শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শ্রমিক আন্দোলনের নেপথ্যে জড়িতদের খুঁজছে বিভিন্ন সংস্থা

এখনো হয়রানির অভিযোগ শ্রমিকদের

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

সরকার ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়ন ও বেতন-বৈষম্য নিরসনের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের নেপথ্যে জড়িতদের খুঁজছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে জড়িতদের চিহ্নিত করতে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন সংস্থার একাধিক টিম। তবে সাধারণ শ্রমিক ও শ্রমিক নেতারা অন্যায়ভাবে যেন হয়রানির শিকার না হয় সে দিকে সর্তক দৃষ্টি দেয়ার জন্য শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের। এরই মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের দাবির মুখে তাদের মজুরি গ্রেডে সমন্বয় করেছে সরকার। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মালিক-শ্রমিক ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। সূত্র জানায়, সম্প্র্রতি সময়ে ঢাকা ও সাভারসহ বিভিন্ন এলাকায় বেতন বৈষম্য নিয়ে শ্রমিকরা যে আন্দোলন করেছেন, তার জন্য অনেক শ্রমিক এখনো হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেকেই মামলার ভয়ে রয়েছেন। অনেককেই কারখানা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাভারের একাধিক পোশাক শ্রমিক টেলিফোনে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা বেতন ভাড়ানো এবং আমাদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছি। অনেক কারখানা শ্রমিকের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মামলা করা হয়েছে। অনেককে চাকরি থেকেও বের করে দেয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তারা আরো বলেন, আমরা চাকরি করি বেতনের জন্য। আমাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। যারা অন্যায় করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। তবে সাধারণ শ্রমিকদের যেন হয়রানি না করা হয় সে জন্য দাবি জানান তারা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, তৈরী পোশাক খাতে যেন কোনো অস্থিতিশীলতা দেখা না দেয়, তা কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। জেলা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা রাজধানী ছাড়াও সাভার ও গাজীপুরসহ যেসব এলাকায় তৈরী পোশাক শিল্প রয়েছে, সেসব এলাকায় নজরদারি করছেন। শ্রমিকদের উসকে দেয়ার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করা এবং তৈরী পোশাক শিল্পের পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতেই একাধিক সংস্থা সমন্বয় করে কাজ করছে বলে ওই সূত্র জানায়।
ওই সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি সময়ে বেতন-বৈষম্য নিরসনের দাবিতে তৈরী পোশাক শিল্পের শ্রমিক আন্দোলনের সময় অনেক সাধারণ শ্রমিক নানাভাবে নির্যাতনে শিকার হয়েছেন। অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় শিকার হয়েছেন এবং অনেকের নামে মামলাও করা হয়েছে। শ্রমিকরা যেন হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে জোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল আল মামুন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা, সাভার ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে তৈরী পোশাক শিল্প স্বাভাবিক থাকলেও জেলা পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সমন্বয় করে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। পোশাক শ্রমিকরা যাতে তাদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা পান সে জন্য সরকার কাজ করছে। তবে নেপথ্যে থেকে শ্রমিকদের উসকে দিয়ে ওই খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলতে একাধিক চক্র কাজ করছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তৈরী পোশাক শিল্পকে অস্থিতিশীল করতে যে সব চক্র কাজ করছে, তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তবে সাধারণ শ্রমিকরা যাতে হয়রানির শিকার বা অন্যায়ভাবে চাকরি না হারায় সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা কাজ করছি।
সম্প্রতি সময়ে আন্দোলনকে ঘিরে অন্যায়ভাবে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই মামলা করা হয়েছে। নিরীহ কাউকে হয়রানি করার সুযোগ নেই। অন্যায্যভাবে কারো চাকরি চলে যাওয়ারও সুযোগ নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গত ২৫ নভেম্বর পোশাক শিল্পের জন্য নতুন মজুরি কাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারি করে শ্রম মন্ত্রণালয়। গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নতুন মজুরি কাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের বেশ কিছু কারখানার শ্রমিক। বিজিএমইএ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের চেষ্টায় নির্বাচনের আগে আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়। তবে গত ৬ জানুয়ারি রোববার ঢাকার উত্তরার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামেন। পরের দিনগুলোতে তা রাজধানীর মিরপুর, শেওড়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গত ৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার সংঘর্ষের সময় নিহত হন সাভারের উলাইলের আনলিমা টেক্সটাইলের শ্রমিক সুমন মিয়া। শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে আশুলিয়া ও সাভার এলাকায় বিজিবি মোতায়েনও করা হয়। এরপর সরকার কমিটি গঠন করে এবং শ্রমিকদের মজুরিও বাড়ানো হয়। যা নিয়ে এখনো শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরে এক অনুষ্ঠানে পোশাক শ্রমিকদের এ বিক্ষোভের ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভে কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে বা গোষ্ঠীগতভাবে ইন্ধন দিয়ে থাকে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরই মধ্যে আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা (ডিবি) সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছি, এটা খতিয়ে দেখার জন্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
MD Sulayman ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
বাংলাদেশের পুলিশ সব খানেই সব আন্দোলনেই নাশকতা খুজে পায় আর দমন করার ভয় দেখায়৷ শ্রমিক আন্দোলন বা ছাত্র আন্দোলন না বিরোধি দলের আন্দোলন
Total Reply(0)
Unique Prince ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে যারা নাশকতা করে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিবেন???
Total Reply(0)
Md Akter Hossain ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
আন্দোলন মানেই নাশকতা?
Total Reply(0)
Emtiaj Ahmed Sohel ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
গার্মেন্টগুলো তাদের মুনাফার 5 % মজুরি দিলেও শ্রমিকদের জীবন মান অনেক ভালো চলতো ,নূন্যতম বেতন 12-13 হাজার হওয়া দরকার অন্যথায় শ্রমিকদের চাকরির পাশাপাশি চুরি ডাকাতি করা লাগবে নয়তো সংসার চলবে না //
Total Reply(0)
Mohammad Jahangir Mollah ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম says : 0
এটা বেতন বাড়ানোর নামে প্রতারণা। এত অল্প কয় শত করে টাকা বেতন বাড়ানো এটা কেমন হলো? মনে হচ্ছে দাসত্ব রক্ত দিয়ে অর্জন হচ্ছে দেশে প্রধান আয়ের উৎস্য।
Total Reply(0)
ahmed ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৮ এএম says : 0
গার্মেন্টস মালিকরা আজ এমপি, মন্ত্রী হয়েছে । এই ক্ষমতায় শ্রমিকদের শোষণ নীতি শুরু করেছে । শ্রমিকদের প্রাপ্য বেতন যা কয়েক মাস আগেই সরকার, বিজিএমই ও শ্রমিক পক্ষ মিলে ঠিক করা হয়েছিল, যা শ্রম মন্ত্রণায় অনুমোদন করেছিল । আজ কেন সেই বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করার জন্য আন্দোলন করতে হবে ? গার্মেন্টস মালিকরা যদি বেতন না বাড়ায় , একযোগে চাকুরী ছেড়ে গ্রামে যেয়ে কৃষি কাজ, মৎস্য চাষ, ছাগল পালন, কুটীর শিল্পের কাজ করেন । এতে অনেক ভালো থাকবেন । তারপর দেখবেন গার্মেন্টস মালিকরা কারখানা কিভাবে চালায় !!
Total Reply(0)
Zulfiqar Ahmed ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৮ এএম says : 0
এটা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, রুটি-রুজির আন্দোলন বল প্রয়েগে দমন করা স্বাধীন দেশে কাম্য নয়!
Total Reply(0)
Tanvir ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৮ এএম says : 0
উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত দূর্নীতি আর দূর্নীতি। এই নীতির খেসারত দিতে হয় সাধারণ জনগণের। একটা পোশাক শ্রমিক কত টাকা বেতন পায়। কিন্তু সে সেই টাকায় ঢাকা ভালভাবে থাকতে পারে না। তার উপর সে যদি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম হয় তাহলে তো মরার উপর খারার ঘা। একজন এম.পি মন্ত্রী শ্রমিকদের রক্ত ঘাম করার টাকা দিয়ে টয়োটা চড়বে আর সেই শ্রমিক খালি পায়ে হাঁটবে এটা কেমন বিচার। পোশাক উৎপাদন থেকে শুরু করে রপ্তানি করা পর্যন্ত প্রতিটি সেক্টরে দূর্নীতি। সবক্ষেত্রে দূর্নীতি রোধ করতে হবে। তাহলে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে আসবে। মন্ত্রী, এম.পি, আমলা, চাপরাশি, পিয়ন সবাই দূর্নীতির সাথে জড়িত। দেখার কেউ নেই।
Total Reply(0)
Sengupta ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৯ এএম says : 0
শ্রমিকদের সাথে বিরূপ আচরণ মালিকপক্ষ সবসময় করে। আর যখন বেতন বাড়ানো হয় ঠিক তখনই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন মালিক পক্ষ। কাজের চাপ বাড়িয়েদিয়ে শ্রমিকদের চাকুিরচূত করার ষড়যন্ত্র চলছে। গ্রেডিং কমিয়ে দিয়ে বেতন কম দেওয়ার চেষ্টা চলছে।নতুন করে তালিকা করে শ্রমিকদেরকে ছাটাই করা হচ্ছে। বেআইনিভাবে মালিকপক্ষ বেতন দিচ্ছে না শ্রমিকদের। এমতবস্থায় একটা সুষ্ঠু সমাধানের প্রয়োজন।
Total Reply(0)
Md.Al- Mamun ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৯ এএম says : 0
বেতন বাড়ানো হয়েছে ঠিক অশুভংকরের ফাকির মতো! শুধু হেল্পার অপাটার ছাড়া আর কেউ লাভবান হয় নি।তাই এদের ইন্ধন দেয়ার জন্য স্টাফ রাই যতেষ্ট। পোশাক শ্রমিক কি শুধু হেলপার অপাটার? এদেরকে যারা পরিচালনা (সুপার ভাইজার -লাইন চিপ এভাবে আরো অনেক আছে) করে তারা কি পোশাক শ্রমিক না? বেতন বাড়ল বেসিক কুমালো কি হাস্যকর ব্যাপার!!
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:০০ এএম says : 0
পুলিশ জনগণের বন্ধু !!!!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন