শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

লন্ডনের মুসলিম মেয়র ও তার ইতিহাস সৃষ্টি

প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হোসেন মাহমুদ
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাদিক খান ৫ মে লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। শুধু যুক্তরাজ্যই নয়, গোটা বিশ্বকেই বিস্ময়ে স্তম্ভিত করেছে তার এ বিজয়। কারণ, লন্ডনের ইতিহাসে তিনিই প্রথম মেয়র যিনি সাদা চামড়ার ইংরেজ তো ননই, উপরন্তু তিনি একজন মুসলমান।
যুক্তরাজ্যের প্রাণকেন্দ্র লন্ডন নগরীতে ৮০ লাখ মানুষের বাস। যে ব্রিটিশ সা¤্রাজ্য একদিন বিস্তৃত ছিল বিশ্বের প্রায় সব মহাদেশে, যে সা¤্রাজ্যে একদিন সূর্য অস্ত যেত না, যে দেশের মানুষ এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকায় ঘৃণ্য বর্ণবাদ চালু করেছিল, একদিন যাদের ছিল আকাশ ছোঁয়া গর্ব, বিশ্বের বহু দেশের লুণ্ঠিত সম্পদ দিয়ে তিলোত্তমা করে গড়ে তোলা তাদের রাজধানী লন্ডনের মেয়র আজ একজন অশ্বেতাঙ্গ। কেউ কেউ সাদিক খানের এ বিজয়কে রূপকথার গল্প বলে আখ্যায়িত করেছেন। দু’একটি পত্রিকায় তাকে ‘নিউ কিং অব লন্ডন’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে এটি যে এক ঐতিহাসিক ঘটনা এবং তিনি যে একটি ইতিহাস গড়েছেন সে ব্যাপারে সবাই একমত। তিনি শুধু লন্ডনেরই নন, গোটা ইউরোপের কোনো নগর-শহরেরও প্রথম মুসলিম মেয়র।
লন্ডনের মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৫ মে বৃহস্পতিবার। চূড়ান্ত ফল ঘোষিত হয় ৬ মে শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১২টার পর। নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিপুল বিত্তশালী ব্যবসায়ী কনজারভেটিভ পার্টির জ্যাক গোল্ডস্মিথ। নির্বাচনে ৫৭ লাখ ৩৯ হাজার ১১ জন ভোটারের মধ্যে ৪৫.৬ শতাংশ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। দেখা যায়, প্রথম পছন্দ ও দ্বিতীয় পছন্দের দু’দফা ভোটে তিনি জ্যাক গোল্ডস্মিথের চেয়ে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫২৯ ভোট বেশি পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ১৩ লাখ ১০ হাজার ১৪৩। আর জ্যাক গোল্ডস্মিথ পেয়েছেন ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৬১৪ ভোট। সাদিক খান পেয়েছেন ৫৬.৮ শতাংশ ভোট ও জ্যাক গোল্ডস্মিথ পেয়েছেন ৪৩.২ শতাংশ ভোট। উল্লেখ্য, সাদিক খান লন্ডনের তৃতীয় ও প্রথম মুসলিম মেয়র। লন্ডনের প্রথম মেয়র ছিলেন কেন লিভিংস্টোন। দ্বিতীয় ও তার আগে আট বছর ধরে মেয়র ছিলেন কনজারভেটিভ দলের বরিস জনসন।
৭ মে সাদিক খান শপথ গ্রহণ করেন। আবেগাপ্লুত সাদিক খান উদাত্তকণ্ঠে বলেন, ‘মাই নেম ইজ সাদিক খান। আই এম দ্যা মেয়র অব লন্ডন।’ বিজয় বক্তৃতায় সাদিক খান বলেন, লন্ডন একটি গ্রেট সিটি। এই সিটির মেয়র হতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করছি। তিনি বলেন, আমি কোনোদিন কল্পনাও করতে পারিনি এই সিটির মেয়র হবো। যা কল্পনায় ছিল না তা বাস্তব হয়েছে।
তিনি লন্ডনের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, দলমত নির্বিশেষে আমি এই সিটির সর্বস্তরের মানুষের মেয়র। আমি সবাইকে সমানভাবে সেবা করার চেষ্টা করবো। লন্ডনের মানুষ আমাকে তাদের আমানত দিয়ে বিজয়ী করেছেন। আমি সেই আমানত রক্ষায় সবকিছু করে যাবো। তিনি আবাসন সমস্যা সমাধানসহ অন্যান্য নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আত্মনিয়োগ করবেন বলে ঘোষণা দেন।
সাদিক খান ১৯৭০ সালের ৮ অক্টোবর দক্ষিণ লন্ডনের টুটিং-এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামহ ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ভাগ হওয়ার পর ভারত থেকে পাকিস্তানে চলে যান। খানের পিতা-মাতা তার জন্মের আগেই যুক্তরাজ্যে অভিবাসী হন। ৭ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের আর্লসফিল্ডের হেনরি প্রিন্স এস্টেটে দরিদ্রদের জন্য তৈরি তিন বেডরুমের কাউন্সিল ফ্ল্যাটে বড় হয়েছেন তিনি। তার বাবা আমানুল্লাহ খান ছিলেন সরকারি বাসের ড্রাইভার। দারিদ্র্যের কারণে তার মা শেহরুন খান দীর্ঘদিন ঘরে সেলাইয়ের কাজ করে সংসারের বিপুল ব্যয় মেটাতে সহায়তা করেন।
স্কুলে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চেয়েছিলেন সাদিক খান। ডেন্টিস্ট হওয়ার ইচ্ছা ছিল। তখনি ভালো বক্তৃতা করতে পারতেন। একজন শিক্ষকের নজরে পড়ে তার বাগ্মিতা প্রতিভা। তিনি আইন বিষয়ে পড়ার জন্য সাদিক খানকে পরামর্শ দেন। ইউনিভার্সিটি অব নর্থ লন্ডন থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করে প্রথমে একটি আইন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। পরে সেখানকার পার্টনার হন। আইনি পেশায় মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেছেন সাদিক খান। তিনি ইউনিভার্সিটি অব নর্থ লন্ডনে ভিজিটিং লেকচারার ছিলেন। এছাড়া সাউথ টেমস এফ ই কলেজের একজন গভর্নর, লিগ্যাল অ্যাকশন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এবং তিন বছর সিভিল লিবার্টিজ প্রেসার গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
১৫ বছর বয়সে লেবার পার্টির রাজনীতি শুরু করেন সাদিক খান। ১৯৯৪ সালে ২৪ বছর বয়সে তিনি লন্ডন বরো অব ওয়ান্ডসওয়ার্থের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন পার্লামেন্ট সদস্য। ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের মন্ত্রিসভায় তিনি কমিউনিটি বিষয়ক মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০০৯ সালে তাকে পরিবহন মন্ত্রী করা হয়। লেবার পার্টির সদস্য খানকে কেউ মধ্য-বাম সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রী, কেউ তাকে লেবার পার্টির সমাজতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক শাখার মশাল বহনকারী, কেউ বা তাকে নরম বামপন্থী বলে থাকেন।
স্বাভাবিকভাবেই খানের মেয়র নির্বাচনী লড়াই ছিল খুবই কঠিন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষ থেকে তার মুসলিম পরিচয়কে সামনে রেখে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পর্যন্ত নিজে তার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান। জ্যাক গোল্ডস্মিথের শিবির তাকে বিপজ্জনক ব্যক্তি বলে ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করে। জ্যাক গোল্ডস্মিথ নিজে সাদিক খানকে একজন চরম বর্ণবাদী, গোঁড়া মৌলবাদী এবং মুসলিম সংস্কৃতির অন্ধভক্ত হিসেবে উল্লেখ করেন তার নির্বাচনী প্রচারণায়। তার বিরুদ্ধে হিন্দু ও শিখ ভোটারদের মন বিষিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। তাকে রাজনৈতিক ইসলাম ও জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের প্রতি সহানুভূতিশীল একজন রাজনীতিক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে তিনি এক সময় ধর্মীয় উগ্রবাদে অভিযুক্তদের আইনি সহায়তা দিয়েছিলেন। এর রেশ ধরে উগ্রপন্থিদের সাথে তার যোগাযোগ আছে এবং তিনি ‘লন্ডনস্তান’ বানানোর স্বপ্ন দেখছেন বলে তার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হয়। তবে সাদিক খান এ নিয়ে বিতর্কে জড়াননি। এসব অপপ্রচারের জবাবে তিনি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণার আশ্রয় না নিয়ে বরং লন্ডনবাসীর জন্য তিনি কী করতে চান সে কথাই তুলে ধরেন। এভাবে তিনি ভোটদাতাদের কাছে নিজের পরিচ্ছন্ন ভাবমর্যাদা স্থাপন করতে সক্ষম হন। এ প্রসঙ্গে বিজয়লাভের পর তিনি বলেন, এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিক্ত বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং আমি গর্বিত যে লন্ডনবাসী আজ ভয়ের বদলে আশাবাদ এবং বিভাজনের বদলে ঐক্য বেছে নিয়েছেন।
জানা যায়, সাদিক খান কখনো তার ধর্মবিশ্বাসকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেননি। তিনি যখন এমপি হন তখন প্রথম বক্তৃতায় তার পিতার কাছ থেকে শেখা রাসূল (সা.)-এর হাদিস নিয়েও কথা বলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেন, সাদিক খান নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে মেয়র নির্বাচিত হলেও আগামী দিনগুলো তার জন্য কঠিন হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রথমেই আসবে তার দলের কথা। লেবার পার্টির যে আদর্শ ও কর্মসূচিরভিত্তিতে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন তা তাকে ধরে রাখতে হবে। এর সাথে তিনি ভোটদাতাদের যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশেষ করে লন্ডনের আবাসন সমস্যা সমাধান ও পরিবহন ব্যয় না বাড়ানোর ব্যাপারে তাকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সারা বিশ্বে যখন আলোচনা-বিতর্ক চলছে, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের মানুষ যখন ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত সে সময়ে তার এ নির্বাচনে জয়ী হওয়া বিস্ময়করই শুধু নয়, তা ব্রিটেনের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত বহন করছে কিনা তা নিয়েও আলোচনা চলছে।
লন্ডন প্রবাসী একজন প্রবীণ বাঙালি কলামিস্ট সাদিক খানের বিজয় প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘ভোটদাতারা টোরি শাসকদের নির্মম অর্থনৈতিক কৃচ্ছ্রতার নীতি, ধনীদের আরো ধনী এবং গরিবকে আরো গরিব করার পরিকল্পনা, জনকল্যাণকর ব্যবস্থাগুলোর ক্রমশ বিলোপ সাধন, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে অর্থ ব্যয় এবং ধর্ম ও বর্ণ বিভেদ সৃষ্টি করে নির্বাচনে জেতার চেষ্টাÑএসবের বিরুদ্ধেই ব্যালটের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছে।’
ব্রিটিশ মুসলমানরা খানের বিজয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ৪৮ বছর বয়স্ক লন্ডনবাসী নাভিদ আখতার বলেন, আমি আশা করি যে খানের নিয়োগ মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ইতিবাচক হবে। এটাকে আমরা প্রতিবেশীদের কাছে পৌঁছার একটা সুযোগ হিসেবে দেখব যারা আমাদের ধর্মের ব্যাপারে অনুসন্ধিৎসু এবং মুসলমান হিসেবে আমাদের দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক। আমি আশা করি যে বৃহত্তর সমাজের মধ্যে তার অবস্থান পুনঃনিশ্চিত করবে যে শান্তি, পারস্পরিক সম্মান ও উন্নতির ক্ষেত্রে মুসলমানরা অন্যদের চেয়ে আলাদা নয়। নটিংহাম বাসিনী ৪৫ বছর বয়স্কা সাজাদাহ তারিক বলেন, খান জয়ী হয়েছেন তার নীতির কারণে, তিনি একজন মুসলিম বলে নয়। তার নির্বাচনী প্রচারণার কর্মসূচিতে কখনোই ইসলাম ছিল না। ধর্ম নির্বাচনের বিষয় হওয়া উচিত নয়, বহু সংস্কৃতি অত্যাবশ্যক। কার্ডিফের অধিবাসী ৫৮ বছর বয়স্ক আলি জাফারি বলেন, আমার দৃষ্টিতে মুসলিম মেয়রের অর্থ হচ্ছে এই যে, পরিপক্ব গণতন্ত্রে মানুষকে ধর্ম, বর্ণ বা জাতিগোষ্ঠীভুক্ত পরিচয়ে চিহ্নিত করার সুযোগ নেই। আমি আশা করি খান বর্ণ সম্পর্কের উন্নতি করবেন এবং আবাসন সঙ্কট মোকাবেলায় সাহায্য করাসহ পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি না করে লন্ডনকে চলমান রাখবেন। লন্ডনবাসী ৪৯ বছর বয়স্ক দাউদ গুস্তেভ বলেন, আমি চাই সাদিক খান সকল লন্ডনবাসীর মেয়র হবেন। লন্ডন ও তার বহু সংস্কৃতির অর্থ এটি হচ্ছে বিশ্বের জন্য আশার বাতিঘর। ডারবি বাসিনী ৩২ বছর বয়স্কা জয়নাব কিদওয়াই বলেন, এটা যুক্তরাজ্য ও বিশ্বের মুসলমানদের জন্য বিরাট গর্বের মুহূর্ত। এ বিজয় দেখিয়েছে যে বিশ্বের নাগরিকদের এখনো ইসলাম ও মুসলমানের ওপর বিশ্বাস আছে। লন্ডনবাসী ৩১ বছর বয়স্ক সুহাইব কাজি বলেন, সম্পূর্ণ মুসলিম প্রেক্ষাপট থেকে আমি চাইব সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি সে ক্রমবর্ধমান ইসলামভীতি তিনি মোকাবেলা করবেন, বিশেষ করে সরকারি পরিবহনে প্রধানত নারীরা তার শিকার হচ্ছে। এটা বর্তমানে মুসলিম নারীদের মধ্যে ব্যাপক ভীতির কারণ, বিশেষ করে যারা হিজাব-নিকাব পরে।
সাদিক খান যে রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত সে লেবার পার্টির নেতা হচ্ছেন জেরেমি করবিন। দলে তার নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তিনি সাদিক খানের সমর্থক। এ বিজয়কে জেরেমি করবিনের জন্যও একটি বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কোনো কোনো বিশ্লেষক বলেছেন, কনজারভেটিভ দলের তীব্র সমালোচনার মধ্যেও যুদ্ধবিরোধী জেরেমি করবিন যদি তার নীতি ও দৃঢ়তা ধরে রাখতে পারেন তাহলে আগামী নির্বাচনে তার দলের বিজয় লাভ করা সহজ হবে।
সাদিক খানের বিজয়ে লন্ডনের সাদা-কালো নির্বিশেষে বেশিরভাগ মানুষই তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিদেশ থেকে তাকে প্রথম অভিনন্দন জানান নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিও। তিনি টুইটার বার্তায় বলেন, লন্ডনের নবনির্বাচিত মেয়রের সাথে আমি কাজ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। প্যারিসের মেয়র অ্যান হিলডাগো তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সাদিক খানের মানবিকতা ও প্রগতিশীলতার সুফল লন্ডনবাসী পাবে। এদিকে তার এ বিজয়ে পাকিস্তানে খুশির উৎসব হয়েছে। পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা বিলাওয়াল খান এবং সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে রাজনীতিক ইমরান তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আরো অভিনন্দন জানিয়েছেন পরাজিত প্রার্থী জ্যাক গোল্ডস্মিথ ও ইমরান খানের সাবেক স্ত্রী জেমিমা স্মিথ। জ্যাক গোল্ডস্মিথ জেমিমার ভাই। এছাড়া লন্ডনের তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী, রূপা হক ও টিউলিপ সিদ্দিকও তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রুশনারা আলী বলেন, সাদিক খানের বিজয়ে আমি গর্বিত। রূপা হক বলেন, সাদিক খান আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে লন্ডনের মেয়র হলেন। এজন্য আমি গর্ববোধ করছি। টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, সাদিক খানের বিজয় ঐতিহাসিক। অন্যদিকে সারা ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক নির্বাচনে পরাজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে লন্ডনের মেয়র নির্বাচনে দলীয় প্রার্র্থীর বিজয়ে আনন্দিত লেবার পার্টি প্রধান জেরেমি করবিনও তাকে অভিনন্দন জানান। তিনি লন্ডনকে সবার জন্য একটি মানানসই শহর হিসেবে গড়ে তুলতে খানের সাথে অবিলম্বে কাজ শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তার সম্পর্কে একজন বলেছেন, ছোটবেলা থেকেই সাদিক খান নিজে যে আদর্শে বিশ্বাসী তা নিয়ে লড়তে এবং সাফল্যের জন্য সব প্রতিকূলতার মোকাবেলা করতে পিছপা হননি। জীবিকা নির্বাহ আর অধিকার আদায়ের লড়াইটা ছিল নিত্যদিনের। সেখান থেকেই আজকের এ পর্যায়ে উঠে এসেছেন তিনি।
বিশ্বে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে সন্ত্রাসী কর্মকা- অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই পরিণতি হচ্ছে ইউরোপজুড়ে ইসলামেফোবিয়া বা ইসলাম ভীতি। ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে রক্তাক্ত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফলে পরিস্থিতি আরো আতঙ্কজনক হয়ে উঠেছে। মুসলমানদের প্রতি সামগ্রিকভাবে বেড়েছে-বাড়ছে সন্দেহ ও অবিশ্বাস। সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে সর্বত্র নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ প্রেক্ষাপটে সাদিক খানের বিজয় যুক্তরাজ্যে সন্দেহের তালিকায় থাকা মুসলমানদের জন্য যেমন অনেকটা স্বস্তি ও গর্বের, সেই সাথে তা তার জন্য নিয়ে এসেছে বিরাট চ্যালেঞ্জও। বহু সংস্কৃতির নগর হিসেবে পরিচিত লন্ডনের ধনী-গরিব, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, শ্বেতাঙ্গ-অশ্বেতাঙ্গ তথা সবার মেয়র হওয়ার ঘোষণা দেওয়া সাদিক খান সামনের দিনগুলোতে লল্ডনবাসীর কাছে দেওয়া তার সকল প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টার মাধ্যমে সাফল্যের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হবেনÑএটাই সবার ঐকান্তিক প্রত্যাশা।
য় লেখক : সাংবাদিক
যথসধযসঁফনফ@ুধযড়ড়.পড়স

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন