শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভূমি মন্ত্রণালয়কে টপ ফাইভে নিতে চাই

২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ভূমি কর্মকর্তা কর্মচারীরা সম্পত্তির হিসাব দেবেন সাংবাদিকদের ভূমিমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

‘২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন ভূমি অফিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব দাখিলের সিদ্ধান্ত দিলাম। দুর্নীতিরোধে আমি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করবো। ভূমি প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদানের বিষয়টি এ মন্ত্রণালয়ের সবার জন্য একটি মেসেজ। ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপরের দিকে দুর্নীতি কমলেও মাঠপর্যায়ে হয়রানি-দুর্নীতিরোধ একটি চ্যালেঞ্জ। এরজন্য ভূমি অফিসগুলোতে সিসিটিভি, ভয়েস রেকর্ডার স্থাপনসহ দুর্নীতিবাজদের ভয় ধরিয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা বা ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর’ গ্রহণ করা হবে। সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, দক্ষতার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে যারা টিকতে পারবে না তাদের এখনই কেটে পড়া উচিৎ’।
উপরোক্ত চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি উক্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়ে বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পত্তির হিসাব দাখিলের বিষয়ে আজ রোববার অফিস খোলার দিন মন্ত্রণালয় থেকে অফিস আদেশ জারি করা হবে। দুর্নীতি-অনিয়ম ও হয়রানিরোধে শিগগিরই দেশের সর্বত্র ভূমি অফিসে মন্ত্রী নিজেই সারপ্রাইজ ভিজিট করবেন বলে জানান।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়কে ক্রমেই টপফাইভে নিয়ে যাওয়া আমার টার্গেট। ভূমি ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন বা ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পিত বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। জনগণকে হয়রানিমুক্ত সেবাদানই আমার লক্ষ্য। আমি সবার, তাই দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্যই আমার দরজা খোলা থাকবে। জনগণের মধ্যথেকে কেউ প্রশ্ন করলে আমি জবাবদিহি করতে বাধ্য। প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর যে আস্থা রেখেছেন তার সম্মান রাখবোই। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবো, দুর্নীতি আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। বিগত পাঁচ বছর ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনে সততা, স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও সুনামের সাথে কাজ করেছি। তাই ব্যর্থতা নিয়ে ফিরে যেতে চাই না। সফল হতে চাই। যেদিন দুর্নীতি আমকে স্পর্শ করবে সেদিনই হবে আমার শেষ দিন। কাজেই ভূমি মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতিবাজদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সাথে সাথে ভূমি গুরুত্বও আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। আগে ভূমি মন্ত্রণালয়কে ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হিসেবে মনে করা হতো। এখন সকল মন্ত্রণালয়কে আসতে হয় ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছেই। দেশের সীমিত ভূ-সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার আমরা নিশ্চিত করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের জনগণের কাছে আমার জবাবদিহিতা নিশ্চিত থাকবে। আমি সেবক থাকতে চাই।
চট্টগ্রামের অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই গ্রহণ করেছেন। তার নির্দেশনায় বৃহত্তর চট্টগ্রামে বৈপ্লবিক উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। উপমহাদেশে প্রথম টানেল হতে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশেই। বে-টার্মিনাল, চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে চট্টগ্রামের উন্নয়নের কাজে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করলে সমন্বয় নিশ্চিত হবে। অপর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, কর্ণফুলীর দুইপাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে, দখলকারিদের কোন ছাড় দেয়া হবে না।
সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, সাবেক সভাপতি আলী আব্বাস, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, সিনিয়র সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, শহীদ উল আলম, পঙ্কজ দস্তিদার, দৈনিক ইনকিলাব ব্যুরো প্রধান ও বিশেষ সংবাদদাতা শফিউল আলম, এজাজ মাহমুদ, চৌধুরী ফরিদ, শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, তপন চক্রবর্তী, একরামুল হক বুলবুল, আলমগীর সবুজ, আলমগীর অপু প্রমুখ।
মন্ত্রিত্ব লাভ প্রসঙ্গে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানান, আমি কখনোই তদবিরে বিশ্বাস করি না। আল্লাহতায়ালা কপালে যা লিখে রেখেছেন তাই হবে। তিনবার সংসদ সদস্য হয়েছি। অনেকের পীড়াপীড়ি সত্তে¡ও নির্বাচনের পর ঢাকায় দৌড়াইনি। বরং এলাকার মানুষের সঙ্গে ভালো সময় কাটিয়েছি। এমপি হিসেবে শপথ গ্রহণের দিন ঢাকায় যাই। শপথ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। রোববার শেষ কর্মদিবসে অফিস করি। এ সময় ‘অভিনন্দন’ জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আমাকে ফোন করেন। তখন বলি, আপনি তো আমাকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরই অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তখন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্যার সুখবর, আপনি পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি সততার কোনো বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত চট্টগ্রামের বনেদি রাজনীতিক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর বড় ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ গত ৩০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন