শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আজ শপথ নতুন এমপিদের বরণে প্রস্তুত জাতীয় সংসদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

অনেকদিন পর আবারো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে সার্বভৌম জাতীয় সংসদ। সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসা নতুন এমপিদের পদচারণায় মুখর হবে সংসদ ভবন ও আশপাশের চত্বর। গত ৩০ ডিসেম্বও ভোট সম্পন্ন হওয়ার পর নতুন এমপিদের বরণ এবং শপথের আয়োজনে গত কয়েকদিনের ব্যস্ততা শেষ করে এনেছে সংসদ সচিবালয়। সব ধরণের প্রস্তুতি শেষে এখন নতুন এমপিদের শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের অপেক্ষায় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ সবাই। এদিকে দুপুর ১২টার সময় জাতীয় সংসদ ভবনের ৯ম তলায় সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা ডাকা হয়েছে। জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে কোনো নির্বাচিত সংসদ সদস্য শপথ না নিলে সেই আসন শূন্য হবে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
এদিকে সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় সংসদ ভবনের নীচতলায় শপথ কক্ষে নতুন এমপিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরইমধ্যে গেজেট জারি করে তা সংসদ সচিবালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে, আজ শপথ নিলেও বর্তমান দশম সংসদ ভেঙ্গে না দিলে ২৮ জানুয়ারি এই সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নবনির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করবেন। নব-নির্বাচিত এমপিদের শপথ অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্য ধরে সব ধরণের প্রস্তুতি গুছিয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংসদ সচিবালয়ের সচিব। স্পিকারের পরামর্শে পুরো আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি জানান, গত মঙ্গলবার স্পিকার রংপুর থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। তার আগমনের আগে এ সংক্রান্ত প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে রাখা হয়েছিল। তিনি আসার পর তার তত্ত্বাবধানে পুরো প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। এর আগে গতকাল দুপুরের আগেই নির্বাচন কমিশন থেকে নাম, ঠিকানাসহ নবনির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশর করে সংসদ সচিবালয়ে পাঠানো হয়। সংসদ নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের তিনদিনের মধ্যে শপথর গ্রহনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকতে হবে। তবে ভোটের কতদিন পর গেজেট হবে, সেবিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে অবহিত না করলে বা শপথ না নিলে সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে। গতকাল নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের পরিচয়পত্র নিবন্ধন সরবরাহ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গতকাল সকাল ১১ টায় সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস শাখায় এ কেন্দ্র খোলা হয়। আজ সকালে নবনিবাচিত এমপিরা সংসদ ভবনের ভিতরে প্রবেশ করে প্রথমে পরিচয় পত্র নিয়ে শপথ কক্ষে প্রবেশ করবেন।
শপথ পড়ানোর বিষয়ে সংবিধানে বলা হয়েছে,‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত হইবার তারিখ হইতে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এই সংবিধানের অধীন এতদুদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা তদুদ্দেশ্যে অনুরূপ ব্যক্তি কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোনো ব্যক্তি যে কোনো কারণে নির্বাচিত সদস্যদের শপথ পাঠ পরিচালনা করিতে ব্যর্থ হইলে বা না করিলে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার উহার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে উক্ত শপথ পাঠ পরিচালনা করিবেন, যেন এই সংবিধানের অধীন তিনিই ইহার জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি’।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ২৯ জানুয়ারি সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিপুলসংখ্যক আসন নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। যদিও আগামী ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। সরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে সংসদ অধিবেশন ডাকার বিষয়ে সংবিধানে বাধ্যবাধকতা আছে।
এ প্রসঙ্গে সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (২)-এর (১) দফায় বলা হয়েছে,সংসদ সদস্যদের যে কোনো সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হইবার ত্রিশ দিনের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য সংসদ আহ্বান করা হইবে। নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নামে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সরকারিভাবে ফল ঘোষণা করা হয়। কাজেই গেজেট প্রকাশের দিন থেকে এক মাসের মধ্যে সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ( নৌকা) ২৫৯, জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) ২০, বিএনপি (ধানের শীষ) ৫, গণফোরাম ২, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ২, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ২, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি ৩, তরিকত ফেডারেশন ১, জাতীয় পার্টি (জেপি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি আসনে জয় লাভ করেছেন। বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা পেয়েছেন ২৬৬টি আসন। লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করে ২২টি আসন পেয়েছে জাতীয় পার্টি। বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট ৭টি আসন এবং অন্যরা ৪টি আসনে জয়লাভ করেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার সুযোগ পায় আওয়ামী লীগ। ওই বছরের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। এর আগে ৯ জানুয়ারি এমপিদের শপথ অনুষ্ঠিত হয়। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও ইতিহাস গড়ে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের রেকর্ড গড়তে চলেছেন। আজ নতুন এমপিদের শপথ গ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন শেখ হাসিনা। এরপর গঠন করা হবে নতুন মন্ত্রিসভা। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, ১০ জানুয়ারির মধ্যে মন্ত্রিসভা গঠিত হতে পারে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ৮ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ করা হয়। তারপরের দিন ৯ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করে নির্বাচিত সদস্যরা। আর প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় ২৯ জানুয়ারি।
প্রথমবারের মতো সংসদে ড. কামালের গণফোরাম
এবারই প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে দুটি আসনে জয়লাভ করেছেন এ দলের প্রার্থীরা। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন এ দলের কোনো নেতা এর আগে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি। নির্বাচিত দুই সদস্য হলেন সিলেট-২ আসন থেকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোকাব্বির খান ও মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। এদের মধ্যে মোকাব্বির খান গণফোরামের দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে নির্বাচন করলেও সুলতান মনসুর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে ১৯৯২ সালে ড. কামাল হোসেন গণফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন। দলটির মহাসচিব সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টু।
নতুন সাজে সাজছে সংসদ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী এমপিদের বরণ করতে নতুন সাজে সাজছে জাতীয় সংসদ ভবন। শপথ গ্রহণের জোর প্রস্তুতি ছাড়াও সংসদ ভবন ধোয়ে মোছে পরিস্কার করা হয়। সংসদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রায় দুই শতাধিক কর্মী শপথ কক্ষ প্রস্তুতসহ সংসদ ভবন সাজানোর কাজ করেন। এদিকে নতুন এমপিদের পরিচয়পত্র প্রদানের জন্যও সংসদ সচিবালয়ের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানা গেছে। জাতীয় সংসদ সচিবালয় ইতোমধ্যেই এমপিদের পরিচত্রপত্র প্রদান ও রেজিস্ট্রেশনের জন্য বুথ স্থাপন করেছেন। আজ শপথের পরপরই তাদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হবে।
প্রথম অধিবেশনের ৯০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে পদ শূন্য
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে কোনো নির্বাচিত সদস্য শপথ না নিলে সেই আসন শূন্য হবে। গতকাল ববুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। বিএনপির নির্বাচিত এমপিরা শপথ না নিলে আইনি প্রক্রিয়া কী হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, গেজেট প্রকাশের তিনদিনের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে নতুন সংসদের অধিবেশন বসবে। তার ৯০ দিনের মধ্যে যদি কেউ শপথ না নেন বা কোনো প্রকাশ রেসপন্স না করেন, তখন সংসদ সচিবালয় থেকেই এই পদটি শূন্য ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, গেজেট প্রকাশ করা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাজ। বাকি সবগুলো সংসদ সচিবালয়ের কাজ। গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর থেকে আমাদের আর কোনো কার্যক্রম থাকে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Mohammed Kowaj Ali khan ৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ৮:৫৪ এএম says : 0
রাজনীতির নামে যে প্রতারণা করিলেন? আল্লাহ তা'আলার দরবারে জবাব দিতে পারিবেননা তাই শফথ নিবেন না। দাবি তুলেন নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নিরবাচন । কলংকিত হইবেন না। জানিবেন প্রতারণা জঘন্য ক্ষতিকর অপরাধ যাহার সাজা আল্লাহ তা'আলা দিবেনই দিবেন। আল্লাহকে ভয় করেন আর প্রত্যেকে প্রত্যেকের জীবনকে করেন স্বার্থক। আপনাদের অন্যায়ের বীরুদ্বে যাহারা কথা বলিবেন না তাহারা আপনাদের আপন নয়। আমি আপনাদের আপন তাই আপনাদের প্রতারণার কারণে আমি খোবই কম্পিত। আপনারা যদি শফথ নেন তবে ধংস হইয়া যাইবেন।। নিজের জন বলেন কাঁন্দাইয়া আর পরের জন বলেন হাসাইয়া। পরকাল স্বরণ করেন আর জীবন করেন স্বার্থক। ইসলাম শান্তি, ইসলাম মুক্তি, ইসলাম শিফা, ইসলাম রাজনীতি,। রাজনীতিতে ইসলাম হইবেন স্বার্থক। সবাই সৎ চিন্তা করেন। Please. INSALLAH. ********&
Total Reply(0)
সৌরভ কুমার দে ৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ৭:১০ পিএম says : 0
জাতিকে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন