিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে রেখে নির্বাচনের প্রকৃত অবস্থাকে জনসাধারণ থেকে আড়াল করে রাখা বা বিশ্ব থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন রাখার প্রয়াস হিসেবেই বিবেচিত হবে। এটা স্বচ্ছ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের জন্য সহায়ক হতে পারে না। নির্বাচন নিয়ে গুজব বা যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাইবার ইন্টেলিজেন্স টিমের তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়াই যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকসেস সঙ্কুচিত করার উদ্যোগ জনবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবেই গণ্য হবে। জনমত উপেক্ষা করে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধা নিয়ন্ত্রণের চিন্তা একটি অশুভ উদ্যোগ হিসেবেই বিবেচিত হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা থেকে নির্বাচন কমিশন ও বিটিআরসি বিরত থাকবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে গণমাধ্যমের সব পথ খোলা রাখার বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন