শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চিকিৎসার বাইরে দুই তৃতীয়াংশ রোগী

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আজ

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

তৃতীয় বিশ্বের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশ স্বীকৃত রোগী চিকিৎসার আওতায় আসে। অর্থাৎ উন্নত আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহনে করে থাকে। বাকী দুই তৃতীয়াংশাই নানা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির চিকিৎসা করছে বা থেকে যাচ্ছে চিকিৎসার বাইরে। গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রির্সাচ অন ক্যান্সার (আইএআরসি)’র তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখ ৫০ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে মারা যায় এক লাখ ৮ হাজার মানুষ। এদিকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় (এএসইএএন) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্সার নির্নয়ের এক বছরের মধ্যে শতকরা প্রায় পচাত্তর ভাগ রোগী হয় মারা যায় কিংবা ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়। এছাড়া বিশে^ প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ২৭ লাখ জন নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রায় ৭৭ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরন করছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশে^র অন্যান দেশের মতো আজ বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ^ ক্যান্সার দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘আই এম এন্ড আই ইউল’ যার বাংলা করা হয়েছে ‘আমি পারি এবং আমি পারবো’।
চার্টার অব প্যারিসের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ্বের প্রায় ১২০ দেশের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়ছে এমন প্রায় ৪৭০ টি সংস্থার সমন্ময়ে গঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর ক্যান্সার কন্ট্রোল (ইউআইসিসি) নামক একটি বিশ্ব সংঘ ২০০৬ সাল থেকে এ দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সাথে পালনের জন্য নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্সার হলো অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধি সম্ব^লিত এক বিশাল বিভিন্ন রোগের সমাহার। ক্যান্সারে কোষে বিভাজন ঘটে ও অপরিকল্পিতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ক্ষতিকর টিউমার তৈরী করে। পর্যায়ক্রমে রক্ত ও লসিকা নালীর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংগে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ও ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন না করলে আগামী ২০-৪০ বছরের মধ্যে এ সংখ্যা দ্বিগুন হয়ে যাবে যা উদ্বেগজনক। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ও ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ক্ষীপ্র গতিতে বাড়ছে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশে। যেখানে ক্যান্সারের সাথে লড়ার আর্থিক ও সামাজিক অবকাঠামো নিতান্তই অপ্রতুল। একই সঙ্গে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়া অসংক্রমক ব্যাধি ‘ক্যান্সার’ সম্পর্কে ব্যক্তিগত ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এই রোগ প্রতিরোধের বড় উপায়। সে লক্ষে সরকারের নীতি-নির্ধারকসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ নির্ণয় করা গেলে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আমাদের দেশে পুরুষদের মাঝে ফুসফুসে ক্যান্সার, মুখ গহব্বরের ক্যান্সার ও স্বরনালীর ক্যান্সার সচারাচর বেশী দেখা যায়। অন্যদিকে নারীদের মাঝে জরায়ু মুখের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ও মুখ গহব্বরের ক্যান্সার সচারাচর বেশী পরিলক্ষিত হয়। তবে এসব ক্যান্সারই প্রতিরোধযোগ্য।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রাক্তন পরিচালক প্রফেসর ডা. মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী বলেন, শুধু ধূমপান বন্ধ করে ফুসফুসে ক্যান্সার, মুখ গহব্বরের ক্যান্সার, স্বরনালীর ক্যান্সার, পাকস্থলীর ক্যান্সার, অগ্নাশয়ের ক্যান্সার, মূত্রথলীর ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সার অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। অন্যদিকে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে না দিয়ে, অধিক সন্তান গ্রহাণ না করে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে এবং এইচপিভি ভ্যাকসিন নিয়ে অধিকাংশ জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
তিনি বলেন, স্থূলাকায় শরীরে ডায়াবেটিস, হৃৎপিন্ডের অসুখ, মাংস ও হাঁড়ের নানান অসুখ ও ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেশী। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষনায় এটা প্রমানিত যে, স্থূলাকায়ার সাথে পিত্তথলির ক্যান্সার, ডিম্ব্বাশয়ের ক্যান্সার ও অগ্নাশয়ের ক্যান্সারের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তাই ফাষ্ট ফুড, জাংক ফুড, গরুর মাংস, খাসির মাংস, অধিক চর্বিযুক্ত খাবার ও কম আঁশযুক্ত খাবার পরিহার করে অধিক আঁশযুক্ত খাবার, ফলমূল, কচু-ঘেচু, শাঁক-সবজি জাতীয় খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া নিয়মিত শারিরিক ব্যায়াম, কায়িক পরিশ্র্রম ও পাঁয়ে হাটার চর্চা করতে হবে।
এদিক দিবসটিকে সামনে রেখে, ঢাকা রিপোর্টস ইউনির সাড়র-রুনী মিলনায়তনে গতকাল ‘সর্বশেষ ক্যান্সার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও উত্তরণে গণমুখী প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মার্চ ফর মাদার। এতে বক্তব্য রাখেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষনা ইউস্টিটিউটের এপিডেমওিলজি বিভাগের প্রধান ডা. হাবিবুল্লা তালুকদার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাক্তন আঞ্চলিক উপদেষ্ঠা প্রফেসর ডা. মোজাহেরুল হক, মোসারাত জাহান সৌরভ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দেশে আশংকাজনক হারে ক্যান্সার রোগী বাড়লেও শুধুমাত্র একটি সরকারি হাসপাতাল ছাড়া আর কোন বিশেষয়িত ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে ওঠেনি। এ পর্যন্ত সব চিকিৎসাই রাজধানী কেন্দ্রীক। তাছাড়া নেয়া হয়নি ক্যান্সার সচেতনতায় প্রযোজনীয় পদক্ষেপ। অপরদিকে গতকাল ইউনাইটেড হসপিটাল ক্যান্সার সারভাইভারদের নিয়ে একটি পেশেন্ট ফোরাম আয়োজন করে। ‘আমি পারি ও আমি পারবো’ এই অঙ্গীকার নিয়ে ক্যান্সার রোগীরা একা নয়, এই প্রত্যয় ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. রশিদ উন নবী, ডা. সৌমেন বসু ও ডা. অসীম কুমার সেনগুপ্ত, ইউনাইটেড হসপিটালের চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ফাইজুর রহমান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন চীফ অব কমিউনিকেশন এন্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডা. শাগুফা আনোয়ার। এতে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা তাদের মনোবল ও সাহসিকতার সাথে রোগ মোকাবেলার গল্প ফুটিয়ে তোলেন এবং এর পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চিকিৎসকের ভূমিকার প্রয়োজনীতাও উঠে আসে।
দিবসটি উপলক্ষে প্রফেসর ডা. ওবায়েদুল্লাহ-ফেরদৌসী ফাঊন্ডেশন ক্যান্সার হস্পিটাল এন্ড রিসার্চ ইনষ্টিটিঊট ও বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির উদ্যোগে আজ বিকেল আড়াইটায় মিরপুরের দারুস সালামাস্থ বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ঢাকা আরিচা রোডে মানববন্ধন, বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির ডা. শাহাদাত হোসেন কনফারেন্স হলে আলোচনা সভা এবং সরকারের জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট হাসপাতালের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, ক্যান্সার রোগী ও সারভাইভারদের নিয়ে ক্রীড়া অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। দুপুরে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির সিটি স্ক্যান, এমআরআই মেশিন, লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট ও ডে-কেয়ার কেমোথেরাপি কিউ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্বোধন করবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন