বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মীয়করণ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে ভারতকে

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এটা এক অভূতপূর্ব বিষয়। তা সত্তে¡ও এই নির্বাচন যে ব্যতিক্রমী তার আরো কিছু বৈশিষ্ট্য আছে।
এবারই প্রথম ক্ষমতাসীন দলের পৃষ্ঠপোষকতার অধীনে থেকে নির্বাচন কমিশন একটি নির্বাচন করেছে এবং তাতে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করার কারণে বড় বিরোধী দলগুলো ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছিল। বিরোধীদের মতে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারই হলো একমাত্র উপায়।
এবারই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা। অক্টোবরে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে বিরোধী দলগুলোর ফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মতো ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে সুখ্যাতি আছে এমন কিছু বিরোধী নেতা এবার খুব বেশি সিরিয়াস ছিলেন। তারা সম্ভবত বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এখানে বলে রাখা ভালো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার দলের ধর্মনিরপেক্ষতাকে হালকা করে ফেলেছেন। কারণ, তিনি নির্বাচনের আগে প্রকাশ্যে ধর্মীয় গ্রুপ হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কওমি মাদরাসা ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দেয়ার যে মূল দাবি তাদের তা তিনি মেনে নিয়েছেন।
প্রথমবারের মতো, বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাস। যখন পর্যবেক্ষকরা শেখ হাসিনার ক্ষমতায় ফেরাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে পারেন, তখন উপরে বর্ণিত প্রথমবারে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো আঞ্চলিক পরিস্থিতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ক্লু হিসেবে দেখা যেতে পারে।
সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচন বিস্তৃত গ্রহণযোগ্যতা থেকে পিছিয়ে আছে, যেহেতু শুধু বিরোধী দলগুলোই নয়, কিন্তু একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একই সঙ্গে তারা হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার রিপোর্টের তদন্ত দাবি করেছে। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ৭টি আসনে বিজয়ী হয়েছে বিরোধীরা এবং এসব আসনে যারা বিজয়ী হয়েছেন তারা শপথ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি বিজয় পেয়েছে। কিছু কিছু আসনে তারা বিস্ময়কর ব্যবধানে জয় পেয়েছে, যার ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ওইসব এলাকা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রতিশ্রুত ভোটের ঘাঁটি বলে পরিচিত। যে দেশে অতীতে বার বার সামরিক হস্তক্ষেপ হয়েছে তেমন একটি দেশের স্থিতিশীল গণতন্ত্রে এসব ফ্যাক্টর হতে পারে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
সব রাজনৈতিক দল যখন ধর্মীয় দলগুলোর দ্বারস্থ হয়েছে তখন একটি ইঙ্গিত মেলে, আওয়ামী লীগ ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা সত্তে¡ও বাংলাদেশের সামাজিক আবহ শক্তিশালী ইসলামী পরিচয়ের দিকেই অব্যাহতভাবে ধাবিত। ধর্মনিরপেক্ষতায় ক্ষয় ধরায় এতে শুধু সংখ্যালঘুরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এমন নয়, একই সঙ্গে উজ্জীবিত ইসলামপন্থিরা তারুণদের মধ্যে তাদের ভাবধারা ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপক সুযোগ খুঁজবে। এসব বিষয় ভারতের জন্য নিরাপত্তায় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। যদিও শেখ হাসিনা সন্ত্রাস মোকাবিলায় বেশ সক্রিয় তবু হেফাজতে ইসলামের মতো গ্রুপের সঙ্গে তার যুক্ত হওয়ায় উদ্বেগ সৃষ্টি করে। কারণ, ওই গ্রুপটি এখন তাদের বাকি দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
উল্লসিত চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এতে একটি ইঙ্গিত সুস্পষ্ট। তাহলো, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক গতি নিয়ে পরিবর্তন হচ্ছে। অবকাঠামোগত প্রকল্প বাদেও চীন অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধি করছে। এর মধ্যে দুটি মিং-ক্লাসের সাবমেরিন রয়েছে। এতে বোঝা যায়, বাণিজ্যিক বিবেচনার বাইরেও ঢাকায় স্বার্থ আছে বেইজিংয়ের। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ঘেঁষা বঙ্গোপসাগরের পাড়ে বাংলাদেশের অবস্থান। এসব এলাকা নিয়ে চীনের বিরোধ রয়েছে। তাছাড়া কুনমিংয়ে তারা আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়াকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দহরম মহরমকে শুধুই শুভ হিসেবে নেয়া যেতে পারে না। এ ছাড়া চীনের রুট ব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করতে পারে পাকিস্তানের আইএসআই- এমন আশঙ্কাও এড়িয়ে দেয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয় ভারতের জন্য শুভ সংবাদ। সহচরের জোরালো প্রবণতা দাবি রাখে বাস্তবভিত্তিক বিবেচনা ও নীতি মূল্যায়নের। নাগরিক সমাজে অস্থিরতার অপছায়া, ইসলামী কট্টরপন্থি ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিকট এই প্রতিবেশী দেশটিতে ইস্যু হতে পারে, যা ভারত অবজ্ঞা করার সামর্থ্য রাখে না।
(দ্য ইকোনমিক টাইমসে প্রকাশিত অভিজিৎ চক্রবর্তীর লেখার সংক্ষিপ্ত অনুবাদ। লেখক ভারতের মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ের সাবেক বিশেষ সচিব)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (18)
Shahed Parvez ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
আর নিজ দেশ ভারতে এখন যে উগ্র ধর্মীয় কোলসে যেভাবে নির্ঝাতন চালাচ্ছে বিজেপি সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে বাংলাদেশকে !
Total Reply(0)
Sujon Mahmud ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
ভারত,চীন আর আমেরিকার মাথা ব্যাথার কারনই বলে দিচ্ছে,এদেশের রাজনীতিতে ইসলাম পন্থীদের উত্থান হচ্ছে! আলহামদুলিল্লাহ্। সুতরাং, আশাহত হবার কোন কারন নাই,পরবর্তী প্রজন্মও নাহয় একটি সম্রাজ্যবাদমুক্ত দেশ পেতেই পারে।
Total Reply(0)
Monir Monir ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
অার ভারতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা উগ্র হিন্দুদের দখলে। তাই বাংলাদেশ কে সতর্ক থাকতে হবে ভারতের রাজনীতিতে উগ্রবাদী হিন্দুদের ধর্মীয়করন নিয়ে।
Total Reply(0)
Sohrab Ali ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
INDIA BJP. ALL ARE HINDU .SO BANGLADESHI MUSLIM'S ALSO CAN MAKE THE ON CHOICE GOVERMENT
Total Reply(0)
Sulaiman Numan ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৭ এএম says : 0
উগ্র সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের অন্য ধর্ম সহ্য হবেনা এটাই স্বাভাবিক।
Total Reply(0)
Ashraful Islam ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৭ এএম says : 0
ভারত ধর্মীয়করন হলে দোষ নাই। বাংলাদেশ হলে দোষ। ভারতে তে উগ্র হিন্দুবাদ ক্ষমতায় ।
Total Reply(0)
Md Mohit Hossain ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৭ এএম says : 0
ভারত কেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলতে চায়
Total Reply(0)
Nilamber Sen ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৭ এএম says : 0
বিজেপি ধর্মীয়করণ দিয়েই ক্ষমতায় এসেছে এবং এর প্রমান তারা দিয়েছে, বাংলাদেশে ধর্মীয়করণ হলে আপনাদের সমস্যা কি ?
Total Reply(0)
Borhan Uddin Borhan ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
ভারত সব সময় শুধু ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র করে।
Total Reply(0)
Abdul Gaffar Soygori ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
এদেশের মানুষ ইসলামপ্রিয়
Total Reply(0)
দূঃখ ভরা জিবন ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
ভারত আর কি চায়
Total Reply(0)
Jakir Hossain Shirazi Joy ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
তার মানে সবাইকে হিন্দু বানাতে চায়।
Total Reply(0)
Sardar Bahauddin ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
Eta hoe jabe
Total Reply(0)
Zakaria Hossain ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
চালুনি বলে, সুই তোর পাছায় ছিদ্র!
Total Reply(0)
Emranul Haque Rakib ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
এটাই হচ্ছে আমাদের মাজা ভাঙ্গা পররাষ্ট্রনীতি ।যেখানে খোদ ভারতের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বিজেপির মত সাম্প্রদায়িক শক্তি সেখানে ওরা আমাদের ধর্মীয় রাজনীতির জ্ঞান দেয় !!! ২ দল ২ টার চামাচামি করে একটা ভারতের আরেকটা আমেরিকার ।
Total Reply(0)
Aulad Hossain ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
Varoter chinta na kore apnader nijer chinta koren
Total Reply(0)
Md. Abdus Sobur ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১১:১৫ এএম says : 0
Real Islamic Party Chai. 2 no. na. Imander.
Total Reply(0)
Dominic Percell ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:২২ পিএম says : 0
Hinduism is controlling India. But they are concerned about the religious influence of Bangladeshi politics. Incredible. Bangladeshi people will be able to be the friend of India only if it's people abandon Islam.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন