শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

দুঙ্গার ব্রাজিলে আস্থা নেই পেলের

প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : বিশাল হোটেল কক্ষে জানালার পাশে রাখা আছে একটা টেবিল। টেবিলের পাশেই জানালা। সেখানে বসে জানালা দিয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে দৃষ্টি হারিয়ে যায় দিগন্তে। ঠিক এমনই এক হোটেল কক্ষের জানালার ধারে বসে দৃষ্টিকে সেই দিগন্তে নিক্ষেপ করেছেন ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। আসলে তিনি উঁকি দিয়েছেন অতীতের জানালায়। যে জানালা দিয়ে তাকালে চোখে ভাসে শুধুই সোনালী অতীত। যার বর্তমানটা শুধু হতাশা দিয়েই মোড়ানো। বর্তমানে ফিরে আসতে তাই তাঁর এত ভয়, এত শঙ্কা।
২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনালে স্বাগতিকদের অসহায় আত্মসমর্পণের চিত্রটা এখনো ফুটবলপ্রেমীদের মনে থাকার কথা। আর ব্রাজিল সমর্থক হলে তো কথায় নেই। যে ম্যাচে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল ব্রাজিল। এর পরের বছরের ব্যর্থতার গল্পটা আরো নাজুক। কোপা আমেরিকায় শেষ চারেই উঠতে ব্যর্ধ হয়েছিল ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। কোয়ার্টার ফাইনালে প্যারাগুয়ের কাছে থামতে টাইব্রেকারের ফাঁদে পড়ে। ব্রাজিল ফুটবলে সেই ক্ষুধাতুর ক্ষিপ্রতাও যেন এখন দূর অতীত। তাহলে কি বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে পরিচিতি ঐতিহ্যবাহী হলুদ জার্সিধারীরা হঠাৎ পথ হারিয়েছে? ঠিক এমনটিই মনে করেন ব্রাজিলের ফুটবল কিংবদন্তি পেলে। ইএসপিএন এফসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজ দেশের ফুটবলের চরম এই দৈনতার কথা তুলে ধরেন তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ী এই ফুটবল তারকা। পার্ক এভিনিউয়ের হোটেল লবিতে বসে মনের জানালা খুলে দিয়ে বলেন ফুটবলের নানা দিক নিয়ে। নিজ দলের প্রসঙ্গ আসতেই পেলে বলেন, ‘এসব নিয়ে কথা বলতে আমার দুঃখ হয়। ম্যাচটি (জার্মানি কাছে ৭-১ গোলে হার) দেখার পর আমি কেঁদেছিলাম এবং এটা শুধুমাত্র স্কোরের কারণে নয়। কেঁদেছিলাম কারণ আমি জানি না ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের সেই আনন্দের কি হয়েছেছিল।’
বিশ্বকাপ ও কোপার সেই সব ব্যর্থতা এখন অতীত। চলতি বছরেই কড়া নাড়ছে আরো দুটি বড় ফুটবল আসর। নিজ দেশে অনুষ্ঠেও অলিম্পিক এবং যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় কোপা আমেরিকার শতবর্ষ উপলক্ষে বিশেষ আসর। নেইমাররা কি পারবেন নিজেদের অতীত ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে? পেলে কিন্তু তেমনটা মনে করেন না, ‘আসন্ন গ্রীষ্মে অলিম্পিক ও কোপা আমেরিকাÑআমরা বিশ্বকে দেখাতে পারি ব্রাজিল কিভাবে ফুটবল খেলে। কিন্তু এটা সহজ হবে না। আমার ভয় হয় আমরা আমাদের পথ হারিয়েছি।’ এছাড়া ব্রাজিল ফুটবলে আগের সেই সৌন্দর্য নেই বলেও মনে করেন পেলে। এমনকি তাঁর মাপকাঠিতে নিজ দেশের চেয়ে দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশ এগিয়েও গেছে বলে মনে করেন তিনি, ‘ব্রাজিলের ফুটবলে কোনো সৌন্দর্য নেই। দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনা, চিলি এবং ইকুয়েডরের মতো দলগুলো এখন ব্রাজিলের চেয়ে সুন্দর ফুটবল খেলে এবং আপনারা তা গত দুই কোপা আমেরিকার আসরেই দেখেছেন। আমরা প্যারাগুয়ের কাছে পেনাল্টিতে হেরেছিলাম।’
এছাড়া ৭৫ বছর বয়সী নিজের অতীতকে তুলে ধরেন দুঃখ ভরে। সেটা শুধুমাত্র সেই আর এই দলের কৌশলগত পার্থক্য তুলে ধরতে, ‘আমি, গারসন, টোস্টাও, রিভেলিনো সবাই ১০ নম্বর খেলোয়াড় ছিলাম। কিন্তু মারিও জাগালো এমন একটা ফরমেশনে খেলিয়েছিলেন, যেন আমাদের সবাইকে একসঙ্গে খেলানো যায়। ২০০২ সালে রিভালদো, রোনালদিনহো ও রোনালদোর যেমন আলাদা একটা ঝলক ছিল।’ এই প্রসঙ্গ টেনেই তিনি এক হাত নেন বর্তমান কোচ কার্লোস দুঙ্কার। দলের বর্তমান এই দুরাবস্থার জন্য দুঙ্গাকেই দায়ী করেছেন তিনি। দলে সেরা খেলোয়াড়দের ঠিকমত ব্যবহার না করতে পারার জন্য দোষ চাপান কোচের ঘাড়ে,‘কিন্তু আজ আমাদের একজন কোচ আছে, যে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের খেলোয়াড়দের বিষয়টি তোয়াক্কাই করে না। নেইমার একা সবকিছু করতে পারবে না। সেটা আপনারা গত বিশ্বকাপে দেখেছেন, যখন সে জার্মানির বিপক্ষে খেলতে পারল না।’
এবারের কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল দলে থাকবেন না নেইমার। ফুটবলে নিজেদের ‘একমাত্র দুঃখ’কে ভোলানোর সংকল্পে অলিম্পিককে বেছে নিয়েছেন ব্রাজিল অধিনায়ক। পেলেও বার্সা তারকার মতকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে দুঙ্গার ২৩ সদস্যের দলে তাকে যথেষ্ট সাপোর্ট দেওয়ার মত খেলোয়াড় নেই বলে মনে করেন পেলে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন