বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মেঘনায় জেগে ওঠা চরে নতুন সম্ভাবনা

| প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০২ এএম

উজানে বাঁধ নির্মান এবং পানি প্রত্যাহারের কারণে দেশের অধিকাংশ নদনদী নাব্যতা সংকটে পড়েছে। পদ্মা-যমুনাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বড় নদীগুলোর অনেক শাখা নদীর অস্তিত্ব ইতিমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে। তিস্তাসহ দেশের প্রধান প্রধান সেচ প্রকল্পগুলো পানির অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে। নদীপ্রধান বাংলাদেশের নদনদীর এই অবস্থা দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা তথা টেকসই উন্নয়নের জন্য বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে। পক্ষান্তরে সমুদ্রোপকুলবর্তী জেলাগুলোর নদী অববাহিকায়ও জেগে উঠছে অসংখ্য চর। এসব চরের কোনো কোনোটিতে ইতিমধ্যে চাষাবাদ ও জনবসতিও শুরু হয়েছে। গত দুই দশক ধরেই বঙ্গোপসাগরের উপকুলবর্তি নোয়াখালী, হাতিয়া, ভোলা ও স›দ্বীপের নদী মোহনা থেকে শুরু করে বঙ্গোপসাগরের বিশাল এলাকা জুড়ে নতুন ভ‚মি জেগে ওঠার সংবাদ ছাপা হচ্ছে। কোনো কোনো মিডিয়া এই সম্ভাবনাময় নতুন ভ‚মিকে আরেক বাংলাদেশ বলে অভিহিত করেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিল্পায়ন, নগরায়ণ, অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার একর কৃষিজমি অকৃষিখাতে চলে যাচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় দেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা যখন বড় ধরনের হুমকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঠিক তখন দেশের উপকুলীয় অঞ্চলে জেগে ওঠা নতুন চর এবং উদীয়মান ডুবো চরগুলো নতুন সম্ভাবনার জানান দিচ্ছে।
মেঘনায় জেগে ওঠা অসংখ্য নতুন চরের ভ’প্রকৃতি এবং আগামীতে জেগে উঠতে পারে এমন গঠনশীল চরগুলো নিয়ে গতকাল ইনকিলাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বর্ষা মওসুমে উত্তাল সমুদ্রের জোয়ারে ভেসে আসা বিপুল পরিমান পলিমাটি শুস্ক মওসুমে নদীবক্ষে জমে এসব নতুন চরের সৃষ্টি করছে। প্রথমে ডুবোচর হিসেবে থাকলেও ক্রমশ এসব চর সবুজের সমারোহ নিয়ে অস্তিত্বশীল হয়ে এক সময় চাষাবাদ ও জনবসতিতে পরিনত হচ্ছে। হাতিয়া দ্বীপের চারদিকে এমন অন্তত ৪০টি ছোট বড় চরের কথা জানা যায়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি নতুন চরে ইতিমধ্যেই হাজার হাজার মানুষের বসতি এবং উর্ব্বর জমিতে বিভিন্ন রকম সব্জি ও ফসলের উৎপাদন নতুন আশা জাগাচ্ছে। গত এক দশকে জেগে ওঠা ৩০-৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে সেখানকার ইউনিয়ন ও প্রশাসনিক এলাকার আয়তন বেড়ে চলেছে। আগামী এক দশকে হাতিয়া দ্বীপের মানচিত্র বদলে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছে নিঝুম দ্বীপের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রায় ৮০-৯০ কিলোমিটার এলাকায় পানির গভীরতা খুবই কম এবং এখানে অসংখ্য ডুবোচর বিদ্যমান। আগামী কয়েক দশকের মধ্যে এই বিস্তীর্ণ এলাকায় এক বা একাধিক জেলার সমান আয়তনের শত শত বর্গ কিলোমিটার নতুন ভ‚মি জেগে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভাঙ্গাগড়া নদীর চিরন্তন খেলা। নদীচরের জীবন কাহিনী নিয়ে এ দেশে অনেক উপন্যাস, সাহিত্য ও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। নদীতে নতুন জেগে ওঠা চরের জমি ও ফসলের দখল নিতে জোতদার ও লাঠিয়াল বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনা এখনো ঘটে। কিন্তু নতুন বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনার চরগুলোর ভাগ্য আর কোনো জোতদার বা লাঠিয়াল বাহিনীর হাতে ছেড়ে দেয়ার সুযোগ নেই। বহু যুগের কাঙ্খিত ডেল্টা প্লান বা অববাহিকা ভিত্তিক নদী ও ভ‚মি ব্যবস্থাপনার বিশাল কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। ডেল্টা প্লানের আওতায় বঙ্গোপসাগরের নদী অববাহিকায় জেগে ওঠা চর ও ডুবোচরগুলোকে প্রাকৃতিক সুরক্ষাবেষ্টিত সমৃদ্ধ জনপদে পরিনত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সমুদ্র থেকে মাটি তুলে ভ‚মি বাড়িয়ে, বেস্টনি তৈরী করে দেশের ভ‚-প্রাকৃতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদাহরণ বিশ্বে বিরল নয়। আমাদের প্রস্তাবিত ডেল্টা পরিকল্পনায় অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার নেদারল্যান্ডের ভ‚প্রকৃতি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নিচু হওয়ার পরও উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তারা দেশকে ছবির মত সাজিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। শত শত কোটি ডলার খরচ করে আবুধাবি, সিঙ্গাপুর, চীনসহ বিভিন্ন দেশ সমুদ্রে নতুন দ্বীপ সৃষ্টি করে নিজেদের ভ‚-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুবিধা হচ্ছে, বঙ্গোপসাগর প্রাকৃতিকভাবেই লাখ লাখ টন পলিমাটি ঠেলে দিয়ে আমাদের উপকুলভাগকে বিস্তৃত করে তুলছে। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নতুন জেগে ওঠা চরগুলোতে পরিকল্পিত ভ‚মি উন্নয়ন, সবুজ বেষ্টনি ও বনায়ন এবং কৃষিখাত নিয়ে যুগোপযোগী নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা। বঙ্গোপসাগরের বøু ইকোনমির সাথে সঙ্গতি রেখে উপকুলীয় চর ও জনপদের নিরাপত্তা ও উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন