শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এসএসসি, দাখিল ও সমমানের ফল প্রকাশ - ধারাবাহিক সাফল্য

প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৫১ এএম, ১২ মে, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : ২০১৬ সালের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় ধারাবাহিক সাফল্য অব্যাহত রয়েছে। প্রকাশিত ফলাফলে পাসের হার বাড়লেও কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। একদিকে কমেছে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, অন্যদিকে বেড়েছে শূন্য পাস (একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি) করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। সার্বিকভাবে এ বছর পাসের হার ৮৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। গতবছর এই পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। পাসের হার বাড়লেও এবার কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৭৬১ জন শিক্ষার্থী, যা গত বছর ছিল এক লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন। পাসের হারের দিক দিয়ে গতবছরের মতো এবারও শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা গতবছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি। তবে বিগত বছরগুলোতে প্রকাশিত ফলাফলে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের পাসের হার শীর্ষে থাকলেও এবার কমেছে এই বোর্ডের পাসের হার। পাসের হারের দিক দিয়ে এই বোর্ড ষষ্ঠ অবস্থানে। এর আগের পরীক্ষাগুলোতে ফলাফলের ভিত্তিতে সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা হলেও এবার তার ব্যতিক্রম হয়েছে। শীর্ষ স্থান অর্জন করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনৈতিক এবং অসৎ পন্থা অবলম্বনের কারণে গতবছরই তা বাতিল করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এর ফলে এইচএসসি ও অষ্টম শ্রেণির ফলাফলে সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা হয়নি। তবে প্রথমবারের মতো এটি এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে কার্যকর হলো। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, উত্তীর্ণের সংখ্যা ও জিপিএ-৫-এর সংখ্যায় ছেলেরা এগিয়ে থাকলেও পাসের হারের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। ছেলেদের পাসের হার ৮৮ দশমিক ২০ শতাংশ এবং মেয়েদের ৮৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৭ হাজার ৭২৭ জন ছেলে এবং ৫২ হাজার ৩৪ জন মেয়ে।
সার্বিক ফলাফলে একদিকে যেমন বেড়েছে পাশের হার, অন্যদিকে কমেছে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবং বেড়েছে শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। এ বছর শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চার হাজার ৭৩৪টি, যা গতবছর ছিল পাঁচ হাজার ৯৫টি। শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে ৩৬১টি। আবার শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৩টি, যা গতবছর ছিল ৪৭টি। শতভাগ পাস করা এবং শূন্য পাসের প্রতিষ্ঠান দুটিই সবচেয়ে বেশি মাদরাসা বোর্ডে। এই বোর্ড থেকে এবার শতভাগ পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই হাজার ১৩৪টি এবং শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠান ৩৭টি। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম সিলেট শিক্ষা বোর্ডে। এই বোর্ড থেকে শতভাগ পাস করেছে ৬২টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের কোনো সংখ্যা নেই।
রেওয়াজ অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফল প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এ বছর তিন দিন আগেই প্রকাশ করা হলো এসএসএসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফল দিতে পারায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল (বুধবার) সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ফলাফলে অসন্তুষ্ট নই, কিন্তু আমরা আরও ভালো চাই। আমাদের ছেলেমেয়েরা যত ভালো করবে আমরা ততই উৎসাহিত হব। আমি অসন্তুষ্ট এ কথা মোটেই বলব না। যারা পাস করেছেন তাদের অভিনন্দন-শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। পরীক্ষায় যারা পাস করতে পারেনি তাদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষায় পাস-ফেল করা অনেক সময় নানা বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। আমরা আশা করব ভবিষ্যতে তারা ভালো প্রস্তুতি নিয়ে ভালো ফল করবে। আমরা খুশি আছি, কিন্তু আমরা অনেক বেশি খুশি হতে চাই। সবাই যেন ভালো করতে পারে সেই চেষ্টাই আমরা করে যাচ্ছি।
গতকাল দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এসএসসি, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষার ফলাফল একযোগে প্রকাশিত হয়েছে। এবছর প্রকাশিত ফলাফলে বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিতা বজায় রয়েছে।
আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি, মাদরাসা বোর্ডের দাখিল ও কারিগরি বোর্ডের সমানের পরীক্ষা এবার অংশগ্রহণ করে ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২০১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ জন। ১০টি বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় বেড়েছে এক দশমিক ২৫ শতাংশ। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৭৬১ জন। গতবছরের চেয়ে এবার কমেছে দুই হাজার ১৪০ জন।
সাধারণ শিক্ষা বোর্ড : আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ২৮৪ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৩ জন। আটটি সাধারণ বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৮৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৬ হাজার ৭৬৮ জন। গতবারের চেয়ে এবার বেড়েছে তিন হাজার ১৩৮ জন। সার্বিক ফলাফলের মতো আটটি সাধারণ বোর্ডের ফলাফলেও গতবারের মতো এবারও শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। পাসের হারে সবার চেয়ে নিচে রয়েছে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।
মাদরাসা বোর্ড : মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় এবছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৬ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে দুই লাখ ১৭ হাজার ৩১৪ জন। এই বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৮ দশমিক ২২ শতাংশ। যা গতবছর ছিল ৯০ দশমিক ২০ শতাংশ। সার্বিকভাবে পাসের দিক দিয়ে এই বোর্ডের অবস্থান ষষ্ঠ। এই বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে পাঁচ হাজার ৮৯৫ জন। যা গতবছরের তুলনায় পাঁচ হাজার ৪৪৩ জন কম।
কারিগরি বোর্ড : কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এ বছর অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৯৮ হাজার ৫৮১ জন। যা গতবছরের তুলনায় ১১ হাজার ৭০৮ জন কম। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৮১ হাজার ৯২৮ জন। এই বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ১১ শতাংশ। যা গতবছর ছিল ৮৩ দশমিক ০১ শতাংশ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সাত হাজার ৯৭ জন।
বিজ্ঞান বিভাগের ফল ভালো : বিষয়ভিত্তিক দিক দিয়ে এবছর আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এই বিভাগে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। যদিও গতবছর এই বিভাগে আরও ভালো ফল ছিল। এবার তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ। এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। মানবিক বিভাগে ৮৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
এর আগে সকাল ১০টায় সকল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সাথে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পরীক্ষার ফলাফল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা ভালোভাবে লেখাপড়া করুক এটা আমি চাই। আমরা এখন লেখাপড়ার অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি। ফেল করার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও ফেল করবে কেন? যারা এবার ফেল করেছে তাদের বলব, ভালোভাবে মনযোগ দিয়ে পড়ালেখা করতে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তাদেরও সচেতন হতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, মেধা বৃত্তি, উপবৃত্তির হার বাড়িয়ে দিয়েছি। আমরা যে পরিমাণ উপবৃত্তি দিচ্ছি, বিশ্বের আর কোনো দেশ তা দেয় কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু আমরা এটা দিচ্ছি যাতে অভিভাবকদের ওপর কোনো ধরনের চাপ তৈরি না হয়। আজকে যারা শিক্ষার্থী তারাই ভবিষ্যতের কর্ণধার। শিক্ষিত জাতি ছাড়া কোনো জাতি উন্নত হতে পারে না, অগ্রসর হতে পারে না। এ জন্য শিক্ষার ওপর সরকার এতটা গুরুত্ব দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। আমাদের দেশও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে পারে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছি। শুধু লেখাপড়া নয়, আমরা ছাত্রদের কর্মসংস্থানের সুযোগও করে দিচ্ছি। এ জন্য আমরা কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। অন্যান্য সাধারণ শিক্ষায় কর্মসংস্থানে সময় লাগে। কিন্তু কারিগরি শিক্ষায় সময় কম লাগে।’ প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা শিক্ষাকে এমন করতে চাই যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। শিক্ষকদেরও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করছি যাতে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Asma ১২ মে, ২০১৬, ৯:২৩ এএম says : 1
Sokol ke ovinondon
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন