শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ইন্দোনেশিয়ায় সুনামি তান্ডবে নিহত ২২২

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

আকষ্মিকভাবে সুনামির আঘাত যেন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করেছে ইন্দোনেশিয়াকে। শনিবার রাতের এই তান্ডবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ৮৪৩ জন। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছে আরও ৩০ জন। তবে এতে রোববার পর্যন্ত কোন বিদেশীর মৃত্যু সংবাদ পাওয়া যায়নি বলে জানান স্থানীয় কর্মকর্তারা।
ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, শনিবার স্থানীয় সময় রাতে ওই সুনামির আঘাতে শত শত বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। সুন্দা স্ট্রেইট উপক‚লীয় এলাকায় আনাক ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাবে পানির নিচে ভ‚মিধস হয়। যার প্রতিক্রিয়ায় আকষ্মিক সুনামির সৃষ্টি হয়। জাভা দ্বীপ ও সুমাত্রার মাঝখানে অবস্থিত সুন্দা স্ট্রেইট জাভা সাগরকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। আবারও সুনামি আঘাত হানার আশঙ্কা থাকায় সবাইকে উপকূলীয় এলাকা থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত উচ্চ জোয়ারের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
পান্ডেগলাং, ল্যাম্পুং ও সেরাং অঞ্চলে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেখান থেকে বিবিসির সাংবাদিক রেবেকা হেনশকে বললেন, শুধু ল্যাম্পুং প্রদেশেই নিহতের সংখ্যা কয়েক শত হতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ফুটেজ শেয়ার দেয়া হয়েছে তাতে দেখা যায় অবকাশ যাপনের স্থানগুলোতে একটি তাঁবুতে আঘাত করছে বিশাল এক ঢেউ। ওই স্থানে পারফর্ম করছিল ইন্দোনেশিয়ায় জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘সেভেনটিন’। অকস্মাৎ সুনামি আঘাত হেনে তাদের মঞ্চটি ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ফলে ওই ব্যান্ডের সদস্যদেরকে আর দেখা যায় নি। ধারণা করা হয়, তাদেরকে ভাসিয়ে সমুদ্রের গহ্বরে টেনে নিয়েছে সুনামি। পরে ইন্সটাগ্রামে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দলটির ভোকাল রাইফিয়ান ফাজারসিয়াহ জানান, তাদের বেসিস্ট ও রোড ম্যানেজার মারা গেছেন। ব্যান্ডের আরো তিনজন সদস্য ও রাইফিয়ান ফাজারসিয়াহর স্ত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার অভিযানে নেমেছে রেডক্রম। তারা একটি ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ করছে।
সুনামির সময়ে পশ্চিম জাভার আনিয়ার সমুদ্র সৈকতে ছিলেন নরওয়ের ফটোসাংবাদিক ওয়িস্টেন লুন্দ অ্যান্ডারসন। তিনি জানান, ‘আমি ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুতপাত ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করছিলাম। সন্ধ্যায় সেটিতে বড় রকমের অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। এর পরপরই সৈকতে আছড়ে পড়তে থাকে বিশাল বিশাল ঢেউ। রাত হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি খুব একটা খেয়াল করেনি কেউ। অকস্মাৎ দেখতে পাই পাহাড়ের সমান উঁচু ঢেউ ছুটে আসছে। তা দেখে আমি দৌড় শুরু করি। দুটি ‘ওয়েভ’ বা ঢেউ আছড়ে পড়ে। প্রথমটি বেশী শক্তিশালী ছিল না। ফলে, আমি পালাতে পেরেছি।’
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, আগে থেকে সতর্কতা জারি করতে না পারা ও ছুটির দিন হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলীয় সুমাত্রা এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় জাভা উপক‚লে হঠাৎ সুনামির আঘাতে এত বেশী মানুষ হতাহত হয়েছে। এতে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। প্রবল সামুদ্রিক জলোচ্ছ¡াসে শত শত বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে, সুনামিতে বিধ্বস্ত ইন্দোনেশিয়ার পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে অস্ট্রেলিয়া। এ বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘সব সময়ের মতই আমরা যে কোন প্রয়োজনে ইন্দোনেশিয়ার পাশে আছি।’
জীবিতদের উদ্ধারে ইতোমধ্যেই তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে উদ্ধারকারী দল। সুনামির কারণে অসংখ্য স্থানে গাছ উপড়ে গেছে। আকস্মিক পানির স্রোত পর্যটন শহরকে অন্ধকারচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত করেছে। সেখানে উদ্ধার কার্যক্রমে জড়িত রেড ক্রসের এক কর্মকর্তা জানান, সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে অসংখ্য মৃতদেহ। পান্ডেংলাং এর প্রধান সড়ক বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধার কার্যক্রম কঠিন হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, সুনামি এবং ভূমিকম্প প্রবণ দেশগুলির মধ্যে প্রথম সারিতেই রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। মাঝেমধ্যেই কেঁপে উঠে এই দ্বীপ রাষ্ট্র। ২০০৪ সালে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প এবং তার জেরে সুনামি আছড়ে পড়ে অন্তত ১৩টি দেশে। সব দেশ মিলিয়ে দু’লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। শুধু ইন্দোনেশিয়াতেই মৃতের সংখ্যা ছিল এক লক্ষ ২০ হাজার। সূত্র: বিবিসি, সিএনএন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন