একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী রেশ কাটতে না কাটতে শুরু হয়েছে উপজেলা নির্বাচনী উত্তাপ। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। এ বিষয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন-
রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে নুরুল আবছার চৌধুরী জানান, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন পেতে একডজন প্রার্থীর দৌড়ঝাপ চলছে। যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, জনপ্রিয়তা ও দলের কাণ্ডারী হিসেবে নিজেকে হাই কমান্ডের কাছে তুলে ধরছেন প্রার্থীরা। উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে আ.লীগের ব্যস্ততা দেখা গেলেও বিএনপি নিরব ভ‚মিকা পালন করছে।
উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে আ.লীগের সম্ভ্যাব্য প্রার্থীরা কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করছেন। দলের হাইকমান্ড ও ভোটারদের মন জয় করতে আ.লীগের ১০ বছরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষাসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছেন সম্ভ্যাব্য প্রার্থীরা।
আ.লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন সাবেক আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা উপদেষ্টা মো. সাদেক নূর সিকদার, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শাহ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কৃষকলীগ নেতা মো. শফিকুল ইসলাম, জেলা পরিষদ সদস্য কামরুল ইসলাম চৌধুরী, দানবীর আলহাজ মো. আবু জাফর, বেদারুল ইসলাম চৌধুরী বেদার, চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আজগর, রাজানগর ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার।
প্রার্থী আ.লীগ নেতা সাদেক নুর সিকদার বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় আ.লীগের গুরুদায়িত্ব থাকা সময়ে সংগঠনের দায়িত্ব পালনে অনেক সময়ে লাঞ্চিত হয়েছি, বর্তমান সংগঠন শাষকদল। অনেকে ১৫ বছরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছে, এবারে আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব প্রদান করলে রাঙ্গুনিয়া এমপি ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের নিকট কৃতজ্ঞ থাকব।
পোমরা ইউনিয়নের কৃষক রবিউল বলেন, বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে আ.লীগ প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডি হাড্ডি লড়াই হবে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে কিনা তা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে। ভোটের মাঠে আ.লীগের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও বিএনপি প্রার্থীর বিষয়ে নিরব রয়েছে। উপজেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার বলেন, উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে দলীয়ভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহন করলে তা সকলের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী দেয়া হবে। উপজেলা বিএনপির অপর অংশের আহবায়ক মো. শওকত আলী নূর বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় উপজেলা নির্বাচন বিএনপি অংশ নেয়ার প্রশ্নই আসে না।
উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আলহাজ খলিলুর রহমান চৌধুরী বলেন, আ.লীগ বড় দল হিসেবে অনেকে মনোনয়ন চাইতে পারে। রাঙ্গুনিয়ায় উন্নয়ন ধারাবাহিকতা রক্ষায় আ.লীগের নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে হবে। দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষে আ.লীগ ও অঙ্গসংগঠন নেতাকর্মীরা কাজ করবে।
উপজেলা পৌর মেয়র আলহাজ মো. শাহজান সিকদার বলেন, তৃতীয় বারের অপরাজিত এমপি ড. হাছান মাহমুদের নেতৃত্বে ১০ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় রাঙ্গুনিয়ার চিত্র পাল্টে গেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে ড. হাছান মাহমুদ তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। আগামী ৫ বছরে নিজ সংসদীয় এলাকায় আরো বেশী উন্নয়ন প্রকল্প তরান্বিত করতে একজন জনপ্রিয়, দক্ষ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা প্রয়োজন।
জানা যায়, ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ভোটকেন্দ্র হচ্ছে ৮৮টি। রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় মোট ভোটার হচ্ছে ২ লাখ ৫৩ হাজার ২০৮ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩১ হাজার ২১০ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার।
রাউজান (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, রাউজান উপজেলা আ.লীগের বর্ধিত সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তৃনমূলের মনোনয়ন পেলেন উত্তরজেলা আ.লীগের কোষাধ্যক্ষ দুবারের নির্বাচিত রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান, সাদা মনের মানুষ খ্যাত আলহাজ এ কে এম এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় উপজেলা আ.লীগ কার্যালয়ে অনুষ্টিত বর্ধিত সভায় সবার সম্মতিক্রমে এককভাবে বাবুল চৌধুরীকে তৃনমুল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাউজান থেকে নির্বাচিত চারবারের এমপি এবি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি।
যুগ্ন সম্পাদক বশির উদ্দিন খানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ। এতে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে প্রাথমিক প্রার্থী মনোনীত হন বর্তমান দায়িত্বরত আলহাজ নুর মোহাম্মদ ও ফৌজিয়া খানম মিনা। এদিকে এহছানুল হায়দার বাবুল তৃতীয় বারেরমত উপজেলা নির্বাচনের তৃনমূল পর্যায় থেকে প্রার্থী মনোনীত হওয়ায় জুমার নামাজে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
চাটমোহর (পাবনা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, চাটমোহর উপজেলার হাট-বাজার, চা স্টলে এখন আলোচনা চলছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে। আ.লীগের নেতারা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা মোটরসাইকেল শোডাউন, গণসংযোগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করে চলেছেন। তবে এ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কিংবা অন্য দলগুলোর কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনে বড় বিজয়ের পর আ.লীগের নেতাদের মনোবল বেড়ে গেছে। অনেকেই মনে করছেন দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক পেলেই নির্বাচনে জেতা সম্ভব। তাই নেতারা উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দৌড়াচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা স্থানীয় এমপির আশীর্বাদ নেয়ার চেষ্টা করছেন। ক্ষমতাসীন আ.লীগের বেশ কয়েকজন নেতার নাম এসেছে সম্ভাব্য তালিকায়। অনেকেই প্রচারনায় নেমেছেন। এরমধ্যে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন সাখো, পাবনা জেলা আ.লীগের উপদেষ্টা সাবেক এমপি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট একেএম সামসুদ্দিন খবির, পাবনা জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ মো. আ. হামিদ মাস্টার, আ.লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক, পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মির্জা আবু হায়াত মো. কামাল ওরফে জুয়েল মির্জা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এস এম মোজাহারুল হক, উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হোসেন ধনী, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আব্দুল আলীমের নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে আলহাজ মো. আ. হামিদ মাস্টার, এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন সাখো ও মো. আতিকুর রহমান আতিক সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মো. মকবুল হোসেনের সাথে সাক্ষাত করে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন। কেন্দ্রে লবিং শুরু করেছেন কেউ কেউ।
ধামরাই (ঢাকা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, আগামী মার্চ মাসে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এমন ঘোষণার আগ থেকেই ঢাকার ধামরাই উপজেলা পরিষদে চেয়াম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা সবর থাকলেও বিএনপি প্রার্থীরা রয়েছে চুপচাপে।
এ নির্বাচনে অংশ নেয়া বা না নেয়া নিয়ে বিএনপির মধ্যে কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ভোটারদের মধ্যেও এ নির্বাচন নিয়ে তেমন কোন আলাপ-আলোচনা নেই বললেই চলে।
আসছে নির্বাচন সামনে রেখে আ.লীগের সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে দোয়া আর্শবাদ ও কুশলাদী বিনিময় করছেন। দলীয় সমর্থন আদায়ের জন্য স্থানীয় এমপি ও জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এমনকি কেন্দ্রীয় নেতাসহ আ.লীগের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন।
এ নির্বাচনে আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা জেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পদক ও বাইশাকান্দা ইউপির ৩ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান মিজান। প্রধানমন্ত্রীর জালানী উপদেষ্টার সাবেক এপিএস ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং বাংলাদেশ আ.লীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক আলহাজ মনোয়ার হোসেন, ধামরাই উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও বালিয়া ইউপির ২ বারের নির্বাচিত চেয়াম্যান আহম্মদ হোসেন, উপজেলা আ.লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সানোড়া ইউনিয়নের ২বারের চেয়ারম্যান খালেদ মাসুদ খান লাল্টু ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান এ্যাড. সোহানা জেসমিন মুক্তা।
এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মোহাদ্দেস হোসেন, উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন।
অপর দিকে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, মহিলা নেত্রী জয়া হোসেন ও সোরাইয়া আক্তার।
মানোনয়ন প্রত্যাশী মনোয়ার হোসেন বলেন, জরুরি অবস্থা তথা ১/১১ সময়ে প্রধান মন্ত্রীর মুক্তির আন্দোলনে জীবনের ঝুকি নিয়ে ২০০৮ সালে ২৬মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে জরুরী অবস্থা ভঙ্গকরে জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য মিছিল করতে গিয়ে আইনশংখলা বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন দলের জন্য কাজের মূল্যায়ন অবশ্যই পাবেন বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।।
রাজধানীর উপকন্ঠে ঢাকা-২০,ধামরাই আসনটে একটি উপজেলা ও একটি পৌরসভা এবং ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ২২৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫১৬ জন। নারী ভোটার রয়েছে ১লাখ ৬১ হাজার ৭১৭ জন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন