মুফতী পিয়ার মাহমুদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
প্রিয় পাঠক! এই ছিল ইসালে সওয়াব সংক্রান্ত ইসলামের সোনালী দর্শন। কিন্তু পোড়া কপাল নির্বিচার পরানুকরণবাদী মুসলিম উম্মাহ এক্ষেত্রেও পরানুকরণের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে সফলভাবে। ফযীলত ও কল্যাণে পরিপুষ্ট ইসালে সওয়াবের এই ব্যবস্থাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে গ্রহণ করতে শুরু করেছে এক মিনিটের নীরবতা বা বোবা সংস্কৃতি। এক শ্রেণীর নব্য শিক্ষিত সমাজ মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে আয়োজিত কোন অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে তার সম্মানার্থে এক যোগে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে। সংসদ ও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত তথাকথিত অভিজাত শ্রেণীর মাঝে এর প্রচলন বেশি। মূলত সম্মান প্রদর্শনের এ রেওয়াজটি খ্রিস্টানদের থেকে পাওয়া এক শ্রেণীর মানুষের মিরাছী সম্পদ। তাদের ধারণা মতে কোন মৃত ব্যক্তির স্মরণে ও সম্মানার্থে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকলে সেই নীরব পরিবেশে যিশু খ্রিস্ট আগমন করেন এবং সে নীরব প্রার্থনা কবুল করে নেন আর মৃত ব্যক্তির নাজাতের ব্যবস্থা করে দেন। (অপসাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও মিল্লাতে মুসলিমা, মুফতি হিফজুর রহমান : ৩২-৩৩; অপসংস্কৃতির বিভীষিকা; জহুরী-২৫)
নাউযুবিল্লাহ! কি ভয়ানক বিশ্বাস। এ বিশ্বাসের মূলকথা হলো হযরত ঈসা আ. হাজির অর্থাৎ সর্বত্র উপস্থিত হতে পারেন এবং পাপ মোচনকারী। হাজির তথা সর্বত্র উপস্থিত এমন হওয়ার জন্য আলিমুল গায়েব হওয়া অপরিহার্য। কেননা সর্বত্র উপস্থিত হওয়ার জন্য সে সম্পর্কে তার ইলম থাকতে হবে। অন্যথায় সময়মত সেখানে উপস্থিত হওয়া অসম্ভব। সে হিসেবে তাদের আকীদা মতে ঈসা আ. আলিমুল গায়েবও।
অথচ কুরআন ও হাদিসের সুস্পষ্ট ভাষ্য ও আহলে সুন্নাতওয়াল জামাতের আকীদা মতে হাজির, আলিমুল গায়েব ও পাপ মোচনকারী এই তিনটি গুণ কেবল মাত্র আল্লাহর। মানুষ বা অন্য কোন সৃষ্টি সে যতো ঊর্ধ্বেরই হোক না কেন এই গুণগুলোর অধিকারী সে হতে পারে না। কেউ দাবি করলে তা হবে আল্লাহর সাথে শিরক। এ সম্পর্কে কুরাআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- “হে রাসূল আপনি বলুন, গায়েবের ইলম একমাত্র আল্লাহর জন্যই।” (সূরা ইউনুস) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- “হে নবী আপনি বলুন, অদৃশ্যের সংবাদ আল্লাহ ছাড়া আকাশ-জমিনের কেউ জানে না।” (সূরা নমল : ৬৫)। এছাড়াও এই আকীদা মতে মৃতের জন্য নীরবতা পালন কালে হযরত ঈসা আ. পৃথিবীতে অবতরণ করেন। অথচ অসংখ্য হাদিসে এই কথা রয়েছে যে, হযরত ঈসা আ. কিয়ামতের পূর্বে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট দায়িত্ব আঞ্জান দেয়ার জন্য আগমন করবেন। মুসলিম : ১/৮৭; তিরমিযী : ২/৪৮। উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ বিষয়টিও স্পষ্ট যে, এ রেওয়াজটি খ্রিস্টান জাতি থেকে পাওয়া। সেমতে এটি পালন করলে যে খ্রিস্ট জাতির সাথে সাদৃশ্যতা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর ভিন জাতির সাথে সাদৃশ্যতার ব্যপারে দয়ার নবীর সা. ইরশাদ হচ্ছে- “যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে কিয়ামতের দিন সে তাদেরই একজন পরিগণিত হবে।” (আবু দাউদ : ২/৫৫৯) অন্য বর্ণনায় মহানবী সা. বলেন- “তোমরা পথ-পন্থা, রীতি-নীতি, চাল-চলন ও লেবাস-পোশাকে পৌত্তলিকদের প্রতিকূলে চলো; অনুকূলে নয়।” (বুখারী, হাদীস : ৫৮৯)
শেষ কথা হলো আমরা মুসলমান। তাই আমাদের সকল কর্মই হওয়া উচিৎ ইসলাম ও ইসলামের নবীর নির্দেশনা মোতাবিক। এর বাইরে সকল কিছুই বর্জন করা ইমান ও বিবেকের দাবি। অতএব মৃতকে সম্মান জানানোর ক্ষেত্রেও এক মিনিটের নীরবতা নামক বিজাতীয় কৃষ্টি বর্জন করে ইসলাম নির্দেশিত পদ্ধতিতে দোয়া-ইস্তিগফার ইত্যাদি করাই জীবিত-মৃত সকলের জন্যই অধিক কল্যাণকর ও মঙ্গলজনক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন