৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের এক মাস পর ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জাসদ (আম্বিয়া-প্রধান) স্বীকার করেছে, ভোটের আগের রাতেই ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তিসহ নানা অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে, যা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে; কলঙ্কিত করেছে। উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও ভোট দিতে না পারায় নির্বাচনের পর গোটা জাতি বিষন্নতায় ভুগছে। তবে দলটির নেতাদের দাবি প্রশাসনে অতি উৎসাহী একটি অংশ এ জন্য দায়ী। আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে যারা নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ‘এই মূল্যায়ন’ ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলটির। এ বিষয়ে মিডিয়ায় প্রকাশের লক্ষ্যে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মূল্যায়নের লক্ষ্যে গত ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তোপখানা রোডস্থ বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে জাতীয় কমিটির সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়। দুই দিনব্যাপী দলের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বক্তৃতা করেন দলের কার্যকরী সভাপতি মইনউদ্দীন খান বাদল এমপি, সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি নাজমুল হক প্রধান, স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন, মোহাম্মদ খালেদ, আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, নাসিরুল হক নওয়াব, মঞ্জুরুল হক মঞ্জু; সহ-সভাপতি আবু মো. হাশেম, কদর আলী, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করিম সিকদার, আবুল কালাম আজাদ বাদল, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল হক খোকন, বীণা শিকদার, হোসাইন আহমদ প্রমুখ।
জাতীয় কাউন্সিলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জাসদ বিভক্ত হলে ইনু-শিরিনের নেতৃত্বে অনাস্থা প্রকাশ করে শরিক নুরুল আম্বিয়াকে সভাপতি, মইনউদ্দীন খান বাদলকে কার্যকরী সভাপতি ও নাজমুল হক প্রধানকে সাধারণ সম্পাদক করে বাংলাদেশ জাসদ গঠন করা হয়। দলটি এখনো নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পায়নি। দশম জাতীয় সংসদে দলের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধানসহ চারজন এমপি থাকলেও এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে এমপি হয়েছেন দলটির কার্যকরী সভাপতি মইনউদ্দীন খান বাদল।
১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাসদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের সভার মূল্যায়ন তুলে ধরে বলা হয়, দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণ উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আশা নিয়ে অংশগ্রহণ করলেও নির্বাচনের পরে বিষন্তানয় আক্রান্ত হয়েছে গোটা জাতি। এর মূল কারণ হচ্ছে, প্রশাসনের এক শ্রেণির অতি উৎসাহী অংশ (কেউ কেউ পুলিশের নাম উল্লেখ করেন) ভোটের আগের রাতেই ভুয়া ভোটের মাধ্যমে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখাসহ নানা অনিয়ম সংঘটিত করেছে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের জয় এই নির্বাচনে ‘নিশ্চিত’ ছিল দাবি করে বাংলাদেশ জাসদ বলেছে, জনগণের ভোটের মাধ্যমে ১৪ দল তথা মহাজোটের নিশ্চিত বিজয় জেনেও যে মহলবিশেষ এ অপকর্ম সংঘটিত করেছে, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থেই তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। কেননা ভোটের এই কলঙ্কিত ঘটনার মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এই কলঙ্কের দাগ মুছতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভবিষ্যতে দেশে যেন এ ধরনের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় দলের এক প্রস্তাবে বলা হয়, ১৪ দলীয় জোট সম্পর্কে বাংলাদেশ জাসদ মনে করে যে রাজনৈতিক কারণে জোট করা হয়েছিল; তা এখনো বহাল রয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক দল যদি ১৪ দলীয় জোটের প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করে, ১৪ দল ত্যাগ করে, তবুও অন্যান্য শরিক দল ১৪ দলীয় জোটের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখবে।
সভায় দলীয় প্রতীকে সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদসহ সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনের রেওয়াজ বাতিলের দাবি জানানো হয়। এই দাবিতে বাংলাদেশ জাসদ আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী মানববন্ধন, সভা, শোভাযাত্রা, মতবিনিময় প্রভৃতির মাধ্যমে ‘দলীয় মার্কামুক্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিবস’ পালন করবে। এ ছাড়া ১৬ ফেব্রুয়ারি দলের সাবেক সভাপতি তাত্ত্বিক নেতা মরহুম কাজী আরেফ আহমেদ স্মরণে ‘কাজী আরেফ দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন