বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘শিক্ষার্থীরা পাস করছে শিক্ষিত হচ্ছে না’

কোচিং বন্ধের রিটের রায় ৭ ফেব্রুয়ারি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

কোচিংয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় পাস করছে, কিন্তু শিক্ষিত হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক এটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল। কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা ও কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরিয়া হিসেবে তিনি একথা বলেন। গতকাল (রোববার) শুনানির পর বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের রায়ের দিন রেখেছে।
কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে জন্য গত বছর কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে এসব নোটিস দেওয়া হয়। নোটিস পেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা-২০১২ নিয়ে শিক্ষকরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। আদালত গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই চিঠির কার্যকারিতা চার মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি রুল জারি করে। ওই আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই আবেদনের উপর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ৩১ জুলাই, ২০১৮ এর মধ্যে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের নেতৃত্বাধীন হাই কোর্ট বেঞ্চকে এ রুলের নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছিল। পরে আদালত এ রুল নিষ্পত্তির জন্য সাবেক দুই অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামালকে অ্যামিচি কিউরি নিয়োগ দেয়।
চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত তা রায়ের জন্য রাখলেও ফিদা এম কামাল বক্তব্য উপস্থাপন করতে চাইলে আদালত তাকে সে সুযোগ দেয়। ফিদা এম কামাল শুনানিতে বলেন, নীতিমালাটি (কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা-২০১২) স্বাধীন নয়। সরকারি কর্মচারী নীতিমালা-১৯৮৫ অনুযায়ী যে কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। বেসরকারি শিক্ষকরা যদি আইন ভঙ্গ করেন তাহলে কী হবে? শ্রেণি কক্ষের বাইরে কোচিং চলছে। ফলে ক্লাসকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। কোচিং শিক্ষা দিচ্ছে না, এটা শুধু পাস করার পদ্ধতি বাতলে দিচ্ছে। তখন আদালতের সিনিয়র বিচারক বলেন, সরকার চাইলে তাদের বিষয়ে (এমপিও, ননএমপিও এবং সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক) অন্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই নীতিমালার দরকার ছিল না।
ফিদা এম কামালকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, তাহলে আপনি পরামর্শ দিচ্ছেন, এই নীতিমালার অধীনে যেসব শিক্ষকরা রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে?
ফিদা এম কামাল বলেন, এটা একটা হোস্টাইল সিচ্যুয়েশন। নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট টিউশন দিতে পারে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তারা এটা করতে পারে না। এটা প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর লেখা উদ্ধৃত করে ফিদা এম কামাল বলেন, শিক্ষা নাগরিকের অধিকার। কোনো রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক ছাড়া কোচিং বাণিজ্য চলতে পারে না। আমরা ক্লাসরুমের পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছি না বলেই ব্যাঙের ছাতার মতো কোচিং সেন্টার গজিয়ে উঠছে।
বিচারক তখন বলেন, একজন শিক্ষার্থী যখন এসএসসিতে পড়ছে, তখনই অভিভাবকরা তার মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে যে তাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। ক্লাসরুমে মেডিকেল, বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যে পড়াশুনা সেটা দেওয়া হয় না। ফলে শিক্ষার্থী কোচিংয়ে যাচ্ছে। সরকার ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করছে না কেন?
ফিদা এম কামাল বলেন, কোচিংয়ে গিয়ে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় পাস করছে, কিন্তু শিক্ষিত হচ্ছে না। কারণ ক্লাসরুমে শিক্ষা দেওয়া হয়। শিক্ষক সম্মানী পায় ক্লাসে শিক্ষা দেওয়ার জন্য, কোচিং তার পেশা নয়। প্রাইভেট টিউশনকে নীতিমালায় অনুমোদন দেওয়া আছে, কোচিংকে নয়। কোচিং তার ইনহেরেন্ট (অন্তর্নিহিত) অধিকার নয়। সে শিক্ষা দেবে, কিন্তু কোচ হতে পারবে না।
শুনানির পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, উনি (ফিদা এম কামাল) আদালতের কাছে সময় চেয়েছেন লিখিত আর্গুমেন্ট দেবেন বলে। আদালত উনার কথা গুরুত্ব সহকারে শুনে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি রায় প্রদানের জন্য ধার্য করেছেন। আগামী রোববারের মধ্যে উনার লিখিত বক্তব্য জমা দিতে বলেছেন।
খুরশীদ বলেন, আদালত ব্যাখ্যা চেয়ে বলেছেন, কোনো একজন শিক্ষার্থী যদি ডাক্তার হতে চায় বা তার পরিবার চাচ্ছে সে ডাক্তার হোক, এখন সে যদি কোচিং না করে তাহলে সে কীভাবে এটা করতে পারে। এটাকে বাণিজ্য হিসেবে কেন আমরা ট্রিট করছি? শুধু নীতিমালার ভিত্তিতে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না উল্লেখ করে আদালত এটাও জানতে চেয়েছে, আইন না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়াটা কতটা সঙ্গত। আদালতের মোদ্দা কথা, আমি যেটা বুঝতে পেরেছি, সেটা হল, একটা সুনির্দিষ্ট আইন থাকতে হবে। আইন না রেখে শুধু নীতিমালাকে নিয়ে এ ধরনের পিউনিটিভ অ্যাকশন (শাস্তিমূলক ব্যবস্থা) কতটুকু নেওয়া যাবে এবং এর সাংবিধানিক একটা ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন