শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সিঙ্গাপুরে জনশক্তি রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না

প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামসুল ইসলাম : সিঙ্গাপুরে জঙ্গি সন্দেহে বাংলাদেশী আটক ইস্যু জনশক্তি রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। আধুনিক সিঙ্গাপুরের উন্নয়নে বাংলাদেশী অভিবাসী কর্মীদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। সিঙ্গাপুরের অধিকাংশ মেগা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশী দক্ষ কর্মী নিয়োগে বেশি আগ্রহী। সিঙ্গাপুর থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সম্প্রতি দেশটিতে জঙ্গি সন্দেহে ১৩ জন বাংলাদেশী কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আটককৃত বাকি ৮ জন সিঙ্গাপুর ডিটেনশন ক্যাম্পে রয়েছে। এছাড়া গত ডিসেম্বরও সিঙ্গাপুর পুলিশ ২৭ জন বাংলাদেশী কর্মীকে আটক করে দেশে ফেরত পাঠিয়েছিল।
দেশটিতে জঙ্গি সন্দেহে আটকৃত বাংলাদেশীদের খবর ফলাও করে প্রচার হওয়ায় সাধারণ দক্ষ অভিবাসী কর্মীদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। এ সুযোগে সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজার একচেটিয়া দখল করতে পার্শ্ববর্তী একটি দেশ মরিয়া হয়ে উঠেছে। দুই দফায় সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো ৩২ বাংলাদেশির কারও সঙ্গেই আইএস-এর সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি পুলিশ। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়েরের পর তাদের রিমান্ডে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তারা। জিজ্ঞাসাবাদেও তাদের কাছ থেকে আইএস সংশ্লিষ্টতার কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তাদের কয়েকজন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অনুসারী বলে গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গোয়েন্দারা জানান, গত ডিসেম্বরে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো ২৭ বাংলাদেশীর মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। অপর ১৫ জনের সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে উত্তরা পূর্ব থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়। তাদেরকেও আদালতের নির্দেশে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানীর অনুসারী বলে স্বীকার করলেও তাদের কেউই আইএস সদস্য বলে স্বীকার করেনি। গোয়েন্দারাও তাদের আইএস সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাননি। তবে তদন্তের অগ্রগতি পুলিশ সদর দফতর ও আদালতকে অবহিত করে রাখা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজার ধরে রাখতে সরকারকে সমন্নিত উদ্যোগ নিতে হবে। সিঙ্গাপুরের মেগা প্রকল্পগুলোতে অধিকহারে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টিতে সরকারকে বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে ভারতসহ অন্যান্য সেন্ডিং দেশের কর্মীদের সাথে পাল্লা দিয়ে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন সেক্টরে লক্ষাধিক বাংলাদেশী দক্ষ কর্মী কাজ করে প্রচুর রেমিটেন্স আয় করছে। এদের মধ্যে কমপক্ষে ৫ হাজার বাংলাদেশী পারমানেন্ট রেসিডেন্ট (পিআর) এবং পূর্ণ নাগরিক রয়েছে। জনশক্তি রফতানিকার মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন গতকাল এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, আধুনিক সিঙ্গাপুরের উন্নয়নে বাংলাদেশী দক্ষ কর্মীদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। সিঙ্গাপুরের মেগা কোম্পানীগুলো বাংলাদেশী দক্ষ কর্মীদের নিয়োগ দিতে বেশি আগ্রহী। চলতি বছরের শেষের দিকে সিঙ্গাপুর থেকে কুয়ালালামপুরে (৩শ’ কিলোমিটার) মাটির নিচ দিয়ে বুলেটপ্রুফ দ্রুতগামী রেল প্রজেক্টসহ ১৩টি মেগা প্রজেক্ট আসছে। কুয়ালালামপুর-সিঙ্গাপুর হাই স্পিড রেল প্রজেক্ট বাস্তবায়নে জাপান, কোরিয়া, চীনসহ একাধিক দেশ অংশ নিবে। কুয়ালালামপুর-সিঙ্গাপুর হাই স্পীর্ড রেল প্রজেক্টের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবানের প্রক্রিয়া চলছে। আগামী ২০২০ সালে হাই স্পিড রেল প্রজেক্ট চালু হলে মাত্র ৯০ মিনিটে সিঙ্গাপুর থেকে কুয়ালালামপুরে পৌছা যাবে। পথে ৬টি স্টেশনে হাই স্পিড রেল থামবে। হাই স্পিড রেলসহ এসব প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে কমপক্ষে ৫০ হাজার বিদেশী কর্মীর প্রয়োজন হবে। এসব প্রজেক্টে দক্ষ কর্মী প্রেরণে জোর লবিং চালানো জরুরী হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশী কর্মীরা একনিষ্ঠ ও কঠোর পরিশ্রমী। যে কোনো প্রজেক্টের কাজ দ্রুত তুলতে বাংলাদেশী কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করে থাকে।
সিঙ্গাপুরে জনশক্তি রফতানির প্রতিযোগী মার্কেটগুলো হচ্ছে ভারত, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, চীন, নেপাল ও শ্রীলংকা। এসব দেশ সিঙ্গাপুরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় স্ব-স্ব দেশের কর্মীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণে জোর লবিং চালিয়ে থাকে। মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন বলেন, সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজার ধরে রাখতে হলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন ও সেন্ডিং অর্গানাইজেশনকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশী কর্মীদের ডরমিটরি ও কর্মস্থলে গিয়ে জঙ্গি তৎপরতা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বোঝাতে হবে। দেশের ভাবমর্যাদা যাতে ক্ষুণœ না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। তিনি বলেন, জঙ্গি সন্দেহে আটক বাংলাদেশী ইস্যু নিয়ে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত ৫ হাজার বাংলাদেশী পারমানেন্ট রেসিডেন্ট (পিআর) ও পূর্ণ নাগরিকরা আত্মমর্যাদার হুমকির মুখে পড়েছেন। সিঙ্গাপুরে মেগা প্রজেক্ট নিয়ে যখনই বাংলাদেশী কর্মীরা আলোর মুখ দেখছেন তখন জঙ্গি সন্দেহে আটক ইস্যু নিয়ে আতংক দেখা দিয়েছে। সিঙ্গাপুর সরকার অকারণেই দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশীদের ক্ষতির মুখে ফেলবে না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি বছরের শেষের দিকে সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে ১৩টি মেগা প্রজেক্টের কার্যক্রম শুরু হবে। এ মেগা প্রজেক্টগুলো হচ্ছে, সিঙ্গাপুর-কুয়ালালামপুর হাইস্পিড রেল প্রজেক্ট, ৪-ইন-১ ডিপোট, শেল স্টেশন (গার্ডেনাস বে ইস্ট) অ্যান্ড বোরেড টার্নেলস, তানজং রুহ স্টেশন অ্যান্ড কাট অ্যান্ড কভার টার্নেলস, কাতং পার্ক স্টেশন অ্যান্ড বোরেড টার্নেলস, অ্যাম্বার স্টেশন, মেরিন পার‌্যাড স্টেশন কাট অ্যান্ড কভার অ্যান্ড বোরেড টার্নেলস, মেরিন ট্যারেন্স স্টেশন কাট অ্যান্ড কভার অ্যান্ড বোরেড টার্নেলস, সিগলাপ স্টেশন, বেশোর স্টেশন কাট অ্যান্ড কভার অ্যান্ড বোরেড টার্নেলস, বেডোক সাউথ স্টেশন অ্যঅন্ড বোরেড টার্নেলস, সাংগুই বেডোক স্টেশন অ্যান্ড কাট কভার টার্নেলস, সুংগাই বেডোক স্টেশন অ্যান্ড কাট অ্যান্ড কভার টার্নেলস ও ডিটিএল ৩ এক্সটেনশন ক্সিলিন স্টেশন অ্যান্ড কাট অ্যান্ড কভার টার্নেলস। এখন থেকে সিঙ্গাপুরের সাথে সম্পর্ক উন্নত করতে পারলে এসব মেগা প্রজেক্টে প্রচুর বাংলাদেশী কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলেও হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার মাহবুব উজ জামান গতকাল রাতে টেলিফোনে ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে সিঙ্গাপুরে জঙ্গি সন্দেহে আটক বাংলাদেশী ইস্যু নিয়ে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কি না এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি। হাইকমিশনার বলেন, টেলিফোনে এখন আর কিছু বলি না। এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন থাকলে ই-মেইলে পাঠান তার পর আমরা জবাব দেবো। এ ইস্যু নিয়ে ফোনে কিছু বলব না। সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত মাসিক বাংলার কণ্ঠের সম্পাদক এ কে এম মহসিন গতকাল টেলিফোনে ইনকিলাবকে বলেন, জঙ্গি তৎপরতা ইস্যু নিয়ে সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্মীদের ডরমিটরি ভিজিট করে করণীয় সম্পর্কে কোনো উদ্যোগ নেয় না। হাইকমিশন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশী কর্মীদের স্বার্থরক্ষায় চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। কর্মীদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য হাইকমিশন কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এরা শুধু বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে নানা শিল্পী এনে নাচ-গানের আয়োজন করতেই ব্যস্ত থাকেন। তিনি বলেন, অন্যান্য সেন্ডিং কান্ট্রির ন্যায় আমাদের হাইকমিশন কর্তৃপক্ষ বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিলে সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজার ধরে রাখা সম্ভব। সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজার নিয়ে কথা বলার জন্য রাতে সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার অ্য্যাটাচির শ্রম সচিব আয়শা সিদ্দিকা শেলির মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। সিঙ্গাপুরস্থ আমিডা কনসালটেন্সি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড্যানি এনজি কেসি গতকাল টেলিফোনে জানান, সিঙ্গাপুরে জঙ্গি সন্দেহে বাংলাদেশী কর্মী আটক ইস্যু জনশক্তি রফতানিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর সরকার সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশী কর্মীদের নেয়ার সাথে জঙ্গি কার্যক্রমের কোনো সম্পর্ক নেই। মি. ড্যানি আরো বলেন, সিঙ্গাপুরের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশী কর্মীদের কর্মদক্ষতার কারণেই তাদেরকে চাকরি দিতে বেশি আগ্রহী। সিঙ্গাপুরে প্রচুর বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে বলেও মি. ড্যানি উল্লেখ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন