বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

‘পারস্পরিক ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং আন্তঃধর্ম সম্প্রীতি বিশ্বশান্তি প্রক্রিয়ার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার’

ইবির সেমিনারে বিশ্ব ইসলামী চিন্তাবিদরা

ইবি রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৪ পিএম

‘পারস্পরিক ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং আন্তঃধর্ম সম্প্রীতি বিশ্বশান্তি প্রক্রিয়ার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। ইসলামে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই। ইসলামে কোন জঙ্গীবাদ নেই। পরস্পরের প্রতি এ ধরনের বিদ্বেষ থেকে সরে আসতে আমাদের সকল বিভেদ দুর করতে হবে’ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শান্তি ও সমতা নিশ্চিত করনে তুর্কী লেখক বদীউজ্জামান সাঈদ নুরসীর অবদান শীর্ষক দু’দিন ব্যাপি আন্তর্জাতিক সেমিনার এমন আহ্বান করেন বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ইসলামী চিন্তাবিদেরা। থিওলজি এন্ড ইসলামী স্টাডিজ অনুষদের আয়োজনে সোমবার ও মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন জাহিদ ও আল-ফিক্হ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. নাসির উদ্দীন আল আযহারীর উপস্থাপনায় এবং ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউজিসি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান, মুল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন তুরস্কের উসকুদার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আলফারসালান অ্যাজিকজেন্স, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান, ইসলামী ফাউন্ডেশনের ডিজি শামিম মোহাম্মদ আফজাল, সেমিনারের গুরুত্ব সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন ইস্তান্বুল ফাউন্ডেশনের দক্ষিণ এশিয়ার তত্ত্বাবধায়ক সালাহউদ্দীন সাইয়েদী, স্বাগত বক্তব্য রাখেন থিওলজি এন্ড ইসলামী স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আকবর হোসাইন, আল-কুরআন এন্ড ইসলামীক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. নাসির উদ্দীন মিযী, জর্দানের প্রতিনিধি মামুন ফারিজ মাহমুদ জারবার, সৌদি আরবের কিং ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. হারুন প্রিমি, রিসালায়ে নূরের অনুবাদক ইরাকের ইহসান কাসিম সালেহী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পিএইচডি গবেষক শাইখ আব্দুস সালাম সাঈদ করীম, তুরস্কের প্রতিনিধি সাঈদ উজাদালী, মালেশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামীক ইউনিভার্সিটি মো. শহিদুল ইসলাম, ভারতের আলীগড় মুসলীম বিশ্বদ্যিালয়ের পিএইচডি স্কলার জুবাইর হামিদ প্রমূখ। সেমিনারে বক্তারা আন্তর্জাতিক শান্তি ও সমতা নিশ্চিত করনে তুর্কী লেখক বদীউজ্জামান সাঈদ নুরসীর রিসালায়ে নূর এর গুরুত্ব তুলে ধরেন। সাথে সাথে মুসলিম বিশে^র ভ্রাতৃত্ব রক্ষার্থে করনীয় বিষয় সমুহ আলোচনা করেন। বক্তারা বলেন মুসলমানদের অবহেলা, আন্ত:কোন্দল এবং দারিদ্রতা থেকে ফিরে আসলে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। ইসলাম ধর্ম হলো সকল মানুষের আশ্রায়স্থল। ইসলাম কখনো জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী না। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠাই ইসলামরে মুল লক্ষ্য বলে আখ্যা দেন বিশ্ব ইসলামী চিন্তাবিদেরা।’ মঙ্গলবার সমাপনি দিনে উপরের সকল বক্তাসহ ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এম ইশারিত আলী মোল্লা এবং ইস্তাম্বুল ফাউন্ডেশন ফর সায়েন্স এন্ড কালচারের সচিব মোঃ আব্দুল্লাহ-আল মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।
মুল আলোচকের বক্তব্যে তুরস্কের উসকুদার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আলফারসালান অ্যাজিকজেন্স বলেন,‘ মুসলমানদের পূর্ব ইতিহাস অনেক গর্ভের। কিন্তু বর্তমান অবস্থা খুবই শোচনীয়। কারন হিসেবে তিনি বলেন মুসলমানদের ভিতরে পারস্পরিক সৌহাদ্য কমে গিয়েছে, লোভ লালসা অনেক গুনে বেড়ে গিয়েছে একই সাথে তারা ইহুদি-নাসারাদের গোলামী করছে। এই বিষয়গুলো থেকে ফিরে আসলেই মুসলমানদের গুরুত্ব সারা বিশে^ বেড়ে যাবে এবং নির্যাতন-নিপিড়ন বন্ধ হবে বলে তিনি মনে করেন।
বিশেষ অতিথি’র বক্তৃতায় প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমান বলেন, সাক্ষাতের শুরুতে সালাম দেয়া এবং সালামের প্রত্যুত্তোর প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলামের যে রীতি প্রচলিত রয়েছে তার মধ্য দিয়েই মানুষ পরস্পরের প্রতি শান্তি প্রার্থনা করে থাকে। তিনি বলেন, মানুষের মঙ্গলময় অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিতাড়িত রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিয়ে ’মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। যা বিশ্বশান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী বলেন,‘ বিশ্বের ১.৮ বিলিয়ন মুসলমানকে অন্তর্ভূক্ত না করলে বিশ্বশান্তি প্রক্রিয়া অর্থবহ হবে না। বাংলাদেশে ইসলামকে এগিয়ে নেয়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন এবং তখন থেকেই আমরা ওআইসি’র সদস্য পদ লাভ করি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠার জন্য মাদ্রাসা বোর্ড তৈরী করেছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে দেশব্যাপী ইসলাম প্রচারের ব্যবস্থা করেছিলেন। তারই ধারাবাহিতকায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে আরও কার্যকরের পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে বহুমুখী পরিকল্পা গ্রহন করেছেন। ড. রাশিদ আসকারী বিশ্বশান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় এক ও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, জ্ঞান ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বিশ্বশান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় তাৎপর্যপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ও অগ্রতির সাথে মুসলিম বিশ্বের তথা মুসলিম উম্মাহর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের অতীত ইতহিাস এ সর্ম্পকে পর্যাপ্ত জ্ঞান দিতে পারে। সমগ্র মুসলমান সম্প্রদায় একটি পরিবার হওয়া উচিত। যেখানে সকল কিছুর বিনিময় হতে পারে একটি পরিবারের মানুষগুলোর মতোই। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয় এই জায়গাটির বড় বিচ্যুতি, আজ একে অপরের থেকে মুসলমান সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে । এখানে এখন আমরা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। আজ বলতেই হয়, এই বাংলা ভুখন্ডেও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানী বাহিনী নিরীহ বাঙালি মুসলমানদের উপর হত্যা চাপিয়ে দিয়েছিল। সেসময় অনেক দেশ সেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থনও যুগিয়েছিল। আবদুল মান্নান ইসলাম ধর্মের অসাম্প্রদায়িক দিকটির উপর জোর দিয়ে বলেন, ইসলামে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই। ইসলামে কোন জঙ্গীবাদ নেই। তিনি আরও বলেন, পরস্পরের প্রতি এ ধরনের বিদ্বেষ থেকে সরে আসতে প্রথমে সকল বিভেদ দুর করতে হবে। ধর্মে কোন আশরাফ-আতরাফ নেই ; ইসলামে এটি একেবারেই নেই। তিনি বলেন, এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা একে অপরের সাথে জ্ঞান বিনিময় করতে পারব। ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারব। একে অপরের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্বাবোধ তৈরি করতে পারব। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের উপরও সমান গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যে উদ্যোগ গ্রহন করেছে তা যথেষ্ট সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এটা এগিয়ে নিতে তিনি আহবান জানান।
দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনে তুরস্ক, জর্ডান, ভারত, সৌদিআরব, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশসহ মোট ৮টি দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এ সেমিনারের পৃথক পৃথক ৮টি সেশনে ৭১টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। তার মধ্যে ইংরেজি প্রবন্ধ ছিল ৩৮টি এবং আরবি প্রবন্ধ ছিল ৩৩টি। এছাড়াও বিদেশী প্রবন্ধকার ও বিশেষ্ণজ্ঞদের প্রবন্ধ ছিল ১০টি এবং দেশীয় প্রবন্ধকারদের প্রবন্ধ ছিল ৬১টি। সমাপনী দিনে ক্যাম্পাসের পৃথক পৃথক স্থানে সেমিনার চলাকালে ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী সেমিনারে উপস্থিত হন। অনুষ্ঠানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও তুরস্কের ইস্তাম্বুল ফাউন্ডেশনের মধ্যে এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন