শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

বৈধ-অবৈধ পেশা ও উপার্জন

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:৪১ এএম

পনের

এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি প্রতারণামূলক কাজ। প্রতারণার মাধ্যমে পাচারকারীরা মানুষকে ক্ষতিকর ও সমাজবিরোধী কাজের সাথে সম্পৃক্ত করছে। তাই এটি তা’যীর সংক্রান্ত অপরাধসমূহের একটি অপরাধ।
এ প্রসঙ্গে মুসলিম পÐিতগণ বলেছেন: ‘‘প্রতারণার মাধ্যমে পাচারের শাস্তি বিধানে সরকার তার ধরণ ও ভয়াবহতার ভিত্তিতে মৃত্যুদÐ, চাবুক মারা, জেলে আটকে রাখা, নির্বাসনে দেয়া, মাল ক্রোক করা, শোকজ নোটিশ, সতর্কীকরণ নোটিশ, সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ, বয়কট করা, র্ভৎসনা করা ও উপদেশ দেয়া ইত্যাদির যে কোন শাস্তি নির্ধারণ করতে পারে।’’ “ইমাম ইবনে তাইমিয়া, আল-হিসবাহ, আল-কাহেরা: মাতবা’আতুল মুয়াইয়িদ, ১৩১৮, পৃ. ৪০।”
তবে যদি পাচারকারী কোন নারীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অথবা অপহরণ করে পাচার করে, তবে তার উপর অপহরণের জন্য শরীয়ত নির্ধারিত শাস্তি (হাদ্দুল হিরাবা) প্রযোজ্য হবে। আর যদি কেউ শিশুকে চুরি করে পাচার করে তবে তাকে তা’যীর হিসেবে রাষ্ট্র যে কোন ধরণের শাস্তি দিতে পারে। “ইমাম ইবনে কুদামা, আল-মুগনী ফিল ফিকহ, প্রাগুক্ত, খ. ১২ পৃ. ৪৮০।”
২০০০ সালের বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাশকৃত নারী ও শিশু অধিকার সম্পর্কিত ৮ আইনের ৫ নং ধারায় পাচারের শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে: ক) যদি কোন ব্যক্তি কোন বেআইনি বা নীতিগর্হিত উদ্দেশ্যে কোন শিশুকে বিদেশ হইতে আনয়ন করেন বা বিদেশে প্রেরণ বা পাচার করেন অথবা ক্রয় বা বিক্রয় করেন বা উক্তরূপ কোন উদ্দেশ্যে কোন শিশুকে নিজ দখলে, জিম্মায় বা হেফাজতে রাখেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদÐে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদÐে দÐনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদÐেও দÐণীয় হইবেন। খ) যদি কোন ব্যক্তি নবজাতক শিশুকে হাসপাতালে, শিশু মাতৃসদন, নার্সিং হোম, ক্লিনিক ইত্যাদি বা সংশ্লিষ্ট শিশুর অভিভাবকের হেফাজত হইতে চুরি করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি উপ-ধারা (ক) এ উল্লেখিত দÐে দÐনীয় হইবেন।
আমানতের খিয়ানত ঃ আমানতের খিয়ানত একটি জঘণ্য কাজ এবং এর দ্বারা উপার্জিত সম্পদও হারাম। আল্লাহ বলেন: ‘‘তোমাদের কাউকে যদি কোন ব্যক্তি কোন কিছুর আমানতদার বানায় বা কোন বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে, তাহলে সে যেন উক্ত আমানত প্রাপককে পরিশোধ করে দেয় এবং সে যেন (এ ব্যাপারে) তার রব আল্লাহকে ভয় করে। তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না, যে কেউ তা গোপন করে অবশ্যই তার অন্তর পাপী। তোমরা যা কর আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত।’’ আল-কুরআন, ২:২৮৩। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন: ‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তোমাদের ওপর ন্যস্ত আমানতের খেয়ানত করো না। অথচ তোমরা জান।’’ “আল-কুরআন, ৩: ৬১।” অপর এক আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন: ‘‘আর কোন নবীর জন্য কোন কিচু আত্মসাৎ করা মানানসই নয়, আর যে ব্যক্তি কোন কিছু আত্মসাৎ বা গোপন করবে, কিয়ামতের দিন সে উক্ত আত্মসাৎকৃত বস্তসহ উপস্থিত হবে; অত:পর প্রত্যেককে তার পরিপূর্ণ বদলা দেয়া হবে এবং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না।’’ “আল-কুরআন, ৮: ২৭।”
মুফাসসিরগণ বলেছেন: এ আয়াত সাহাবী আবু লুবাবা সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। বনু কুরাইয়া গোত্রের পল্লীতে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা বসবাস করছিল। রসুল স. বনু কুরাইযাকে অবরোধ করে রেখেছিলেন। তিনি আবু লুবাবাকে কোন প্রয়োজনে বনু কুরাইযার কাছে পাঠিয়েছিলেন। বনু কুরাইযার লোকেরা জিজ্ঞেহস করলো: ‘‘হে আবু লুবাবা! আমাদের ব্যাপারে রসুলের রায় অনুসারে আমরা যদি নেমে আসি, তা হলে আমাদের কি হবে বলে তোমার মনে হয়? আবু লুবাবা নিজের গলার দিকে ইংগিত দিয়ে বুঝালেন, তোমাদেরকে যবাই করা হবে। কাজেই নেমে এসো না। তাঁর এ কাজটি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে খিয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা ছিল। আবু লুবাবা নিজেও স্বীকার করেন যে, আমি কাজটি করার সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারলাম যে, আমি খিয়ানত করে ফেলেছি। এরপর আবু লুবাবা মসজিদে নববীর একটি খুঁটির সাথে নিজেকে ছয়দিন যাবত বেঁধে রাখেন এবং তাঁর তাওবা কবুল হবার ঘোষণা আসার পরই নিজেকে মুক্ত করেন। “আল-বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, প্রাগুক্ত, খ. পৃ. ৭১, হাদীস নং- ৭৫২৭।”
ইবনে মাসউদ রা. বলেন: ‘‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শাহাদাত বরণকালে আমানতের খিয়ানত ব্যতীত সকল গোনাহের কাফফারা হয়ে যায়। আমানতে খেয়ানতকারীকে কিয়ামতের দিন হাজির করা হবে এবং বলা হবে, তোমার আমানত ফেরত দাও। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেমন করে ফেরত দেব? দুনিয়ার তো ধ্বংস হয়ে গেছে। তখন তার কাছে যে জিনিসটি আমানত রাখা হয়েছিল, তাকে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্থলে হুবহু যে আকারে রাখা হয়েছিল সেই আকারে দেখানো হবে। অতপর বলা হবে, তুমি ওখানে নেমে যাও এবং ওটা বের করে নিয়ে এসো। অতপর সে নেমে যাবে এবং জিনিসটি ঘাড়ে করে নিয়ে আসবে। জিনিসটি তার কাছে দুনিয়ার সকল পাহাড়ের চেয়ে ভারী মনে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Firdousi ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:১৩ পিএম says : 0
মুনাফিকি থেকে তাওবা করার জন্য কী কী করতে হবে যা করলে ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে মুনাফিকি এবং জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন