নিউমোনিয়া ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের একটি প্রদাহজণিত রোগ। সংক্রমণ এবং এর পরবর্তী প্রদাহ হতে এ রোগ হয়। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের প্রদাহের কারণে নিউমোনিয়া হয়। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। শীতে শিশু ও বয়স্কদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ এই নিউমোনিয়া। তবে এ রোগ বছরব্যাপী হতে পারে।
কারণ কি?
নিউমোনিয়া সাধারণত জীবাণুঘটিত রোগ, যেমন: ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এমনকি বিভিন্ন ছোট-বড় অখ্যাত জীবুণু দ্বারাও হতে পারে।
সাধারণত শীতে ভাইরাস হতে নিউমোনিয়া হয়। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম অর্থাৎ যারা শিশু ও বয়স্ক তাদের ভাইরাসজণিত জটিলতার সুযোগসন্ধানী ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে এবং নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়। তবে বেশীরভাগ নিউমোনিয়াই ব্যাকটেরিয়াঘটিত এবং কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাসঘটিত।
লক্ষণ : প্রচন্ড জ¦র, কাশি, সর্দি এবং শ্বাসতন্ত্রের কষ্ট হলো নিউমোনিয়ার প্রধান লক্ষণ। বুকে ব্যথাসহ শ^াসকষ্ট।
দুই মাসের নিচের শিশুর শ^াস-প্রশ^াসের হার মিনিটে ৬০ বারের বেশি, এক বছরের নিচে ৫০ বার বা তার বেশি এবং এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুর মিনিটে ৪০ বার বা তার বেশী শ^াস-প্রশ^াস হলে তাকে শ^াসকষ্ট বলা হয়। আমরা তাকে নিউমোনিয়ার কারণেই হচ্ছে বলে মনে করি।
জ¦রের সংগে বাচ্চাদের শ^াসকষ্ট থাকে, বুক বা পাঁজর দেবে যাওয়া, বাচ্চা টক্সিক বা নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
শ^াসকষ্টের কারণে শিশু খেলাধুলা করে না, খেতে পারে না এমনকি ঘুমাতেও পারে না।
রোগ জটিলতা : নিউমোনিয়া জন্মগত হৃদরোগ, সিষ্টিক ক্যান্সারের জটিলতার কারণে হলে সংগে শারীরিক অন্যতম সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফুসফুসে পানি, পুঁজ বা একেবারে চুপসে যেতে পারে। ফুসফুসে ঘা হয়ে ক্ষত হতে পারে।
রক্তপ্রবাহে জীবাণুর প্রদাহ অর্থাৎ সারাদেহে জীবাণুর প্রদাহ, আরডিএস, মেনিনজাইটিস হতে পারে। তীব্র শ^াসকষ্ট হতে পারে।
কাদের ঝুঁকি বেশী : বাচ্চা ও বয়স্ক ব্যক্তি যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। তবে অন্যদেরও হতে পারে। যাদের অন্য কোনো কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। যারা ধুমপান করেন তারাও আক্রান্ত হাতে পারেন। যারা স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ ও ক্যান্সারের ঔষধ সেবন করে তাদের নিউমোনিয়া হতে পারে।
যারা বহুদিন যাবৎ রোগে ভুগছে যেমন: হৃদরোগ, এইডস, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের রোগ ইত্যাদি থাকলে নিউমোনিয়া হতে পারে।
চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা : সাধারণ নিউমোনিয়ার চিকিৎসা বাড়িতেও করা যায়। এ জন্য সঠিক ঔষধের পাশাপাশি এ সময় প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে। এ সময় পুরোপুরি বিশ্রাম নিতে হবে।
নাকে সর্দি জমার কারণে শ^াসকষ্ট হতে পারে, একজন্য বাচ্চাকে লবণ পানির দ্রবণ দিয়ে খাবার ও ঘুমের আগে নাক পরিষ্কার করতে হবে। এ সময় কুসুম গরম পানি, লাল চা-বা লবণ পানির গরম মিশ্রন খাওয়া যেতে পারে। নাকে নরসল বা নরমাল স্যালাইন দিতে হবে। বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। নিউমোনিয়ার রোগীকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
অতিরিক্ত শ^াসকষ্ট হলে নেবুলাইজার সহযোগে সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণ (নরমল বা সলো) দেওয়া খেতে পারে।
নিউমোনিয়া হলে বুকে তেল ও কালো বাম ব্যবহার অনুচিত। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি হলো উপসর্গ ভিত্তিক। তাই সঠিক উপসর্গ অনুযায়ী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা নিলে নিউমোনিয়া হতে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব।
কখন হাসপাতালে নেওয়া জরুরী : অতিরিক্ত শ^াসকষ্ট হলে। নিঃশ^াস গ্রহণের সময় নাক ফুলে উঠলে ও পেট ভেতরে ঢুকে গেলে। শ^াষকষ্টের সময় কাঁপনী দিয়ে জ¦র হলে। মুখ-ঠোঁটের চারপাশ নীল হয়ে গেলে।
প্রতিরোধ : নিউমোনিয়া প্রতিরোধযোগ্য রোগ। প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। একটু সচেতন হলেই প্রতিরোধ সম্ভব। হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে নাক পরিষ্কার করার পর, খাবার আগে ও পরে, টয়লেটে যাওয়ার পর। ধুমপান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যতটা সম্ভব ধুমপান হতে নিজেকে দুরে রাখতে হবে। হাচি-কাশির সময় টিস্যু বা রুমার ব্যবহার করতে হবে। ঝুঁকি পূর্ণ ব্যক্তি, বিশেষ করে ৫ বছরের নীচে বা ৬৫ বছরের ওপরে বয়সীদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার টিকা নিতে হবে। শিশুর জন্মের পর ইপিআই ভ্যাকসিনগুলো সঠিক সময়ে নিতে হবে।
শিশুকে চুলা, মশার কয়েল ও সিগারেটের ধোঁয়া থেকে দূরে রাখতে হবে। ব্রংকাইটিস, ডায়াবেটিস, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি রোগের সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে।
সাধারণ ঠান্ডা হলেও খেয়াল রাখতে হবে।
স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, বিশ্রাম নিতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
৮৯, নিমতলী সিটি কর্পোরেশন মার্কেট
চানখারপুল, ঢাকা-১০০০
মোবাইল: ০১৭১৭-৪৬১ ৪৫০
০১৯১২-৭৯২ ৮৯৪
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন