সবার আগে শিক্ষা। শিক্ষা গ্রহণ ও প্রদানে বাধাগ্রস্থ হয় এমন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ চলছে সমাজে। বর্তমান সরকার শিক্ষার ক্ষেত্রে আপোষহীন নীতি গ্রহণ করলেও শিক্ষা কার্যক্রমকে পাশ কাটিয়ে একাডেমিক সময়ে প্রমোদ ভ্রমণ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অনুষ্ঠানে ছুটছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্তাব্যক্তিরা। রাজনীতিতে নব অভ্যাগত হয়ে দ্বিগবিদ্বিক ছুটছেন তারা। সম্প্রতি এমনই অনেক এলাহি কা- করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, শিক্ষক এবং কর্মকর্তারা। ক্লাসের সময় ক্লাসে না গিয়ে শিক্ষকরা যান ‘টিচার্স ডে’তে, অন্যদিকে আবার ভিসি নিজের হুকুমাত প্রচারের উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের নিয়ে সদলবলে এক রাজনৈতিক নেতার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাওয়ায় বিশ^বিদ্যালয় জুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, শিক্ষক সমিতির নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারী) বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ব্লু-ওয়াটার পার্কে ‘টিচার্স ডে’ আয়োজন করে শিক্ষক সমিতি। এতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় শিক্ষক শূন্য হয়ে যায়। বাদ হয়ে যায় পূর্ব নির্ধারিত ক্লাসগুলো। তবে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী ওমর সিদ্দিকী রানা সুর পাল্টে জানান, কোন শিক্ষক যদি ক্লাস পরীক্ষা বাদ দিয়ে আসেন তার দায়িত্ব শিক্ষক সমিতি নিবে না।
অন্যদিকে, গত রবিবার কুমিল্লা স্টেডিয়ামে সরকার দলীয় এক সংসদ সদস্যের নাগরিক সংবর্ধনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত দুই ডজন শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে অংশগ্রহণ করেন ভিসি অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী। শিক্ষকরা ক্লাসে না গিয়ে এবং কর্মকর্তারা অফিস না করে ভিসির নির্দেশেই এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত হতে বাদ যাননি বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও শিক্ষক সমিতির নয়া কমিটির বেশ কয়েকজন নেতারা। একাডেমিক কাজকে গুরুত্বের বাইরে রেখে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে শিক্ষকদের এমন কাজে প্রশ্ন উঠেছে। যেখানে বিদ্যাপীঠটির অনেক বিভাগ শিক্ষাবর্ষ জটে রোগাক্রান্ত। শিক্ষকদের নিয়ে ভিসি সদলবলে অযাচিত অনুষ্ঠানে গেলে এর প্রভাবের রেশ শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবর্ধনায় অংশগ্রহণকারী একাধিক শিক্ষক জানান, ভিসির নির্দেশেই এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন তারা। বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী বলেন, ‘এমনিতেই বিভিন্ন বিভাগে সেশনজট রয়েছে। ক্লাসের সময়ে শিক্ষকদের এমন কর্মকা- হতাশা এবং লজ্জাজনক।’
জানা যায়, বিশ^বিদ্যালয়টি অর্থমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ (কুমিল্লা-১০) আ হ ম মুস্তফা কামালের নির্বাচনী এলাকার অন্তর্ভুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ শিক্ষক নেতা ও কর্মকর্তারা বিভিন্ন বিষয়ে জনসম্মুখে ও অপ্রকাশ্যে তাকে তোষামোদ করেন। অপরদিকে ডভসিই অন্য আসনের সাংসদের তোয়াজ করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করছেন বলে কানাঘুষা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে। ভিসি ও কয়েকজন শিক্ষক এবং কর্মকর্তার অপরাজনীতিতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে জানান শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। ঐ দিন ক্লাস বাদ দিয়ে নাগরিক সংবর্ধনায় শিক্ষকদের যাওয়া ঠিক হয়নি বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ। ক্লাস বাদ দিয়ে এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন কিংবা অংশগ্রহণ অনৈতিক জানিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক।
এ নিয়ে জানতে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো: আবু তাহেরের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা বছরে একদিন এ ধরণের প্রোগ্রাম করতে পারেন। এতে তেমন কোন ক্ষতি হয় না। তোমরা কোন উদ্দেশ্যে এগুলা কর তা আমরা জানি।’
ক্লাসের সময়ে শিক্ষকদের নিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের বিষয়ে স্পষ্ট উত্তর না দিয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘একাডেমিক কার্যক্রম বাদ দিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ ¯পষ্টভাবে নিষেধ রয়েছে। তবে একাডেমিক কার্যক্রম বাদ দিয়ে কোন শিক্ষক অন্য কিছু করেছেন এমন কোন লিখিত অভিযোগ আমার কাছে নেই।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন