শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

আলহাজ্ব সূফি আব্দুল কাদের (রহঃ)

অধ্যাপক শেখ মো. কামাল উদ্দিন | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
এতিমের প্রতি ভালোবাসাও ছিল অগাধ। আলহাজ্ব সূফি আব্দুল কাদের (রহঃ) বিভিন্ন জায়গা থেকে অসহায় এতিম শিশুদের সংগ্রহ করে এতিমখানায় নিয়ে আসতেন। তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। তাদের নিজ হাতে গোসল করিয়ে দিতেন। এরা অসুখে আক্রান্ত হলে তিনি বাসায় তাঁর সহধর্মীনির কাছে নিয়ে আসতেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সেবা প্রদানের জন্য। তাঁর সহধর্মীনি অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন একজন মহিলা ছিলেন। এতদসত্তে¡ও এতিমের সেবায় তিনি স্বামীর যোগ্য সহচর হিসেবে স্বীকৃত। এতিমখানা যাতে সুষ্ঠুভাবে গতিশীল থাকে সে জন্য তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করতেন। নিজে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়েও শুধুমাত্র এতিমের ভালোবাসায়, এতিমের জন্য মানুষের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাইতেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী এতিমদের হক আদায়ে তিনি আত্মনিয়োগ করেছিলেন। সূফি সাহেবের ইন্তেকালের পর এতিমদের ক্রন্দনে এলাকার বাতাস প্রকম্পিত হয়েছিল। এতিমদের প্রতি তাঁর মায়া মমতা দেখে অনেক স্বচ্ছল ব্যক্তি এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন।
সমাজে অনেক লোক আছেন যারা ঘরের মহিলাদের বিভিন্ন ত্রæটি খোঁজে বেরান। তিনি ছিলেন এ প্রথার ঘোর বিরোধী। ঘরের মহিলাদের রান্নার দোষ ধরা তিনি খুবই অপছন্দ করতেন। তিনি মনে করতেন ঘরের মহিলারা অতি কষ্ট করে রান্নাবান্না করেন। তাছাড়া তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে পরিবারের সকলকে ভালো খাবার উপহার দিতে। তাই কখনও রান্না অতি মাত্রায় খারাপ হলেও অসন্তুুষ্টি প্রকাশ করতেন না। বরং তিনি অত্যন্ত ভদ্রোচিত ভাষায় ভাব প্রকাশ করে বলতেন, ”রান্না তো ভালোই হয়েছে, বয়সের কারণে হয়ত আমার জিহŸার স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা কমে গিয়েছে।” তিনি সহধর্মীনি ও পুত্রবধূর প্রতি সদাচরণের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
ব্যবসায়ী গুণাগুণকে ভালো কাজে লাগানো ছিল তাঁর অন্যতম নেশা। তিনি প্রতিবছর বর্তমান বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর নেছারাবাদের ছারছীনা দরবার শরীফের বার্ষিক মাহফিলে লঞ্চ যোগে যাতায়াত করতেন। মাঝে মাঝে পুরো লঞ্চ তিনি নিজেই ভাড়া করে নিতেন এবং ওই লঞ্চে ছারছীনাগামী মুসল্লিদের নিয়ে যেতেন। যাত্রীদের ভাড়া বাবত আদায় করে লঞ্চ ভাড়া পরিশোধের পর যা কিছু আয় হত তা তিনি ছারছীনায় দান করে আসতেন। এভাবে ব্যবসায়ী গুণকে দ্বীনের কাজে ব্যবহার করা ছিল তার বৈশিষ্ট্য।
তিনি সাদাসিধে তথা বিলাসিতাহীন জীবন যাপনে অভ্যস্থ ছিলেন। একজন সফল ব্যবসায়ী হয়েও তাঁর মাঝে কোনও বিলাসিতা ছিল না। সবসময় অল্প সংখ্যক পোশাক রাখতেন। একটু ছিঁড়ে গেলে নিজেই তা সেলাই করে পরিধান করতেন। আল্লাহর এ বান্দাকে ছারছীনার মরহুম পীর সাহেব (রহ.) সূফি উপাধিতে ভূষিত করেন। সেই থেকে তাকে এলাকাবাসী সূফি সাহেব হিসেবেই চিনতেন ও সম্বোধন করতেন। সূফি আলহাজ্ব আব্দুল কাদের (রহ.) ও মাওলানা মোস্তফা কামাল (রহ.) মৌকারা দরবার শরীফের মরহুম পীর শাহসূফি আলহাজ্ব হযরত মাওলানা অলী উল্যাহ (রহ.) এর অনুরক্ত ছিলেন। পীর সাহেব (রহ.) এর ইন্তেকালের পর মৌকারা দরবার শরীফের পরবর্তী পীর সাহেবগণের সাথে এ পরিবারের ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন তা’লীমী জলসায় ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতার মিলন মেলায় পরিণত হয়।
আলহাজ্ব সূফি আব্দুল কাদের (রহঃ) জীবনের শেষ সময়টুকু ইসলামের খেদমত ও সামাজিক কর্মকান্ডে ব্যয় করেছেন। তাঁর পরিবার পরিজন আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী বন্ধু বান্ধব ছোট বড় সুভাকাংখী সকলেই তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন। কর্মভার ও বয়সের ভারে ধীরে ধীরে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন। চিরদিন কেউ বেঁচে থাকবেন না। তিনিও তার ব্যতিক্রম নন। মহান আল্লাহর দেয়া নিয়মানুযায়ী সকলকে কাঁদিয়ে ১৯৮৬ সালে নিজ গৃহে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দৌলতগঞ্জ উত্তর বাজার মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রথম নামাযে জানাযা ও লাকসাম দৌলতগঞ্জ এতিমখানা মাঠে দ্বিতীয় নামাযে জানাযা শেষে তাঁকে লাকসাম দৌলতগঞ্জ এতিমখানা সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তারই পদাঙ্ক অনুসরণে সদকায়ে জারিয়ার বিভিন্ন কাজে আঞ্জাম দিয়েছিলেন স্বীয় সুযোগ্য পুত্র হযরত মাওলানা মোস্তফা কামাল। তিনি ২৬ জুলাই ২০১৭ইং সালে নিজ বাড়ীতে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। লাকসাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তাঁরই ¯েœহের সুযোগ্য পুত্র হাফেজ ড. মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ’র ইমামতিতে নামাযে জানাযা শেষে তাঁকে তার পিতামাতার কবরের পাশে দাফন করা হয়।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা তার বান্দা মরহুম আলহাজ্ব সূফি আব্দুল কাদের (রহঃ) ও মরহুম হযরত মাওলানা আলহাজ্ব মোস্তফা কামাল (রহঃ) কে কবুল করুন। পিতা ও পুত্র এতিমখানার যে বাগানে শুয়ে আছেন তাকে জান্নাতের বাগানে পরিণত করুন।
(আমিন)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন