বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভেনিজুয়েলা নিয়ে উভয় সঙ্কটে যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্পের সহযোগী ‘নির্বোধের দল’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:১১ এএম

আন্তর্জাতিক শক্তিগুলি জড়িয়ে পড়ায় ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক সঙ্কট অবসানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিরোধী নেতা ও স্বঘোষিত অন্তর্র্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুয়াইদো যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থন নিয়ে নিজের কর্তৃত্ব কায়েম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের সামরিক বাহিনী প্রকাশ্যে সমর্থন জানানোর ফলে বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন।
এদিকে, মাদুরোকে উৎখাতে নিজের অবস্থান ঘোষণা করে উভয় সঙ্কটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক নিবন্ধে মন্তব্য করা হয়েছে, যেসব মন্ত্রী ও উপদেষ্টাবেষ্টিত হয়ে আছেন ট্রাম্প, তারা তাকে যথাযথ পরামর্শ দিতে সক্ষম কি না তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ট্রাম্পের সহযোগীদের ‘নির্বোধের দল’ আখ্যায়িত করেছেন আরেক ভাষ্যকার। গার্ডিয়ানের নিবন্ধে সিমন টিসডাল লিখেছেন, ট্রাম্প ও তার সহযোগীদের অবস্থানকে ‘একটি বিপজ্জনক জুয়া খেলা’ আখ্যা দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। রাশিয়া ও চীনের সমর্থন থাকায় মাদুরোর বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না তাদের পক্ষে। অন্যদিকে মাদুরোকে উৎখাতে ব্যর্থ হলে চরম অপমানিত হতে হবে। এমন বিপজ্জনক পট পরিবর্তনের রাজনীতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
ইতোমধ্যে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ভ্লাদিমির পাদ্রিনো এবং ৮ জন জেনারেল মাদুরোর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য দেখিয়েছেন। পাশাপাশি রাশিয়া, চীন ও তুরস্ক মাদুরো প্রশাসনের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টেলিফোনে মাদুরোর সঙ্গে কথা বলেছেন। বাইরে থেকে ভেনিজুয়েলায় সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। চীনও ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছে। উল্লেখ্য, রাশিয়া ও চীন অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত ভেনিজুয়েলাকে প্রয়োজনীয় ঋণ ও অস্ত্র সরবরাহ করে। বিশেষ করে চীন সে দেশে বিশাল মাত্রায় বিনিয়োগ করে এসেছে। সে দেশের পেট্রোলিয়াম শিল্পেও চীনের বড় অবদান রয়েছে। মেক্সিকো, কিউবা ও বলিভিয়ার বামপন্থী প্রশাসনও মাদুরোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তুরস্কের সঙ্গেও মাদুরো প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।
নিবন্ধে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশটিতে অবস্থানরত মার্কিন কূটনীতিকদের ভেনিজুয়েলা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও কূটনীতিকদের সেই নির্দেশ অমান্যের আদেশ দিয়েছেন। এখন যদি মাদুরো তাদের গ্রেফতার করার আদেশ দেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রেসিডেন্টের জন্য মাত্র দু’টি পথ খোলা থাকে। এর একটি হচ্ছে, দ্রুত দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া, যার অর্থ মার্কিন সেনাবাহিনীকে সেখানে পাঠানো এবং অপরটি, অপমানজনকভাবে পিছিয়ে যাওয়া।
ট্রাম্পের পাশে কোনও ভালো পরামর্শদাতা না থাকা এবং আগ্রাসী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোলটনের উপস্থিতির কারণে ভেনিজুয়েলার জন্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতি আনতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী পাঠানোটা জুয়া খেলার মতো কাজ হয়ে যাবে, যা যেকোনও সময় বিপরীত ফল ডেকে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা করলেও মাদুরো সমর্থন পেয়েছেন মেক্সিকো, তুরস্ক, রাশিয়া ও চীনের মতো দেশের। রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। অন্যদিকে, চীন গত বছর ভেনিজুয়েলাকে বিশাল বড় অঙ্কের ঋণ দিয়েছে।
দেশটির সেনাবাহিনী মাদুরোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সেক্ষেত্রে ট্রাম্প ও তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোলটন ধাক্কা খাবেন কারাকাসের নেতৃত্ব পাল্টানোর প্রথম শর্ত পূরণের ক্ষেত্রেই। আর সেটি হচ্ছে, বন্দুকধারীদের নিজেদের পক্ষে রাখা। ট্রাম্প একে একে তার সব প্রখ্যাত পরামর্শকদের সরিয়ে দিয়েছেন। যেমন, সম্প্রতি সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসকে বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প।
এখন যারা আছেন তাদের কারণে ট্রাম্পকে আগামী দিনগুলোতে ভুগতে হবে উল্লেখ করে সিমন টিসডাল লিখেছেন, মূলত আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কী করা উচিত এবং কীভাবে করা উচিত সে বিষয়ে ট্রাম্পকে যথাযথ পরামর্শ দেয়ার ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যক্তি হোয়াইট হাউসে আছে কি না তা নিয়ে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। টিসডাল একজন মার্কিন ভাষ্যকারের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন, ‘লিঙ্কনের ছিল একদল প্রতিদ্ব›দ্বী। আর ট্রাম্পের সঙ্গে আছে একদল নির্বোধ।’ জেমস ম্যাটিসের স্থানে এখন রয়েছেন, প্যাট্রিক শানাহান। তিনি ম্যাটিসের সহকারী ছিলেন। কিন্তু বোয়িংয়ের সাবেক এই কর্মকর্তার নেই কোনও সমরাস্ত্র বা ক‚টনৈতিক অভিজ্ঞতা। ট্রাম্পের অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারের কাজ দেখে মনে হয়, তার দায়িত্ব ট্রাম্প যা চান তা বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়া। ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স নিজে সংবাদমাধ্যমকেই অপছন্দ করেন। আর হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ মাইক মুলভেনি খোদ ট্রাম্পকেই ‘বিপজ্জনক মানুষ’ আখ্যা দিয়েছিলেন। এমন অবস্থায় ভেনিজুয়েলার পট পরিবর্তনের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগ পরিস্থিতিকে আরও বিগড়ে দিতে পারে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন