বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

লুইস তান্ডবের পর ওয়াহাবের হ্যাটট্রিক

ইমরান মাহমুদ, চট্টগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

মাঘ মাসের কনকনে শীতের পূর্বাভাস ছিল। ছিল মাসের মাঝামাঝি বড় ধরলের শৈত্যপ্রবাহেরও। তবে কোথায় কী! মাঘের মাঘেই শীত যেন যাই যাই করছে। গতকাল বাতাসে হাল্কা কুয়াশার চাদর ছিল বৈকি, তবে সেটি কাঁপন তুলতে ব্যর্থ। চট্টগ্রামে দিনভর আকাশের দখল হাত বদল হলো কুয়াশা আর রোদের কাছে। তবে কোন পূর্বাভাস না দিয়ে হঠাৎ ঝড়ের কবলে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম! ক্রিকেটবোদ্ধারা যার নামাঙ্করণ করেছেন ‘এভিন ল্ইুস’ নামে।
এবারের আসরের ঢাকা প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসের মুখোমুখি হয়েছিল কুমিল্লা। ঐ ম্যাচেই ব্যাট করতে গিয়ে কুঁচকির চোটে পড়েছিলেন এভিন লুইস। দলের সঙ্গে সফর করলেও খেলতে পারেননি সিলেট পর্বেও। অবশেষে ফিরেছেন গতকাল। ফিরেই লুইস করলেন বিস্ফোরক সেঞ্চুরি। ক্যারিবিয়ান ওপেনারকে সঙ্গ দিলেন তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস ও শামসুর রহমান। খুলনা টাইটান্সকে বিশাল লক্ষ্য দিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে ৫ উইকেটে ২৩৭ রান করে কুমিল্লা। বিপিএলে এর চেয়ে বড় সংগ্রহ আছে কেবল একটি। গত শুক্রবার এই চট্টগ্রামেই চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ২৩৯ রান করেছিল রংপুর রাইডার্স।
বিপিএলের শুরু থেকেই কুমিল্লার বিদেশি তালিকা সমুদ্ধ হয়েছে লুইসের ভারে। এবারও ক্যারিবীয়ান এই বিষ্ফোরক ব্যাটসম্যানকে রেখে দিয়েছে ২০১৫ সালের চ্যাম্পিয়নরা। তবে দুর্ভাগা চোটের কারণে নিজের সেরাটা দিতেই পারছিলেন না এই ব্যাটিং দানব। ঢাকা, সিলেট হয়ে অবশেষে চট্টগ্রামে দেখা মিলল লুইস ঝড়ের। আগের দিনই অনুশীলনের ফাঁকে কুমিল্লা কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন আশা দেখিয়েছিলেন এই বলে ‘লুইসের ব্যাটে রান আসবে’। সাগরিকায় রানপ্রসবা উইকেটের কারলেই তো বটেই, ২০১৫ সালে বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরিটা এই ক্যারিবিয়ান তুলেছিলেন এই মাঠ থেকেই। এই আত্মবিশ্বাস তা টের পাওয়া গেল ব্যাটিং নামার সঙ্গে সঙ্গে। প্রথম ১০ ওভারে কুমিল্লা করেছিল ৭৭ রান। শেষ ১০ ওভারে তারা যোগ করে ১৬০ রান!
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবালের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটিতে দলকে ভালো শুরু এনে দেন লুইস। পরপর দুই বলে তামিম ও এনামুল হককে বিদায় করেন মাহমুদউল্লাহ। লুইসের সঙ্গে ৯৭ রানের জুটি গড়ে ফিরে যান ইমরুল। অধিনায়ক ২১ বলে করেন ৩৯ রান। থিসারা পেরেরা ও শহিদ আফ্রিদির দ্রুত বিদায়ের পর শামসুর রহমানের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে ৫৯ রানের জুটি উপহার দেন লুইস। লুইস ৪৯ বলে ১০ ছক্কা ও পাঁচ চারে অপরাজিত থাকেন এবারের আসরের সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত ১০৯ রানে। বিপিএলে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ক্রিস গেইলের পর কেবল তিনিই এই টুর্নামেন্টে একাধিক সেঞ্চুরি করলেন। ১৫ বলে ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন শামসুর।
বড় রান তাড়ায় জুনায়েদ সিদ্দিকের সঙ্গে ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দলকে ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন ব্রেন্ডন টেইলর। ভালো শুরুটা কাজে লাগাতে পারেননি জুনায়েদ। দাভিদ মালান ও মাহমুদউল্লাহকে দ্রুত ফিরিয়ে খুলনাকে চাপে ফেলে দেন আফ্রিদি। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর পাকিস্তানের এই লেগ স্পিনারকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে টেইলর ফিরে গেলে বড় একটা ধাক্কা খায় খুলনা। জিম্বাবুয়ের কিপার ব্যাটসম্যান ৩৩ বলে পাঁচ চার ও এক ছক্কায় ফিরেন ৫০ রান করে।
ব্র্যাথওয়েট, নাজমুল হোসেন শান্ত পারেননি দলকে টানতে। দুই জনই ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় ফিরে যান সহজ ক্যাচ দিয়ে। তাদের বিদায়ের পর বেশি দূর এগোয়নি খুলনার ইনিংস। দলটি শেষ ৬ উইকেট হারায় ১৪ রানে। আঁটসাঁট বোলিংয়ে বাঁহাতি পেসার ওয়াহাব ৩ উইকেট নেন ১৪ রানে। ১৯তম ওভারে পরপর তিন বলে ডেভিড ভিসা, তাইজুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সাদ্দামকে ফিরিয়ে খুলনাকে থামিয়ে দেন ওয়াহাব। এবারের আসরে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন পাকিস্তানের বাঁহাতি এই পেসার। এর আগে রংপুর রাইডার্সের অখ্যাত বোলার আলিস আল ইসলামের হাত ধরেই এসেছিল প্রথম হ্যাটট্রিক। লেগ স্পিনার আফ্রিদি ২৭ রানে নেন তিনটি। দারুণ সেঞ্চুরিতে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়া ক্যারিবিয়ান পেসার ওপেনার লুইস জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
নয় ম্যাচে ষষ্ঠ জয় পেল কুমিল্লা। ১১ ম্যাচে নবম হারে খুলনার তলানিতে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করা নিশ্চিত হয়ে গেল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ২০ ওভারে ২৩৭/৫ (তামিম ২৫, লুইস ১০৯*, এনামুল ০, ইমরুল ৩৯, থিসারা ১১, আফ্রিদি ১, শামসুর ১৫; শরিফুল ৪-০-৫৩-১, সাদ্দাম ৪-০-৫৯-০, ভিসা ৪-০-৪৯-০, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-৩২-০, ব্র্যাথওয়েট ৪-০-৪২-২)।
খুলনা টাইটান্স : ১৮.৫ ওভারে ১৫৭ (টেইলর ৫০, জুনায়েদ ২৭, মালান ১৩, মাহমুদউল্লাহ ১১, ব্র্যাথওয়েট ২২, শান্ত ১৪, ভিসা ৮, আরিফুল ২, তাইজুল ১, শরিফুল ০*, সাদ্দাম ০; সাইফ ৩-০-২৯-১, মেহেদি ৪-০-২৮-১, শহীদ ২-০-২৪-০, ওয়াহাব ২.৫-০-১৪-৩, আফ্রিদি ৪-০-২৭-৩, থিসারা ৩-০-২৮-১)।
ফল : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৮০ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : এভিন লুইস (কুমিল্লা)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন