ইনকিলাব ডেস্ক : উত্তর কোরিয়ায় চল্লিশ বছর পরে হতে চলেছে ওয়ার্কাস পার্টি সম্মেলন, যার উদ্দেশ্য হলো পিয়ংইয়ংয়ের মাটিতে কিমের শাসন ব্যবস্থা আরো পোক্ত করা। শেষবার যখন দেশে পার্টি কংগ্রেস হয়েছিল তখন জন্মই হয়নি কিম জং-উনের। প্রায় ৪০ বছর পেরিয়ে যখন পিয়ংইয়ংয়ের মাটিতে আবার দলীয় সম্মেলন শুরু হলো ততোদিনে উত্তর কোরিয়ার শাসকের আসনে জাঁকিয়ে বসেছেন কিম। তবে খাতায়-কলমে সে দেশে এখনো একটি শাসক দল রয়েছে। আর তাদেরই মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী গোষ্ঠীর সম্মেলনের নাম এই ওয়ার্কার্স পার্টি কংগ্রেস। সম্মেলনের একমাত্র লক্ষ্য যে কিমের শাসন আরও মজবুত করা সেটা অবশ্য একবাক্যে মানছে আন্তর্জাতিক মহলও। ১৯৮০ সালে শেষ সম্মেলনের সময় এক নতুন শাসক পেয়েছিলেন দেশবাসী। কিমের দাদু কিম উল-সুং’কে সরিয়ে তখন ক্ষমতায় আসেন কিমের বাবা কিম জং-ইল।
২০১১ সালে তার মৃত্যু হলে সেই ফাঁকা আসনে বসেন ছেলে কিম জং-উন। কিন্তু তখন কোনও পার্টি কংগ্রেসের আয়োজন করা হয়নি। ৬ বছর নিজের মর্জিমাফিক দেশ চালানোর পর অবশেষে সম্মেলনের আসর বসাতে রাজি হন তিনি। শাসক দলের কর্মকর্তাদের বৈঠক বসবে ‘হাউস অব কালচার’-এ। তার সামনে টাঙানো কিমের দুই পূর্বপুরুষের বিশাল বিশাল ছবি। শহরের সেন্ট্রাল স্কোয়ারের সামনে উপচে পড়ছে ফুলের তোড়া। প্রায় সত্তর দিন ধরে চলেছে প্রচার পর্ব। বাইরের দুনিয়া ছোঁয়া যারা এত দিন এক রকম এড়িয়েই এসেছে, সেখানে সম্মেলনের জন্যই ব্যতিক্রম ভাঙল কিছুটা। সেখানে যোগ দেয়ার জন্য বিদেশ থেকে প্রায় হাজার জন অতিথিকে নিমন্ত্রণ করে এনেছে কিমের দেশ। এমনকী, ডাক পেয়েছেন ১৩০ জন বিদেশি সাংবাদিকও। তবে ঘটা করে তাদের নিমন্ত্রণ করে নিয়ে এলেও গতকাল সম্মেলন স্থলে ঢোকার অনুমতি পাননি বাইরের সাংবাদিকরা। বরং হঠাৎই এ সব ছেড়ে তাদের ঘুরতে পাঠানো হয় রাজধানীর এক কারখানায়। যাকে ঘিরে এত উত্তেজনা, সেই সম্মেলনে ঠিক কী হচ্ছে তা জানার কিন্তু উপায় নেই কোনও সাংবাদিকের। জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে নেই এ সংক্রান্ত খবর বা সরাসরি সম্প্রচার।
তাই ভিতরে কী হচ্ছে, তা জানার উপায় না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বেশ কয়েকটি সমস্যার কথা। এত দিন বাদে কেন দলীয় সম্মেলন ডাকা হল, তার পিছনেও বিস্তর হিসেব-নিকেশ রয়েছে বলেই মনে করছেন সকলে। এই বছর হাইড্রোজেন বোমা ফাটিয়ে বর্ষবরণ করেছিলেন কিম জং-উন। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে তার পরও বিশেষ সম্মান জোটেনি তার কপালে। উল্টে তাদের শক্তির জোর নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধীরা। আবার পেশি ফোলানোয় বিনিময়ে জুটেছে জাতিসংঘের কড়া নিষেধাজ্ঞা। তার ফলে, অর্থনৈতিকভাবেও বেকায়দায় পড়েছে দেশটি। স্থানীয় সংবাদপত্রে বড় বড় করে ছেপে বেরিয়েছিল, দেশের মানুষকে ঘাস খেয়ে বাঁচার অভ্যাস করতে বলছেন কিম। এ সবের মধ্যেই তাদের একমাত্র বন্ধু রাষ্ট্র চিনও যেন বেঁকে বসেছে কিছুটা। কিমের লাগাতার শক্তি পরীক্ষায় বিরক্ত চিন যে আর আগের মতো ব্যবহার করছে না, বেশ মালুম হচ্ছে উত্তর কোরিয়ারও। এবিপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন