বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শেখ হাসিনার জয়ের প্রভাব চীন-ভারত দ্বন্দ্বে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৮:২৭ পিএম | আপডেট : ৮:৩১ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন, কিন্তু এখন তাকে প্রতিবেশী দুই শক্তিশালী দেশ চীন ও ভারতের সাথে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রেখে স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ দলটি রোববার জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে, টানা তৃতীয় ও সর্বমোট চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার রেকর্ড গড়েছে। গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ এবারের নির্বাচনে ‘গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স’ নামে একটি জোট গঠন করে ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৮৮ টি জিতেছে। যার ফলে হাসিনা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। কিন্তু এই জয় নির্বাচনি সহিংসতায় ১৭জন মানুষ নিহত হওয়া এবং ভোট কেন্দ্র দখলের অভিযোগে সমালোচিত হয়েছে। বিরোধী দলীয় জোট, যা জাতীয় ঐক্য জোট নামে পরিচিত, এই নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে এবং পুণরায় ভোটের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে, দেশটি দুইটি শক্তিশালী দেশ ভারত ও চীনের মধ্যে আবদ্ধ এই দেশকে কেন্দ্র করে তাদের নিজস্ব কৌশলগত এজেন্ডা রয়েছে।
বাংলাদেশের সর্বশেষ নির্বাচন একতরফা ও ভোট কারচুপির অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও এতে ফলাফলে কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। এটাও স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশ পরিচালনা করবে এবং গত দশকে হওয়া আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে আরও শক্তিশালী হবে।
১৬ কোটিরও বেশী জনসংখ্যার বাংলাদেশ (পূর্বের পূর্ব পাকিস্তান) একটি জনবহুল মুসলিম রাষ্ট্র যা তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের দ্বারা জাতিগত ও রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার হওয়ার পরে ১৯৭১ সালে যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছিল, যে যুদ্ধে ঢাকার সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী তিরিশ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ভারত এই যুদ্ধে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ের প্রথম দিকে বছরগুলোও রক্তাক্ত ছিল এবং জাতির প্রতিষ্ঠাতা, হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে হত্যার পরে, বহু বছর ধরে সামরিক শাসন ও বিক্ষোভ চলে, যা তার মেয়ের নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রথম জয়ের মাধ্যমে অবসান হয় এবং হাসিনা সরকার গঠন করেন।
সেই সময়ে, দেশের মোট রপ্তানী আয় ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ও মাথাপিছু আয় ছিল ৪০০ মার্কিন ডলার। যার ফলে বাংলাদেশ ‘তলা বিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা পেয়েছিল। হাসিনার নেতৃত্বে জিডিপি এখন ২৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১,৬২০ মার্কিন ডলার। আভ্যন্তরীন নীতি গ্রহণের মাধ্যমে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন তার বড় কৃতিত্ব। তবে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, হাসিনা চরমপন্থী ও ইসলামী মৌলবাদী শক্তির সাথে দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করেছেন। বিএনপি এই ধরনের চরমপন্থী দলগুলোকে সমর্থন করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে, যার ফলে দুই দলের মধ্যে তিক্ত রাজনৈতিক বিভেদ সৃষ্টি হয়।
ফলস্বরূপ, হাসিনার বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদীতা এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর অভিযোগ থাকলেও, বাস্তবতা হলো, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, তুলনামূলকভাবে মানবিক ইসলামী রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের নিরাপত্তায় দক্ষিণ এশিয়া ও মুসলিম বিশ্বের নিরাপত্তা সূচক ধরে রাখার জন্য আওয়ামী লীগ একমাত্র কার্যকর বিকল্প।

হাসিনার বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলি হচ্ছে, তার ঘরোয়া বিষয়সূচি একত্রিত করা এবং শক্তিশালী দুই প্রতিবেশী ভারত ও চীনের সঙ্গে তার দেশের সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখা। ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অবদান রাখলেও, অবৈধ অভিবাসন সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলিরক বিষয় নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক জটিলতা রয়েছে।
বেইজিংয়ের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি, হাসিনা নয়া দিল্লীর সাথেও সহানুভূতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হন। বর্তমানে, চীন বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার এবং শীর্ষ সামরিক সরবরাহকারী। এটি ভারতের সাথে সম্পর্কে প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ শীঘ্রই চীনের কাছ থেকে কেনা সাবমেরিনগুলি পরিচালনা করবে, যা বঙ্গোপসাগরে নৌবহরকে গতিশীল করে তুলবে। বেইজিংয়ের জন্য, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান কৌশলগত কারণে আকর্ষণীয়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ফ্ল্যাগশিপ বেল্ট এবং রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে ঢাকাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নোড হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
কিন্তু, ঋণের ফাঁদে মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের আটকে পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে চীনের প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে হাসিনা এখনও সতর্ক রয়েছেন। নিঃসন্দেহে, নয়াদিল্লির সাথে ঢাকার জন্য সম্পর্ক জটিল এবং সম্প্রতি একটি অঘোষিত ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, পাকিস্তান নয়, ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক প্রতিবেশী হচ্ছে বাংলাদেশ।
ভারতের এমন আচরণ করা উচিত যাতে ঢাকাকে প্রাচ্যের দুই বিকল্পের একটিকে বেছে নিতে না হয়। ভারতকে মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের দেশ যা সংখ্যালঘুদের রক্ষা করে। বর্তমানে তারা ন্যায়সঙ্গত আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধির প্রতীক। চীনের জন্য, দীর্ঘমেয়াদী সুফল পেতে হলে ঢাকার সাথে তাদের সম্পর্ক এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে যাতে, ভারতের উদ্বেগ প্রশমিত হয়ে সব পক্ষের জন্য লাভজনক একটি আঞ্চলিক কাঠামো তৈরী হয়। বর্তমানের চীন-পাকিস্তান-ভারত ত্রিভুজকে বিচ্ছিন্ন করতে সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য এটি হতে পারে আদর্শ সুযোগ। সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ৪:১৮ পিএম says : 0
Our Youth have been destroyed=====Our Education system have been destroyed===Our Government Official's morality have been destroyed =====Our Nations morality have been destroyed---all due to power game----we are living in constant fear------we do not have any voice it has been strangled---what else left---We are muslim=Muslim do not divide but unite like steel wall--hence we are divided into several hundreds group----we don't want BNP''''Awami League--Jamat--No No No Democracy------We want to live in our Country with dignity---without any fear of oppression---there will be not a single poor people in our country---That 's why we fought and Liberated our Country from Barbarian Pakistani----But Alas still we are suffering too Much---Oh Allah release us from their oppression's---Ameen--
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন