শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শৈত্যপ্রবাহে দিশেহারা দরিদ্র মানুষ

প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্নস্থানে শৈত্যপ্রবাহ ও তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে শীত বস্ত্রহীন দরিদ্র নারী পুরুষ ও শিশুরা প্রবল শীত কষ্টে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
আবু হেনা মুক্তি খুলনা থেকে জানান, উপকূলীয় অঞ্চলের জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। গত ৬ দিনের টানা শৈত্যপ্রবাহে খুলনাসহ অরক্ষিত উপকূলীয় অঞ্চলের ১০ লাখ মানুষ শীতে দিশেহারা। এদের ঘর নেই, উচু ভেড়িবাঁধের উপর টোং ঘর থাকলেও তার বেড়া নেই। শিশু ও বৃদ্ধদের গরম কাপড় নেই। গত তিন দিনে কয়েক হাজার শিশু নিউমনিয়া ও ঠা-াজণিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগছে। যাদের ওষুধ কেনার টাকা নেই। আর উপকূলীয় দুর্গম এলাকা থেকে অনেকেরই শিশু হাসপাতালে আসার সামর্থ বা সুযোগ নেই। ফলে বিচ্ছিন্ন এলাকা উপকূলীয় অঞ্চলের জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। সরকারি ভাবে কোন শীত বস্ত্র এসব এলাকায় পৌঁছায়নি। ইতোমধ্যে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে গত ৩ দিনে তীব্র শীতে ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। গত সপ্তাহ জুড়ে শুধুমাত্র খুলনা শিশু হাসপাতালে ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে দেড় হাজার শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গত ১৫ দিন ঠা-াজণিত রোগে আক্রান্ত ২ হাজারের বেশি শিশুকে চিকিৎসা দেয়ো হয়েছে। চিকিৎসকরা জানয়েছেন, আবহাওয়া পরিবর্তন ও হঠাৎ করেই ঠা-া বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাইরাস জণিত কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস ইনচার্জ ইনকিলাবকে জানান, তাপমাত্রা ওঠা নামার সম্ভাবনা রয়েছে। ভোরে ভারী কুয়াশা পড়ছে। তিনি জানুয়ারী মাস জুড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। মৃদু শৈত্যপ্রবাহে বিপাকে পড়েছে নগরীর ভাসমান ও দরিদ্র লোকজন। বিভিন্নস্থানে ছিন্নমূল লোকজন চরম দুর্ভোগে রাত কাটাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রায় ৬ বছর পরও গৃহহীন ও পানিবন্দি তিন লক্ষাধিক মানুষ শীত নিবারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ জোগাড় করতে পারেনি। চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে আইলা দুর্গত ও কপোতাক্ষ পাড়ের জনপদে। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র, ভেড়িবাঁধ ও উচু রাস্তায় পলিথিন দিয়ে তাবু আকারের ঘরে অস্থায়ীভাবে বাস করা এসকল লোকজন সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
বাগেরহাটের ফকিরহাটে শৈত্যপ্রবাহে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরায় টানা কয়েক দিনের অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেক শ্রমজীবী। প্রচ- শীতে বেশ কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ঠা-াজণিত রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন পর্যন্ত ১৫ শিশুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ। প্রচ- ঠা-ার কারণে চরম বিপাকে পড়েছে সাতক্ষীরার তালা, কলারোয়া ও আশাশুনি উপজেলার বন্যা উপদ্রুত এলাকার গৃহহীন জনসাধারণ। ভয়াবহ বন্যায় তাদের ঘরবাড়ি ধসে পড়ায় বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া লোকজন ক্ষুধার পাশাপাশি শীতের সাথে সংগ্রামে নেমেছেন। শীতবস্ত্র না থাকায় অনেকে রাত জেগে খড়-কুটো যোগাড় করে আগুন জ্বেলে রাত পার করার চেষ্টা করছে। কলারোয়া কয়রা এলাকার রহিমা খাতুন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত তার বাচ্চাকে নিয়ে এসেছেন সদর হাসপাতালে। তিনি জানালেন গরম কাপড় কেনার মত আর্থিক সঙ্গতি নেই তার। এ অবস্থা জেলার অধিকংশ এলাকায়। প্রচন্ড শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা হাপানী, ব্রস্কাইটিস, নিউমোনিয়া, সর্দিজ্বর, সাইনোসাইটিস, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
খুলনার দাকোপ ও কয়রা উপজেলার আইলা বিধ্বস্ত এলাকা এবং কপোতক্ষ পাড়ের হাজার হাজার পরিবার প্রচন্ড শীতে অবর্ণনীয় কষ্টে রয়েছে। এসব এলাকার মানুষের মাঝে গরম কাপড় পৌছায়নি বললেই চলে। খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশিদ ব্যক্তিগত ভাবে বিভিন্ন স্থানে শীত বস্ত্র বিতরণ করেছেন। সম্প্রতি খুলনাতে তিনি শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। তবে সরকারি ভাবে তেমন শীত বস্ত্র বিতরণ না হওয়ায় জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে যাতায়াত ব্যবস্থা দুর্বল বলে এসব অঞ্চলের খবর রাখেনা অনেকেই। এবার শীতে অতিতের চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
সূত্রমতেম, তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের জেলাগুলোতে টানা ৬ দিনের শৈত্যপ্রবাহে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। হতদরিদ্ররা খরকুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেছে। সরকারিভাবে সামান্য কিছু কম্বল বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য। সন্ধ্যা নামার আগেই ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে গোটা উপকুলীয় জনপদ। শীতের সাথে ঠা-া বাতাসে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষজন পড়েছে চরম দুর্ভোগে।
নীলফামারীতে শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত
নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে নীলফামারী। সেই সাথে হিমেল বাতাশ আর শৈত্য প্রবাহে কাহিল হয়ে পড়েছে এখানকার জনজীবন। এতে করে চরম বেকায়দায় পড়েছে খেটে খাওয়া ও নিম্ম আয়ের মানুষজন। কনকনে ঠা-া আর হিমেল বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছেন তারা। কাজে যেতে না পেরে নিদারুন কষ্টের মধ্যে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষজন।
দিনভর ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকছে পথ-ঘাট। রাতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশাপাত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল মঙ্গলবার সারাদিন সূর্য উকিঁ দিতে পারেনি। দিনের বেলায় যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
এদিকে শীত বস্ত্রের অভাবে শীতার্ত মানুষজন খড়কুটে জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশী বেকায়দায় পড়েছে বয়স্ক ও শিশুরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতাল গুলোতে শীতজনিত রোগীদের ভীড় বাড়ছে। জেলা প্রশাসক মোঃ জাকীর হোসেন জানান পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের জন্য জরুরি ফ্যাক্স বার্তা পাঠানো হয়েছে।
বোদায় হাড় কাপানো শীত।
বোদা (পঞ্চগড়) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গ্রাম বাংলায় প্রবাদ আছে ‘মাঘের শীত বাঘের গায়ে’ মাঘ মাসের শীতের তীব্রতা এত বেশি থাকে যে, বাঘও কাবু হয়ে পড়ে। মাঘের কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পঞ্চগড় সহ বোদা উপজেলার জনজীবন। শীতবস্ত্রে¿র অভাবে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষের অবস্থা বড়ই শোচনীয়। এসব এলাকার মানুষজন খড়কুটো জ¦ালিয়ে শীত নিবারণের ব্যার্থ প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছেন। গত ৪ দিন ধরে তেমন সুর্যের আলোর দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশার পাশাপাশি তীব্র শৈত্য প্রবাহ শীতের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে আরও কয়েক গুণ। এতে বোদা পৌরসভা সহ ১০টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার শীর্তাত অসহায় মানুষগুলো প্রচ- শীতের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে লোকজনের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। উপজেলার কোথাও কোথাও সরকারি-বেসরকারি ভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
মহাদেবপুর (নওগাঁ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নওগাঁর মহাদেবপুরে কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশার সাথে হিমেল বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে শীত জনিত জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, রক্ত আমাশয় ও নিউমোনিয়া রোগের। মারাত্মক ঠা-াজনিত এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধ এবং শিশুসহ নানা বয়সী মানুষজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হচ্ছে প্রতিদিনই। এছাড়াও কমিউনিটি ক্লিনিক, বিভিন্ন বেসরকারি হাসপতাল, ক্লিনিক এবং ডাক্তারদের চেম্বারে অনেকে শীতজনিত রোগবালাইয়ের চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত ক’দিন আগের তুলনায় বর্তমানে শীত আরো জেঁকে বসেছে। হাড় কাঁপানো শীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় মারাত্মক ব্যাঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। শীতের তা-বে কৃষি কাজকর্মে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বোরোর জমি প্রস্তুত করতে পারছেনা কৃষকরা। এর প্রভাব পড়েছে কৃষকের বোরো বীজতলায়। শীতের প্রচ-তায় বোরো ফসল নির্বিঘেœ চাষাবাদ করা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষককূল। আকাশে খুব সামান্য সময় সূর্যের দেখা মিললেও তাতে তাপ নেই। কনকনে শীতে ঠকঠক করে কাঁপছে মানুষজন ও পশুপাখি। পরিবারের বৃদ্ধ, বৃদ্ধা ও শিশুদের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকেই শীতের তীব্রতা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে নির্ঘুম রাত পার করছে। কেউ কেউ খরকুটো জ্বালিয়ে রাত পার করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন