শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

নারীর গৃহে অবস্থান পরাধীনতা নয়

মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ফাহাদ | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

শেষ

গৃহে অবস্থান নারীর ধর্মীয় অধিকার
কুরআন মজীদে নারীদেরকে গৃহাভ্যন্তরে অবস্থানের আদেশ করা হয়েছে। ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহেলী যুগের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। (সূরা আহযাব (৩৩) : ৩৩)। এই আয়াতে গৃহকে নারীর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। এটি ছাড়া সমগ্র কুরআন মজীদে আর মাত্র দুটি আয়াত এমন আছে, যেখানে গৃহের সম্বন্ধ নারীর দিকে করা হয়েছে। গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, নারীর দিকে গৃহের এই সম্বন্ধ তার মালিকানা বোঝানোর জন্য নয়; বরং তা নারীর জন্য সর্বদা গৃহে অবস্থান আবশ্যক হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। অতএব বোঝা গেল, নারীর প্রধান কর্মক্ষেত্র ও তার সকল কর্মব্যস্ততা হবে গৃহের অভ্যন্তরে। ঘরোয়া ও সাংসারিক কাজকর্মই হবে তার প্রধান কাজ। আর পুরুষের কর্মক্ষেত্র ও কর্মব্যস্ততা হবে গৃহের বাইরে। নারী-পুরুষ প্রত্যেকের সমাজ হবে আলাদা। নারীর বিশেষ সমাজ শুধু নারীর সঙ্গে; গৃহের অভ্যন্তরে। আর পুরুষের বিশেষ সমাজ হবে শুধু পুরুষের সঙ্গে ও গৃহের বাইরে। তো ইসলামে যেহেতু নারীকে ঘরে অবস্থানের বিধান দেওয়া হয়েছে তাই সমাজের কর্তব্য, তাকে এই বিধান পালনের সুযোগ দেওয়া। চাপ প্রয়োগ করে বা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে নারীকে এই বিধান পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এটা নারীর ধর্মীয় অধিকার। তাছাড়া সৃষ্টি ও উদ্দেশ্য বিচারেও গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান নারীর অধিকার। কেননা আল্লাহ তাআলা নারীকে সৃষ্টি করেছেন দুর্বল করে। তাকে সৃৃষ্টি করেছেন আদমের পাজর থেকে। ফলে সে আদমের (পুরুষের) একটি অংশবিশেষ। নারীকে মুখোমুখি হতে হয় ঋতুচক্রের, ধারণ করতে হয় গর্ভ, সহ্য করতে হয় প্রসব বেদনা, স্তন্যদান ও আনুষঙ্গিক দায়িত্ব। সর্বোপরি তাকে পালন করতে হয় ভবিষ্যত প্রজন্মের লালন-পালনের গুরুভার। আর এ কথা তো দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, যে নারী অফিস-আদালত, কল-কারখানায় কাজ করে তার পক্ষে এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব নয়। কেননা সে তো সর্বদা ব্যস্ত থাকে তার কর্মক্ষেত্রের নানা কাজে। অফিসের বিভিন্ন দায়িত্বে তাকে সময় দিতে হয়। ফলে ঘরে তার সময় দেওয়া, সন্তানদের দেখাশোনা, খোঁজখবর নেওয়া দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং সৃষ্টি-উদ্দেশ্য এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিচারেও ঘরে অবস্থানের সুযোগ নারীর প্রাপ্য। এটা তার মানবিক অধিকার। বিশেষত যখন বর্তমান সমাজে নারীর নিরাপত্তা সর্বোচ্চ ঝুঁকির সম্মুখীন। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ সর্বত্রই যখন নারী অনিরাপদ। তার ইজ্জত-সতিত্ব, জীবন-প্রাণ যখন প্রতি মুহূর্তে চরম হুমকির সম্মুখীন তখন নারীর জন্য ঘরের নিরাপত্তা বলয় ছেড়ে নিজেকে নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি করা, নিজের সতীত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে পদে পদে উত্যক্ততা, ধর্ষণের শিকার হওয়ার কোনো যুক্তি হতে পারে না। অথচ দুঃখজনক বাস্তবতা হল, প্রগতির দাবিদার এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও নারীবাদী একটি গোষ্ঠি মিথ্যা আশ্বাস ও প্রলোভন দিয়ে নারীকে আজ ঘরের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের হীন স্বার্থে তারা নারীকে ও নারীর রূপ-সৌন্দর্যকে ব্যবসার পণ্যে পরিণত করছে। তারা নারীকে বোঝাচ্ছে যে, ঘরের কোণে পড়ে থাকায় কোনো স্বাধীনতা নেই। স্বামীর অনুগত থাকায় কোনো সম্মান নেই। প্রকৃত সম্মান কেবল বাইরের জীবনে। তাই পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও উপার্জন করতে হবে। কমপক্ষে নিজের প্রয়োজন পূরণের মতো উপার্জন-উৎস তার থাকতে হবে। তবেই সে হবে প্রকৃত সুখী, প্রকৃত স্বাধীন। তারা দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে আনে পশ্চিমা সভ্যতাকে। যেখানে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বাজার-শপিংমলসহ সর্বত্র নারীরা কাজ করে চলেছে। আর অবলা নারীও প্রলুব্ধ হয়ে নির্বোধের মতোই পশ্চিমাদের অন্ধ অনুকরণে মেতে উঠেছে। প্রগতিশীল হওয়ার তাগিদে সে ঘর থেকে বের হয়ে গেছে। পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে অফিস-আদালতের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘরের চার দেয়ালে আবদ্ধ থাকাকে পরাধীনতা মনে করতে শুরু করেছে। স্বামীর অনুগত হওয়াকে অসম্মান মনে করছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক উপলব্ধি ও জ্ঞান দান করুন। আমীন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mahmudul ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৭ পিএম says : 0
খুবই সুন্দর লিখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ। আপনাকে মোবারকবাদ জানাই। আহ! আজকালের নারীরা যারা বেপদায় চলে তারা যদি এই লেখাটা একটু পড়তো!!! একটু হলেও নিজেকে সংশোধন করতো। বুদ্ধিজীবি নামের কাফের,জাহান্নামিরা নারীদের সঠিক অধিকার থেকে দুরে রেখে পথভ্রষ্ট করছে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন