বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দ্বিতীয় দিনে বইমেলায় ‘শিশুদের মেলা’

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

শুক্রবার উদ্ভোধনের পর গতকাল শনিবার দ্বিতীয় দিনে বইমেলা ছিলো সরগরম। প্রথম শিশুপ্রহরে সকাল থেকেই কচিকাঁচা শিশুদের মিলনমেলায় পরিণত হয় গ্রন্থমেলার শিশু চত্ত¡র। সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিশু-কিশোর আর অভিভাবকদের আনাগোনায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রাণচাঞ্চল্য ছিলো চোখে পড়ার মত। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এ দিন যেন গ্রন্থমেলায় শিশুদের নিয়ে আরেকটি মেলা তৈরী হয়। শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস তৈরীতে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে শিশুরা যেন বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে এবং নতুন বই কিনে আনন্দ প্রকাশ করতে পারে এজন্য প্রতি বছর শিশু প্রহরের আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদের ভাষ্যমতে, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের কারিগর। তারা যেন সাচ্ছন্দ্যে বইমেলায় ঘুরাফেরা করতে পারে সেজন্য ছুটির দিনে শিশু প্রহরের আয়োজন করা হয়।
শিশু চত্বরের স্টেজে হালুম, ইকরি, শিকু ও টুকটুকির সাথে ‘চলছে গাড়ি সিসিমপুরে’ গানে আপন মনে নাচ মিলাচ্ছে শিশুরা। বেলা ১২টায় সিসিমপুর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ড. জালাল আহমেদ। এসময় উপস্থিত শিশু-কিশোরদের আনন্দ যেন ধরে না। একে একে নিয়ে আসা হয় কার্টুন চরিত্রগুলোকে। মাইকে কার্টুনগুলো নিয়ে সঞ্চালকের প্রশ্নের চিৎকার করে উত্তর দিতে থাকে তারা।
শিশু চত্বরে চিলড্রেন্স পাবলিকেশন, শিশুরাজ্য, শৈশব প্রকাশ, সিসিমপুর, ঘুড়ি প্রকাশন, মাহি প্রকাশনী, ছোটদের মেলা, শিলা প্রকাশনী, বাবুই, ঘাস ফড়িংসহ প্রায় ৩০ টি স্টল দেখা যায়। বিনোদনের পাশাপাশি হরেক রকমের বই কিনতে দেখা যায় শিশুদের। চত্বরে বসে বই পড়ার জন্য আলাদা জায়গা করায় শিশুদের পাশাপাশি সন্তোষ প্রকাশ করে অভিভাবকরা।
গ্রন্থমেলা ঘুরে সিসিমপুর পাবলিকেশনের সামনে শিশুদের বেশি ভিড় দেখা যায়। এবার প্রকাশনীটি শিশুদের জন্য ১৩টি নতুন বই এনেছে। এর মধ্যে ‘কিনবো যা দরকারের’, ‘খোকা মিয়া’ ও ‘গাছপালা’ উল্লেখযোগ্য। সিসিমপুরের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম বলেন, ১৫ বছর ধরে শিশুদের জন্য আমরা নানা বৈচিত্রের বিষয় উপস্থাপন করছি। বাচ্চারা যেন দক্ষতার সাথে তাদের জীবন শুরু করতে পারে সে উদ্দেশ্যে আমরা কাজ করছি। প্রতি শুক্র এবং শনিবার বইমেলায় শিশু প্রহর থাকবে। শিশুপ্রহরে মেলার আসর সকাল ১১টায় শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে। এরপর অন্যান্য দিনের মত বিকেল ৩টা থেকে মূল পর্ব শুরু হয়ে রাত ৯টায় শেষ হবে।
শিশুপ্রহরে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে আগত চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী প্রীতি বলেন, আব্বু আম্মুর সাথে মেলায় এসেছি। টিভিতে দেখা হালুম-শিকু-ইকরিদের এখানে একসাথে দেখতে পেয়ে খুব মজা পাচ্ছি। কি বই পড়তে ভালোবাসো জানতে চাইলে প্রীতি বলে, আমি গল্পের বই কিনবো। গল্প পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। মেয়েকে নিয়ে শিশু প্রহরে ঘুরতে আসা রাজধানীর মোহাম্মদপুরের দম্পতি শিমুল আর তৃষ্ণা বিশ্বাস বলেন, সিসিমপুরে শিশুদের নির্মল বিনোদনের ব্যবস্থা সত্যিই প্রশংসনীয়। গত বছর মেলায় বসার কোন জায়গা ছিলো না তাই এবার বাচ্চাদের বসে বই পড়ার জায়গা করে দেয়ায় একাডেমি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাতেও ভূললেন না তারা। বয়সের হিসেবে ৩ বছর পার না হওয়া সিয়ামও আব্বু আম্মুর সাথে বই মেলায় এসেছে। সিয়ামের বাবা তানভীর আহমেদ বলেন, সাপ্তাহের অন্যদিনে বই মেলায় আসার সুযোগ পাবো না। তাই পরিবার নিয়ে আজই মেলা থেকে ঘুরে যাচ্ছি।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিন শনিবার মেলায় নতুন বই আসে ৮১টি। বিগত বছরে প্রথমদিকে মেলায় বেঁচাকেনা কম থাকলেও এবার প্রথম থেকেই ভালো বেঁচাকেনা হচ্ছে বলে জানান প্রকাশকরা। শনিবার তারা জানান, এখন মেলায় অধিকাংশ দর্শনার্থী দেখার জন্য আসলেও বই পছন্দ হলে কিনে নিচ্ছেন। সোহরাওয়ার্দি অংশের অনিন্দ প্রকাশের মাকের্টিং বিভাগের দায়িত্বে থাকা গোলাম কিবরিয়া বলেন, প্রথম দিন থেকেই আমাদের বিক্রি ভালো। দর্শনার্থীরা মেলায় আসছেন পছন্দ হলে তারা বই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল শনিবার বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিজয়: ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক আবুল মোমেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন লেখক-সাংবাদিক হারুন হাবীব, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরী এবং গবেষক মোফাকখারুল ইকবাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। আবুল মোমেন বলেন, ভাষা আন্দোলন পূর্ববাংলার মানুষকে মুক্তি ও স্বাধীনতার দিশা দিয়েছে। ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির লড়াই ক্রমশ পরিণত হয়েছে সায়ত্ত¡শাসন এবং স্বাধীনতামুখী অনিবার্য সংগ্রামে। আর এসব সংগ্রামে এ অঞ্চলের লেখক বুদ্ধিজীবীদের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। অনুষ্ঠানে আলোচকবৃন্দ বলেন, ভাষা আন্দোলনের চেতনাই বাঙালী জাতিকে ধারাবাহিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের দুয়ারে উপনিত করে। নানামুখী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বায়ান্নের সংগ্রামকে পূর্ণ সফল করে তুলে একাত্তর সালে। সভাপতির বক্তব্যে আহমদ রফিক বলেন, ভাষার সংগ্রাম মূলত স্বাধীনতার সংগ্রাম। ভাষা আন্দোলন চেতনার যে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছিল তারই বিচ্ছুরিত শিখায় আমরা আমাদের জাতিসত্ত্বার স্বরূপ আবিষ্কার করেছি এবং আঁধার রাতের পরিধি ভেঙে সম্ভব করেছি স্বাধীনতার সুবর্ণ সকাল।
আলোচনা শেষে মেলার মূলমঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কাজী রুমানা আহমেদ সোমার সঞ্চালনায় এতে কবিতাপাঠ করেন কবি আসাদ মান্নান এবং কবি হালিম আজাদ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ইস্তেকবাল হোসেন এবং লায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী। সংগীত পরিবেশন করেন তিমির নন্দী, শিবু রায়, রুমানা ইসলাম, আলম আরা মিনু, শ্যামা সরকার।
আজকের অনুষ্ঠান সূচি
সোমবার মেলার তৃতীয় দিনে মেলা বিকাল ৩টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সুবর্ণজয়ন্তী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন গোলাম কুদ্দুছ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে রামেন্দু মজুমদার, মাহফুজা খানম, নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং আতিউর রহমান আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন