নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর নেতাকর্মীদের তাণ্ডবে বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপি প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামানের কর্মীরা। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিকদলসহ প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গাজী তাণ্ডবের অংশীদারের ভ‚মিকা পালন করছে। একদিকে সরকার দলীয় প্রার্থীর সন্ত্রাসী হামলা, অপরদিকে পুলিশের অভিযানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামানের নেতাকর্মীরা। পুলিশ নেতা কর্মীদের বাড়িতে না পেলে ব্যাপক হয়রানীর শিকার হচ্ছে পরিবারের লোকজন। শুক্রবার সরেজমিনে রূপগঞ্জ এলাকায় গেলে এ চিত্র ফুটে উঠে।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, রাতে তারা গাজী বাহিনী ও পুলিশের তাণ্ডবে ঘুমোতেও পারছেন না। পুরো এলাকায় ধানের শীষের চোখে পড়ার মত তেমন কোন পোস্টার না থাকার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভোটার জানান, গাজী বাহিনী বিএনপির কোন পোস্টার লাগাতে দেয়না। গ্রামের কোন ছেলে পোস্টার লাগোতে গেলে তাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এ ধরনের একাধিক ঘটনা স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তাকে জানালেও তারা অজ্ঞাত কারণে নিরব থাকছেন। এ অভিযোগ বিএনপি প্রার্থী কাজী মনিরের।
পুরো এলাকা ঘুরে বিএনপির তেমন কোন নেতা কর্মীদের পাওয়া যায়নি। তারা এখন সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে সাধারণ মানুষ নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে রূপগঞ্জের পরিস্থিতি সম্পর্কে গণমাধ্যম কর্মীদের তথ্য দিচ্ছেন। তারা বলছেন রূপগঞ্জে এখন শেষ ভরসা সেনাবাহিনী। বাংলাদেশে সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেলেও তারা সেনাবাহিনীর উপর আস্থা রাখতে চান। তারা মনে করেন সেনাবাহিনী যদি নির্বাচনের দিন সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয় তাহলে ভোটাররা তাদের ভোট দিতে পারবে। কিন্তু তারা যদি নিরব থাকেন তাহলে ভোটারদের সম্ভব হবে না সন্ত্রাসীদের ভেদ করে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা। সাধারণ মানুষ চান তাদের ভোট তারা নিজেরা দিবেন।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ লড়াইয়ে আমি শেষ পর্যন্ত থাকবো। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আমরা পরিপূর্ণ বিজয় না পেলেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রথম ধাপে আমরাই জয়ী হবো। নির্বাচনে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ প্রার্থী গাজী গোলাম দস্তগীরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনিও একজন মুক্তিযোদ্ধা। আশা করবো অপর একজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে নির্বাচনী লড়াইয়ে সমান সুযোগ দেবেন। ভোট কেন্দ্র দখলের মতো ঘৃণ্য কোন ঘটনা না ঘটিয়ে ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলনের প্রতি আস্থা রাখুন। ভোটাররা আমাকে ভোট না দিলে আমি সেটা মেনে নেব।
গতকাল শুক্রবার সকালে বিএনপি প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামন মনির তার তারাব এলাকার নিজ বাড়িতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও প্রশাসনের প্রতি এ আহ্বান জানান। কাজী মনির আবেগঘন কন্ঠে বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রূপগঞ্জে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ২শ’ ৭২ জন নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় ৫টি গায়েবী মামলা দায়ের করেছে প্রতিপক্ষ। ওইসব মামলায় দলের যেসব নেতাকর্মী পোলিং এজেন্ট ও ভোটের দিন কেন্দ্রের বাইরে দায়িত্ব পালন করতো তাদের আসামী করা হয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে সর্বশেষ মামলাটি দায়ের হয়েছে বৃহস্পতিবার। এসব মামলায় আমার ১৯ নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় গত বুধবার কাঞ্চন পৌর ছাত্রদল নেতা শফিকুল ইসলামকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবা শহীদুল্লাহকে ধরে নিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশ। এরপর তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে আনা হয়। অথচ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন আইন অনুযায়ী এসব মিথ্যা মামলা হওয়ারই কথা নয়। এসব বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে ৫টি লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাইনি। অথচ ভোট একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। যার ভোট সে দিবে, যাকে খুশি তাকে দিবে-এমনটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ওনাদের ভোট ওনারই দেবে, সঙ্গে সবার ভোটও ওনারাই দেবেন।
কাজী মনির অভিযোগ করেন, নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর পুরো রূপগঞ্জকে সন্ত্রাসের চাদরে ঢেঁকে দেওয়া হয়েছে। দলের নেতা কর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি বাড়ির ভাড়াটেদেরও বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এসব করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি প্রতিপক্ষ। দলের নেতাকর্মীদের অনেকের বাড়ি-ঘরের গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশও সমান তালে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। যেসব নেতাদের বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এত কিছুর পরেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে একজন সৈনিক হিসেবে আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যেতে চাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন