শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিএনপি নিজের দোষে হেরেছে : শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:১০ এএম, ১ জানুয়ারি, ২০১৯

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট নিজেদের দোষে নির্বাচনে হেরেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপির নেতৃত্ব না থাকা, প্রধানমন্ত্রী কে হবে তা স্পষ্ট না করা, ড. কামালের মত নির্বাচন অনভিজ্ঞ লোকের দ্বারা পরিচালিত হওয়া, উইনেবল ক্যান্ডিডেটটের মনোনয়ন না দেয়া, ঠিকমত প্রচারণা না চালানো ও নিবন্ধনহীন জামায়াতের ২৫ জন প্রার্থীকে দেয়ার কারণে বিএনপির শোচনীয় পরাজয় হয়েছে।
আর আওয়ামী লীগের জয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিগত দশ বছরে দেশের উন্নয়ন, জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, মহিলা ও তরুণদের প্রত্যাশা পূরণের কারণে আমরা জয়ী হয়েছি। আমাদের জিডিপি ৭ এর উপরে, গ্রামে আধুনিক সুবিধা যেমন- স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, শিক্ষার উন্নয়নে বিনা মূল্যে বই, বৃত্তি দেয়া, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা কওমী মাদরাসার সদনের বৈধতা দেয়া হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকরা সর্বনিম্ন একহার ছয়’শ টাকার স্থানে আট হাজার টাকা বেতন পাচ্ছে। দেশের নানাবিধ উন্নয়নের কারণেই জনগণ আমাদের বিজয়ী করেছে।
গতকাল গণভবনে বিদেশী নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ভারত, নেপাল, জাপান, ওআইসি, কমনওয়েল্থ, বিবিসি, এপি, রয়টার্সের মোট ৪৩ জন সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তারা নব নির্বাচিত হবু প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও ড. গওহর রিজভী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরু এইচ টি ইমাম ব্রিফ করেন এবং এবারের নির্বাচন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সুষ্ঠু হয়েছে বলে জানান।
বিদেশী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। আর যেসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে সেখানে আমাদের দলীয় কর্মীরা নিহত ও আহত হয়েছে। এ নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়েছে কারণ তারা উইনেবল ক্যান্ডিডেটদের প্রার্থী দেয়নি। যেমন ধামরাইতে জিয়াউর রহমান, নারায়ণগঞ্জে তৈমুর আলম খন্দকার, সিলেটে ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে তারা মনোনয়ন দেয়নি।
এছাড়া তাদের পরাজয়ের আরেকটি বড় কারণ তারা জয়লাভ করলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা স্পষ্ট না থাকা। এটা বিশ্বের যেকোন দেশেই ফ্যাক্ট। আর ড. কামাল হোসেনের মত নির্বাচন অনভিজ্ঞ লোক তাদের জোটের প্রধান ছিল যার কারণেও তাদের পরাজয় হয়েছে। কারণ বিএনপির কোন নেতৃত্ব ছিল না। তাদের নেতা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে দন্ডিত হয়ে কারাগারে রয়েছেন, নতুন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শুধু দন্ডিত নয়, পলাতকও। তিনি উল্লেখ করেন, ড. কামাল তার দলের লোক ছিলেন এবং কি কারণে তিনি দল ছেড়ে অন্য একটি দল গঠন করেছেন তা জানেন না। তবে তার নির্বাচন করার কোনর অভিজ্ঞতা নেই। এদিকে জামায়াতের কোন নিবন্ধন নেই। উচ্চ আলাদত তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে। ঐক্যফ্রন্ট এই দলের ২৫ জনকে মনোনয়ন দিয়েছিল।
ক্ষমতাসীন জোটের নিরঙ্কুশ বিজয় ও বিরোধী দলের সচনীয় অবস্থায় গণতন্ত্র বাধার মুখে পড়বে কিনা ভারতীয় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দেখেন বিএনপি নিজের দোষেই হেরেছে। জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের অতীত অপকর্ম যেমন হরতাল, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, গাড়ি পোড়ানোর কারণে জনগণ তাদের প্রত্যাখান করেছে। আর এ রকম হয়। যেমন গত নির্বাচনে ভারতে কংগ্রেসের এমন অবস্থা হয়েছে। এছাড়া বিজেপি একবার মাত্র ২টি আসন পেয়েছিল যেবার রাজীব গান্ধি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিল।
বিরোধী দলের এমন অবস্থায় আবারও রাজনৈতিক সহিংসতা শুরু হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সহিংসতা করা আমাদের বিরোধীদের স্বভাব। দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখবে। বিরোধী দলের নিরাপত্তা থাকবে কিনা এমন আরকে প্রশ্নে তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব। আমরা জয়ী হয়েছি ইতোমধ্যে প্রায় একদিন হয়ে গেছে। কিন্তু বিরোধী দলকে কোন ধরণের নির্যাতন করা হয়নি। কিন্তু আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা খুব একটা ভাল না। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যা হয়েছে তা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। মেয়েদের ধর্ষণ, নেতাকর্মীদের হত্যা করা, ব্যবসা বাণিজ্য দখল করাসহ নানাভাবে আমাদের নির্যাতন করা হয়েছে।
বিবিসির এক নারী সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে ভোটগ্রহণের আগেই ব্যালট বক্স পূর্ণ করা। এ অবস্থায় আপনি কি নির্বাচনকে সচ্ছ মনে করেন কিনা? চট্টগ্রামের একটি কেন্দ্রের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের ভিডিওটি আগের পুরাতন ভিডিও। আর যেখানে সমস্যা হয়েছে নির্বাচন কমিশন তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, স্থগিত করেছে। যেমন বরিশাল সিটি নির্বাচনের স্থগিত কেন্দ্রের কারণে ফলাফল প্রায় এক মাস পড়েছে হয়েছে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সময়মত ভিসা দেয়া হয়নি আল-জাজিরার এক সাংবাদিক প্রশ্নের উত্তরে এইচ টি ইমাম বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নীতিমালা আরপিও এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী যারা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংযুক্ত তারা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হতে পারবে না। তাই এ্যানফ্রেলের পর্যবেক্ষকদের ভিসা দেয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশন এখন অনেক শক্তিশালী। কমনওয়েল্থ এর দেশগুলো কেউ কেউ শতবছর ধরে গণতন্ত্র চর্চা করে। আমরা তো মাত্র শুরু, এর মধ্যে আবার মিলিটারি শাসনও হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে নির্বাচন ব্যবস্থা আরো উন্নত হবে।
তিনি বলেন, ভাল করি আর খারাপ করি তা জনগণ বিচার করবে, যাচাই করবে। উন্নয়নের জন্য দরকার পলিসি আর আদর্শ। যাই হোক আমাদের আদর্শ জনগণের উপর আস্থা। জনগণ ভোট দিলে আছি দিলে নাই। জনগণের উন্নয়নের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন করা হবে। ড্রাগ, সন্ত্রাস, দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি রেখে দেশ পরিচালনা করা হবে।
অনুষ্ঠানের পর দলীয় নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, উপ দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Abul Karim ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ৪:৫৮ এএম says : 0
You took advantages of digital law act and disadvantaged BNP leading to publicity to election.
Total Reply(0)
Nannu chowhan ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১০:১৪ পিএম says : 0
Yes,you can say Dr.kamal is unexperience vote rigging & selective election but he is experienced on people Democratic right also voting rights.....
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন