বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

উটের দুধে রাইকা সম্প্রদায়ের ভাগ্য পরিবর্তন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ৮:২৫ পিএম

রাজস্থানের রাইকা সম্প্রদায়ের গত কয়েক শতক ধরে রাজস্থানে উট পালন করছে৷ তাদের বিশ্বাস যে, ঈশ্বর রাইকা সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছেন শুধু উট পালন করার জন্য৷ তবে সময় বদলেছে৷ রাইকাদের শত বছরের উট পালার প্রথাগত জীবনযাপন এখন হুমকির মুখে৷ লাভজনক না হওয়ায় উট পালার উপর থেকে আগ্রহ অনেকের কমে যাচ্ছে৷ তবে তাদের আশার আলো দেখাচ্ছেন এক জার্মান৷ উটের নানামুখী ব্যবহারের মাধ্যমে রাইকাদের জন্য অর্থ আয়ের নানাপথ তৈরি করে দিয়েছেন তিনি৷
কৃষিকাজে এখন মেশিন ব্যবহার করে অনেককিছু করা যায়, যা করতে আগে উটের দরকার হতো৷ ফলে উটের প্রয়োজনীয়তা দ্রুত কমছে৷ গত ত্রিশ বছরে রাজস্থানে উটের বংশবৃদ্ধিও নাটকীয়ভাবে কমেছে৷ ভানওয়ারলাল নামে এক রাইকা জানান, ‘তার উটের পালও ছোট হয়ে গেছে৷ তার বাবার কাছে এর দ্বিগুন উট ছিল৷ তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ঐতিহ্য বংশানুক্রমে চলছে৷ কিন্তু যদি আয় না থাকে, তাহলে আমরা এই ঐতিহ্য কিভাবে ধরে রাখবো? তরুণদের জীবিকার আশায় গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যেতে হচ্ছে৷ আমার সন্তানরা স্কুলে যায়৷ আর সেজন্য আমার প্রতিমাসে অনেক টাকা খরচ হয়৷ যদি আমরা উট পেলে আর জীবিকা নির্বাহ করতে না পারি, তাহলে আমরা টিকে থাকবো কিভাবে?’
জার্মান নাগরিক ইলসা-ক্যোঁহলার-রোলেফসন একজন জাতিবিদ এবং পশুচিকিৎসক৷ হানোয়ান্ত সিং রাঠোরকে সঙ্গে নিয়ে তিনি একটি সংগঠন তৈরি করেছেন, যেটি উট পালকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে৷ রাইকা এবং তাদের উটের জন্য এটি একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ৷ তিনি বলেন, ‘উট পশুচারণ নানাভাবে গাছ সংরক্ষণে সহায়তা করে৷ অনেক গাছ শুধুমাত্র জাবর কাটা পশুর সহায়তায় অঙ্কুরিত হতে পারে৷ এটা একটা প্রাকৃতিক চক্র: মানুষ, উট, বায়োটপ এবং মানসম্পন্ন খাবার উৎপাদন৷’
গত কয়েকশ’ বছর ধরে উট প্রজনন রাইকাদের উপার্জনের মূল উৎস৷ নারী উটগুলোকে তারা প্রজননের জন্য রেখে দেন৷ উটের দুধ খুবই স্বাস্থ্যকর৷ উটপালক এবং তাদের পরিবারের খাদ্য তালিকার অন্যতম উপাদান এটি৷ তারা আগে বলতো, উটের দুধ বিক্রি অনেকটা নিজের সন্তান বিক্রির মতো ব্যাপার৷ কিন্তু সেই অবস্থান থেকেও সরে এসেছেন তারা৷ এখন ভানওয়ারলাল রাইকা প্রতিদিন সকালে উটের দুধ পাশের একটি দুধ বিক্রির খামারে নিয়ে যান৷ তিন বছর আগে এলপিপিএস এই খামার চালু করেছে৷ তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম৷ উট বিক্রি করে ফেলি৷ কিন্তু তখনই এই সংগঠন উটের দুধ বিক্রি শুরু করে৷ ফলে আমি আবার উটের পাল ফিরিয়ে আনি৷ এখন উটের দুধ বিক্রির মাধ্যমে আমি আমার পরিবারের অন্নসংস্থান করতে পারছি৷ এখন এই সংগঠন যদি কাল থেকে আবার দুধ বিক্রি বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমার উটের পাল আবার বিক্রি করে দিতে হবে৷’
উটের দুধ বিক্রির এই খামার তোলারাম রাইকার ভাগ্যও বদলে দিয়েছে৷ যখন তিনি ছোট ছিলেন, তখন তাকে তার পরিবার শহরে পাঠিয়েছিল উপার্জন করতে৷ তিনি পনের বছর বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, হোটেল এবং চায়ের দোকানে কাজ করেছেন৷ তোলারাম রাইকা বলেন, ‘আমি শহরে অনেক বছর ধরে কাজ করেছি৷ কিন্তু সেখানে এখানকার তুলনায় কম রোজগার করতাম৷ আমি এই খামারে দুই মাস আগে কাজ শুরু করেছি৷ আমি উটের দুধ সম্পর্কে অনেক কিছু জানি৷ আমি এখানে কাজ করতে পেরে অনেক সন্তুষ্ট৷ আমি আশা করছি, খামারটা ভালোভাবে এগিয়ে যাবে৷’
উটের খাদ্য তালিকা বেশ বিস্তৃত৷ ৩৬ রকমের উদ্ভিদ খায় সেগুলো৷ এসব উদ্ভিদের মধ্যে ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদও আছে৷ ফলে সেগুলোর দুধে অনেক রকম স্বাস্থ্যকর উপাদান আছে বলে বিশ্বাস করা হয়৷ অবিক্রিত দুধ দিয়ে সাবান তৈরি করা হয়৷ এটি এমন এক পণ্য যা ভালো বিক্রি হয়৷ আর রাইকাদের জন্য এটা আয়ের আরেক উৎস৷ আসলে নতুন কিছু উৎপাদনে রাইকাদের আগ্রহেরও কমতি নেই৷ তারা উটের লোম দিয়ে কাপড় তৈরি করছেন৷ এমনকি উটের গোবর দিয়ে কাগজও তৈরি হচ্ছে৷ সূত্র: ডয়েচ ভ্যালে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Noella ২২ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
I am sure this paragraph has touched all the internet visitors, its really really fastidious post on building up new weblog. Greetings! I've been following your blog for some time now and finally got the courage to go ahead and give you a shout out from Dallas Texas! Just wanted to mention keep up the great work! I have been browsing online more than 2 hours today, yet I never found any interesting article like yours. It is pretty worth enough for me. Personally, if all webmasters and bloggers made good content as you did, the net will be a lot more useful than ever before. http://foxnews.co.uk/
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন