শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

রাজনীতিক খান এ সবুর

প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এস এইচ খান আসাদ : বিশিষ্ট রাজনীতিক খান এ সবুর ১৯১১ সালে তদানীন্তন খুলনার ফকিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। তার শিক্ষা জীবনের সূচনা মাদ্রাসায়। তিনি পরবর্তীতে প্রাইমারি শিক্ষা শেষ করে ১৯৩২ সালে খুলনা জেলা স্কুল থেকে গণিত, ইংরেজিসহ ৪টি বিষয়ে লেটার নিয়ে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করে ভর্তি হন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে আইএসসি ও বিএ পাস করে ভর্তি হন লর্ড রিপন ল কলেজে। এ সময় ভারতীয় মুসলমানদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে জড়িয়ে পড়েন মুসলিম লীগের রাজনীতিতে। তীক্ষè মেধা ও দূরদর্শী রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় যুবক বয়সেই জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মুসলমানদের চরম দুর্দিনে নির্যাতন প্রতিরোধে ১৯৩৮ সালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে খান এ সবুর সর্বপ্রথম খুলনায় স্বাধীকার আন্দোলনে মুসলমানদের মিছিলের নেতৃত্ব দেন। মিউনিসিপ্যাল পার্কে (তৎকালীন গান্ধী পার্ক) স্বাধীকারের দাবিতে সর্ব প্রথম খুলনাঞ্চলের মুসলমানদের এক সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য যে খুলনার মানুষ খুন ঝরিয়েছে আজ (১৪ আগস্ট ১৯৪৭) সেখানে উড়েছে হিন্দুস্তানের পতাকা। সেদিন জমিদার শৈলেন ঘোষ, মহেন্দ্র ঘোষসহ হিন্দুনেতাদের ষড়যন্ত্রমূলক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে হুলিয়া মাথায় নিয়ে ¯েœহময়ী মা সবুরুন্নেসার নিকট কলকাতা যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে তিনি বলেছিলেন, ‘যদি খুলনাকে (খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট) পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে পারি তবে তোমার কোলে ফিরবো মা।’ তিনি বাউন্ডারী কমিশন এ আপিল করে অবশেষে মৃত্যুর ঝুঁকি মাথায় খুলনাকে পাকিস্তানভুক্ত করেন। ১৯৪৭ সালে ১৪ আগস্ট পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমগ্র অঞ্চলে আজাদী দিবস পালন হলেও খুলনায় পালিত হয়েছিল ২৩, ২৪, ২৫ আগস্ট। আজাদী দিবস উদযাপনে খান এ সবুর বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘ব্রাহ্মণ্যবাদী ষড়যন্ত্রে ১৪ আগস্ট খুলনা যে হিন্দুস্তানে ছিল তা হয়তো আগামী দিনে মানুষের মনে থাকবে না, আমাদের এ স্বাধীনতা পাওয়ায় রয়েছে রক্তঝরা গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস যা আপনাদের জন্য রেখে যাচ্ছি’। তৎকালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হাজার হাজার মুসলমান মারা গেলেও খুলনায় খান এ সবুরের কঠোর নেতৃত্বে কোথাও কোন সংঘাত হয়নি।
শূন্য হাতে পাওয়া পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়ন কর্মকা-ে খান-এ সবুর অভূতপূর্ব অবদান রেখেছিলেন। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের কেবিনেটে যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি মংলা বন্দর প্রকল্প, খালিশপুরের সমগ্র শিল্পাঞ্চল কেডিএ নিউমার্কেট, খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, দেশের একমাত্র জাহাজ নির্মাণ কারখানা শিপইয়ার্ডসহ পূর্ব পাকিস্তানের ঈর্ষাণীয় উন্নয়ন কর্মকা- করেন। ভাষা আন্দোলনের সূচনা থেকে পাকিস্তান পিরিয়ডে বিভিন্ন সময় শেখ মুজিবুর রহমান সরাসরি খান এ সবুরের সহযোগিতা পাওয়ার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেছেন এভাবে ‘দৌলতপুরে মুসলিম লীগ সমর্থক ছাত্ররা আমার সভায় গোলমাল করার চেষ্টা করলে খুব মারপিট হয়, কয়েকজন জখমও হয়। এরা সভা ভাঙতে পারে নাই। আমি শেষ পর্যন্ত বক্তব্য করলাম। এ সময় আব্দুস সবুর খান আমাদের সমর্থন করেছিলেন (অসমাপ্ত আত্মজীবনী-পৃষ্ঠা-৯২)’ আরেক পেক্ষাপটে তিনি লিখেছেন, ‘শহীদ সাহেবকে বিদায় দিলাম গোপালগঞ্জ থেকে। সবুর সাহেব খুলনায় শহীদ সাহেবকে অভ্যর্থনা করলেন। কারণ, সবুর সাহেব তখনও শহীদ সাহেবের কথা ভুলতে পারেন নাই। তাকে সমর্থন করতেন এবং আমাদেরও সাহায্য করতেন (অসমাপ্ত আত্মজীবনী-পৃষ্ঠা-১০২)’।
১৯৭৯ সালে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে খান এ সবুর বৃদ্ধ বয়সে খুলনায় তিনটি আসনে (খুলনা, সাতক্ষীরা ও তেরখাদা) বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। আজন্ম ত্যাগী, জনপ্রিয় নেতা খান এ সবুর মৃত্যুর পূর্বে তার কোটি কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি মানুষের কল্যাণে দান করে খুলনা জেলা প্রশাসককে চেয়ারম্যান করে শিক্ষা, ধর্ম, অন্যান্য জনহিতকর কাজের জন্য ‘খান এ সবুর ট্রাস্ট’ গঠন করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। গত ২৫ জানুয়ারি ছিল খান এ সবুরের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন