বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

গজনী অবকাশ কেন্দ্রে বাড়ছে ভিড়

ঝিনাইগাতী (শেরপুর ) থেকে এস কে সাত্তার | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

এবার শীতের শুরুতেই উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গজনী অবকাশ কেন্দ্র পিকনিক স্পটে। শেরপুরের সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতী গারো পাহাড়ের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি গজনী অবকাশ পিকনিক স্পট। বছর জুড়ে ভ্রমণ পিপাসুদের পদভারে থাকছে মুখরিত। শীত কালেতো তিল ধারণের ঠাঁয় থাকে না। তারপরও বলতে গেলে বছরের বারো মাসই দর্শনার্থীদের পদচারণায় অনেক বেশী মুখরিত হয়ে উঠছে অবকাশ পিকনিক স্পট। ক্রমাগত বাড়ছে দর্শনার্থীদের ভীড়। ভারত- বাংলাদেশ সীমান্তের অতি নিকটে এ অবকাশ পিকনিক স্পট গারো পাহাড়ের ঠিক মধ্যস্থলে হওয়ায় চারপাশে উঁচু নিচু পাহাড় টিলা, ঝর্ণা আর সবুজের সমারোহ দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য ভ্রমণ-পিপাসু সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভীড় জমাচ্ছে।

বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, ভটভটি, টেম্পুতে তো আসছেই কেউবা রিক্সাযোগে ও ছুটে আসছে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য্যে আকুল করা অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করতে। গজনী অবকাশ পিকনিক স্পটে সাইট ভিউ টাওয়ার, ড্রাগন, ঝুলন্ত ব্রিজ, বিশাল লেক, ময়ূরপঙ্খী নাও, পাহাড়, টিলা, ঝরনা, পদ্মসিঁড়ি, মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, শিশু পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা আরও কত কিছু দেখতে এখন প্রতিদিনই থাকছে উপচেপড়া ভিড়। সেই সাথে পিকনিক স্পটের আশে পাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানীদেরও চলছে জমজমাট বিকিকিনি। ভ্রাম্যমাণ দোকানীদের দোকানে মাটির তৈরী তৈজসপত্র, বেতের তৈরি জিনিসপত্র ও বাঁশ-কাঠের তৈরী চুরি, কানের দুল, আয়না, কলম, কাঠের তৈরী বাচ্চাদের ব্যাট সহ কিসের চাহিদা নেই এখানে ! ভ্রমণপিপাসুরা এখানে এসে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্র্য্যে বিমোহিত হবার পাশাপাশি ব্যতিক্রমী জিনিসপত্র ক্রয় করে সাথে করে নিয়ে যেতে ভূল করছেন না।

প্রাকৃতিক শাল গজারী বনের পাশাপাশি সৃজিত বিভিন্ন প্রজাতির সবুজ অরণ্যে ঘেরা গারো পাহাড় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে ভ্রমণপিপাসু প্রকৃতিপ্রেমীদের। গারো পাহাড়ের বুক চিড়ে আঁকাবাঁকা বন্ধুর পথ পাহাড়ি অঞ্চলের এ প্রান্ত দিয়ে অন্য প্রান্তে চলে গেছে। গোটা গারো পাহাড়জুড়ে হরেক রং এর লতা-পাতা ও ঘন সবুজ বৃক্ষরাজী দেখে যে কারো প্রাণ জুড়িয়ে যায় মূহুর্তেই। দিগন্ত প্রসারিত মেঘমালার সারি যেন এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে এসে মিলে গেছে।

এখানকার পাহাড়গুলো ছোট ও মাঝারী হলেও সীমান্তের ওপারে মেঘালয়ের পাহাড় অনেক বড়। যা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ওÍ সুন্দরভাবে দেখা যায়। অত্যন্ত মনোরম দৃশ্য আর মনমূগ্ধকর পরিবেশে গড়ে উঠেছে গারো পাহাড়ের ঠিক মধ্য ভাগে গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র। যেন সর্বক্ষণ ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকে আর ডাকে। গারো পাহাড়ের ঠিক মধ্যভাগে অতি প্রাচীনতম এক বিশাল বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে তৎকালীন সংসদ সদস্য মরহুম. ডাঃ সেরাজুল হক ও জেলা প্রশাসকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে উঠে এই মনমূগ্ধকর ‘অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র’। যেখানে রয়েছে আকর্ষনীয় আঁকাবাঁকা পদ্মসিঁড়ি, লেকের মাঝে কৃত্রিম দ্বীপ। আকাশচুম্বী সাইটভিউ টাওয়ার। যেখানে উঠে মাত্র ৫ টাকায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে দেখা যায় ভারতের মনোরম প্রকৃতিক দৃশ্য ও। শান বাঁধানো সেই ঐতিহাসিক বিশাল বটবৃক্ষ, লেকের পানির ধারেই শোভা পাচ্ছে শিলা মৎস্য কুমারীর প্রতিকৃতি, লেকের ওপর সুদৃশ্য দ্বিতল রেস্তোরা, রয়েছে প্যাডেল বোট, হাঁস নৌকা,আকর্ষনীয় ঘাটসিল রোলের ওপর নির্মিত দোলখাওয়া ব্রিজ, টানেল পাতালপুরীসহ আরো কতকিছু।

তাছাড়াও রয়েছে শিশুপার্ক, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ, অর্কিট হাউস, মিনি চিড়িয়াখানা, বিভিন্ন জীব-জন্তুু-জানুয়ারের প্রতিকৃতিও স্থাপন করা হয়েছে। জলপ্রপাত, কৃত্রিম ঝরণা, রেইনবো ব্রিজতো আছেই। শীত মওসুমতো বটেই বলতে গেলে বারো মাসই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অগণিত ভ্রমণপিপাসুদের আগমন ঘটছে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য্যমন্ডিত অবকাশ পিকনিক স্পটে ভ্রমণের অভিঞ্জতা সঞ্চয় করতে ও বনভোজনে। এখানে গারো-কোঁচ, বানাই ইত্যাদি উপজাতীয়দের চাষাবাদ, তাঁত ও কুটির শিল্প, ভাষা, সাহিত্য- সংস্কৃতি, হাসি- কান্না সহ জীবনধারা অত্যন্ত আকর্ষনীয় এবং যুগযুগ ধরে মনে রাখার মত বৈকি। বিশেষ করে শহরের ইট-পাথরে বন্দিজীবন থেকে মাত্র ক’ঘন্টার জন্য হলেও প্রকৃতির টানে যে কেউ হারিয়ে যেতে পারেন আকর্ষণীয় অবকাশ পিকনিক স্পটে হাফছেড়ে বাঁচতে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, ঝিনাইগাতীর সবচে বড় সম্পদই হচ্ছে অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র। যাকে কেন্দ্র করেই ঝিনাইগাতী হয়েছে দেশ-বিদেশে পরিচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন