বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় হাজারো মানুষ ঘরছাড়া : অবরুদ্ধ গ্রাম

বিচ্ছিন্ন তানোরের কলমা গ্রাম, ডিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন গোদাগাড়ীর গোগ্রাম ইউনিয়নের কুমোরপুর বাজারে আগুন লুটপাট থানায় অভিযোগ দিয়েও মিলছে না সুফল

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

রাজশাহী অঞ্চলে নির্বাচনের পর বিএনপি নেতাকর্মী সমর্থকদের উপর শুরু হয়েছে অন্যরকম নির্যাতন। আতঙ্কে বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ ঘরছাড়া। রাজশাহীর গোদাগাড়ী তানোর মোহনপুর নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সরকারী দলের নেতাকর্মীরা। লুটপাট, ভাঙচুর, জখম, দখল এমনকি গ্রামের মানুষকে জিম্মি করে রাখার মত ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ নিয়ে যাচ্ছে পুলিশের কাছে। তারা বলছে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এলাকার আতঙ্কিত মানুষ বলছে এক তরফা ভোটের পর এবার শুরু হয়েছে এক তরফা হামলা। ভোটের দিন রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ও মোহনপুর নির্বাচনী সংঘর্ষে দুজন নিহত হবার পর ঐ দুটি এলাকার মানুষ রয়েছে গ্রেফতার আতঙ্কে। কখন কার নাম হত্যাকান্ড মামলায় ঢুকিয়ে দেয়া হয় তার ঠিক নেই। এ দুই এলাকার মানুষ এ আতঙ্ক নিয়ে গ্রাম ছাড়া। তানোরের কলমা গ্রামে ধানের শীষের প্রার্থী নৌকার চেয়ে বেশী ভোট পাওয়ায় গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে। গ্রামের পাশ দিয়ে বাস ভুটভুটি অটো চলাচল করতে দেয়া হচ্ছেনা। তানোরের ডিশ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। গভীর নলকূপ বেদখল হয়ে গেছে। বিএনপি সমর্থক বলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বাধা দেয়া হয়েছে। এ গ্রামের মানুষ আতঙ্কে দিন পার করছে। বেশ কজন অভিযোগ করে বলেন ক্যাডররা হুমকি দিয়ে বলছে মন্ত্রী সভা গঠন হয়ে যাক তারপর কি হয় দেখবি। গোদাগাড়ীতে সরকারী দলের নেতাকর্মীরা উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের কুমোরপুর বাজারের পিকাপ ভ্যান যোগে ২০-২৫ জনের একটি গ্রুপ লাঠি সোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাজারের বদর আলী ও টিয়ার ধানের আড়ৎ, বাহাদুরের কাপড়ের দোকান, শাহীন কামালের সার ও কীটনাশক সিনেজেন্টার বিক্রয় কেন্দ্র, আল-আমিনের ঔষুধের দোকান, নিশাতের পানের দোকান ও জুয়েল টেলিকমে প্রথমে ভাঙচুর ও লুটপাট করে যাওয়ার সময় অগ্নিসংযোগ ঘটায়। পরে গোদাগাড়ী দমকল বাহিনীর সদস্যরা আগুন নিভিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু এর আগে দোকানগুলো সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কাপড়ের দোকানদার বাহাদুর বলেন, দোকানে ১৬ লক্ষ টাকার মালামাল ছিল। আর শাহীন কামালের সোয়া ১ লক্ষ টাকার সার ও কিটনাশক লুট হয়ে যায়। বদর আলীর ১০ লক্ষ টাকার ধান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর থেকে এলাকা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করায় দোকানপাট বন্ধ থাকে।
এদিকে পালপুর এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরবাড়ী থেকে পালিয়েছে। মাটিকাটা এলাকার আত্মগোপনকারী মাদক সম্রাট, নির্বাচনের সুযোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বাবু মেম্বার ও র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া নয়ন ডাক্তার এর নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী দেশী অস্ত্র নিয়ে ভোটের দিনের জেরে বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি মেম্বার নজরুর ইসলামের বাড়ী ঘেরাও করে রাখে বাড়ীতে আগুন দিবে বলে হুমকিদেয়। এক পর্যায়ে আতঙ্কিত হয়ে নজরুল মেম্বার হার্ট এ্যাটাক করে মারা যান।
তানোর উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ও তানোর পৌর মেয়র মিজানুর রহমানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চারিয়ে লুটপাট করেছে। তার ডিশ লাইনের সংযোগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটির হাজার হাজার গজ ডিশ লাইনের তার কেটে নিয়ে গেছে। নেটওয়ার্কের অবকাঠামো লুট করেছে। ফলে তানোরের গ্রাহকরা কোন স্যাটেলাইট টিভি দেখতে পারছেন না। এলাকার বিএনপি কর্মী বকুলের বাড়ি ও গভীর নলকূপের বিদ্যুত সংযোগ কেটে ফেলা হয়েছে। সেই কাটা লাইন জোড় দিতে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন আসতে ভয় পাচ্ছে।
নাটোরে নির্বাচনের আগে যেমন বিএনপি নেতাকর্মী সমর্থকরা হুমকিতে ছিলেন এখন তেমনটি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমীন ছবি। আনোয়ার হোসেন আনু নামে বিএনপি সমর্থকদের বাড়ির সামনের পাকা দোকান ঘরটি দখল করে ক্লাব ঘর বানিয়েছে যুবলীগের ছেলেরা। সেখানে এমপি শিমুলের পোস্টার ও ব্যানার টানিয়েছে।
নাটোর থানায় অভিযোগ করে কোন সুফল মেলেনি। এসব অপকর্মের বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বলছেন নির্বাচন পরবর্তীতে কিছু এালাকায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। এর সাথে আওয়ামী লীগের লোক জড়িত নয়। তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানীর বক্তব্য হলো এসব ঘটনা দলের ভেতরের অতি উৎসাহী কিছু মানুষের কাজ। দলের প্রকৃত নেতাকর্মী এসবের সাথে জড়িত নন।
রাজশাহী-১ আসন (গোদাগাড়ী-তানোর) বিএনপি প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক বলেন ভোটের আগে প্রশাসনিক হয়রানী আর ভোটের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বেপরোয়া হামলা লুটপাট, অগ্নিসংযোগ চলছেই। গ্রাম ছাড়া শত শত মানুষ, নির্যাতিতরা পুলিশের কাছে গিয়েও কোন সহায়তা পাচ্ছেনা। অন্যদিকে পুলিশ বলছে তারা সর্তক রয়েছে। গোদাগাড়ীতে অগ্নিসংযোগ লুটপাটের ঘটনার পর রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন ও পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার সাথে জড়িত তিন দুবৃত্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন