মেট্রো চ্যানেলের ধর্মঘট তুলে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডু এবং তেজস্বী যাদবের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার লম্বা বৈঠক শেষে তিনি তিন দিনের ধর্মঘট তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই ধর্মঘটে গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। তবে তিনি ঘোষণা করেন এর পরবর্তী কর্মসূচি হবে দিল্লিতে। তিনি বলেন, ‘আদালতের রায়ে আমাদের জয় হয়েছে। আদালত রাজীব কুমারের গ্রেফতারির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।’
দিল্লিতে ধর্মঘটের ব্যাপারে মমতা বলেন, ‘এই ধর্মঘট ছিল গণতন্ত্রকে বাঁচানোর। সংবিধানকে বাঁচাতে। এটা ছিল সেভ ইন্ডিয়া ধর্মঘট। এখানে আমি কোনও সিদ্ধান্ত একা নেব না। ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব। চন্দ্রবাবু এবং তেজস্বী এখানে আছেন। তাদের সঙ্গে কথা বললাম। বাকিদের সঙ্গেও কথা বলি। সবাই বলছেন যে, সুপ্রিম কোর্টের রায় আমাদের নৈতিক জয়। তাই ধর্মঘট এখানেই শেষ করা হোক। আমি ধর্মঘট তুলে নিচ্ছি। আমরা এবার দিল্লিতে যাব। সামনের সপ্তাহে সেখানে অনুষ্ঠান করব। ধর্মঘট মঞ্চ থেকেই তিনি তোপ দাগেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে। তিনি বলেন, ‘আমি খবর পেলাম যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠিয়ে জানতে চেয়েছে রাজীব কুমার একজন আইপিএস অফিসার হয়ে কী করে আমার ধর্মঘটে যোগ দিল? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা, সংবাদ মাধ্যম বলুন। আমার ধর্মঘট মঞ্চে রাজীব কুমারকে একবারও দেখেছেন? একবারও উনি মঞ্চে এসেছেন? তিনি যোগ দেননি। হি নেভার জয়েনড।’ তিনি বলেন, ‘চিঠির জবাব আমরা কালকে দিয়ে দেব। কিস্যু হবে না। ফালতু সব।’ মুখ্যমন্ত্রীর পর ধর্মঘট মঞ্চ থেকে বক্তব্য রাখেন চন্দ্রবাবু নায়ডু। তিনি বলেন, আগামী ১৪ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।’
‘তদন্তে সিবিআই-এর সঙ্গে সহযোগিতা করবেন কলকাতা পুলিশ কমিশনার। তবে তাকে গ্রেফতার করতে পারবে না কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। স্পষ্ট নির্দেশ শীর্ষ আদালতের। কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে নালিশ করতে গিয়ে এমনই নির্দেশ ‘হজম’ করতে হল সিবিআ্ই-কে।
কলকাতা বা দিল্লি নয়, শিলংয়ের মতো নিরপেক্ষ জায়গায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একইসঙ্গে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার যে অভিযোগ এনেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, তার প্রেক্ষিতে রাজ্য পুলিশের ডিজি, মুখ্যসচিব এবং পুলিশ কমিশনারকে নোটিশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জবাব দিতে হবে তাদের। ২০ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে।
সোমবার সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির মৌখিকভাবে দাবি করেছিলেন যে, রাজ্য সরকারের তরফে গঠিত এসআইটি-এর প্রধান হিসেবে প্রচুর প্রমাণ নষ্ট করেছিলেন রাজীব কুমার। যদিও ‘মুখে না বলে, প্রমাণ পেশ’ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। সিবিআই-এর হয়ে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল। অন্যদিকে, কলকাতা পুলিশের তরফে আদালতে হাজির ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি।
শুরু থেকেই ‘রোববারের ঘটনায় প্রমাণিত, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে’ বলে দাবি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। ‘রাজ্যের অফিসাররা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের ওপর হামলা’ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই চিটফান্ড মামলার তদন্ত করছে সিবিআই, তাই এক্ষেত্রে আদালত অবমাননার দাবি তোলেন অ্যাটর্নি জেনারেল বেণুগোপাল। যদিও আপাতত রাজীব কুমারকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা। অবমাননা নিয়ে রাজ্যের পদাধিকারীদের জবাবদিহি চেয়েছে শীর্ষ আদালত। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন