শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

উন্নত সমাজ গঠনে প্রিয়নবী সা.-এর আদর্শের বিকল্প নেই

মুহাম্মদ বশির উল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম


(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
জাহেলিয়াত ও জাহালত-মূর্খত্ব ও মূর্খতার মাঝে ইসলাম একটি পরিস্কার বিভাজন রেখা টেনে দিয়েছে। ইসলাম স্পষ্ট করে দিয়েছে, জাহেলিয়াত হচ্ছে বিশেষ ওই আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির নাম, যা মিথ্যা-অহংকার, গোত্রীয় অভিজাত্য ও প্রাধান্যের দ্ব›দ্ব, অন্ধ আবেগ ও চেতনা এবং প্রতিশোধ ও চরমপন্থার এক সমন্বিত রূপ।

জাহেলিয়াত হচ্ছে শক্তিপুজারী একটি আচরণব্যবস্থা। এতে ধৈর্য ও পরমত সহিষ্ণুতা গণ্য হয় দুর্বলতা হিসেবে। বুদ্ধি ও মেধার ক্ষেত্রে উন্মাদনা এবং সংলাপের জায়গায় প্রতিশোধের আওয়াজ উচ্চকিত করা জাহেলিয়াতের নীতি।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ১৩ বছরের মক্কা জীবনে কাটিয়েছেন সাহাবায়ে কেরামের তরবিয়াত ও জীবন গঠনের পিছনে। এরপর যখন জিহাদের হুকুম হলো তখনও এ নির্দেশনা প্রবল ছিলো, সব শত্রæতা ও বৈরিতার মধ্যেও যেন ন্যায়ের নিশান হাতছাড়া না হয়। জিহাদ হচ্ছে, হক্বের আওয়াজ উর্ধ্বে তুলে ধরা, প্রতিশোধের নাম জিহাদ নয়। তাওহীদের মর্ম একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া, অপর ধর্মানুসারীদের প্রভুদের গালাগাল দেওয়া নয়। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন মানবতার প্রতি সম্মান। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর শিক্ষায় বর্ণ, বংশ, ভাষা ও সম্পদের ভিত্তিতে কারো মর্যাদা নির্ধারিত হয় না। মর্যাদা ও সম্মান নির্ধারণ হয় কেবল প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর সুন্নাহ ও আদর্শ বাস্তবায়নের ভিত্তিতে।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর আদর্শ মানুষকে অন্ধকার থেকে সরিয়ে আলোর পথে এনে দেয়। তাঁর মাধ্যমে দ্বীনের পূর্ণতা সাধিত হয়েছে এবং নবুয়াতের ধারা সমাপ্ত হয়েছে।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর সমগ্র জীবনী আলোচনায় ফুটে উঠে, ইসলাম নিরাপত্তার ঘোষক, সততার পতাকাবাহী এবং মানবতার বার্তাবাহক। মানবতার প্রতিটি সদস্যই ইসলামের দৃষ্টিতে সাম্য ও সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখে। ইসলাম বর্ণ ও গোত্রের বিভাজনমালিন্য থেকে মুক্ত। মানবতার সকল শ্রেণি ও স্তরের জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এসেছেন বিশ্বজাহানের রহমাত স্বরূপ।

অমুসলিম নাগরিকদের তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেনি ইসলাম। ইসলামের দেয়া অধিকার ও মর্যাদায় অমুসলিমরা এতটাই সম্মানিত বোধ করে, পূর্বে এর কোন নজীর তারা পায়নি। সভ্যতা ও ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে ইসলাম এসেছে একটি পশ্চাৎপদ সমাজে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম সেই আরবদের পরিণত করেছেন পৃথিবীর উন্নত জাতিতে। মানব ইতিহাসে তিনিই প্রথম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা পেশ করেছেন, যা আত্মিক ও বস্তুগত উভয় দিক থেকে মানুষের সংকটমুক্তির দায়িত্ব নিয়েছে। ইসলাম পৃথিবীর সেই একক ও বৃহত্তম ধর্ম, যা নিঃস্ব ও দরিদ্র জীবনের মাঝে মর্যাদা ও তাৎপর্য দান করেছে। ইসলাম বিভিন্ন গোত্রের মানুষকে পরস্পরে ভাইয়ের মতো থাকার এবং বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার শিক্ষা দিয়েছে। ইসলাম মানব পৃথিবীতে এমন একটি উন্নত সভ্যতা দান করেছে, যার ফলশ্রæতিতে ইসলামি সমাজের রূপ সামনে এসেছে। সে সমাজে মুসলমানদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের অনুসারীরাও সৃজনশীলতা ও পরিতৃপ্তির সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করছে।
আজকের এই অশান্ত পৃথিবীতে যে ধর্ম ও কর্মসূচির প্রয়োজন সেটি হলো ইসলাম। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী সকল মানবজাতীর জন্য একটি সমন্বিত সম্পদ। মহান আল্লাহ তাআলার সকল বস্তুগত নিয়ামত যেমন সকল মানুষের জন্য অবারিত, ঠিক তেমনই এই রূহানী নিয়ামতও (প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম) সকল মাখলুকের জন্য উন্মুক্ত। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমাত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।” (সূরা আম্বিয়া : ১০৭) “তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্যে থেকেই একজন রাসুল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গল কামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।”

আমরা সবাই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর উম্মত। তিনি আমাদের কাছে বার্তা দিয়েছেন, বন্ধুত্ব, সহিষ্ণুতা, মানুষের সম্মাননা, নিরাপদ সহাবস্থান, পক্ষপাতমুক্ততা এবং শান্তি ও নিরাপত্তার। নিরাপত্তা, সৌজন্য ও শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আমাদের দায়িত্ব হলো, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর আদর্শের উপর অটুট থাকা এবং অন্যকে এর প্রতি উৎসাহিত করা ও ব্যাপক প্রচার করা। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর আদর্শ শিক্ষা আমাদেরকে এমন একটি সমাজ গড়তে অনুপ্রাণিত করে, যে সমাজের প্রতিটি সদস্য হয়ে উঠে সৎ মানুষ। এমন সৎ মানুষ যার গুণাবলি বর্ণিত রয়েছে সূরা আসরে।

ইসলামের তত্ত¡গত দর্শন সম্পর্কে সমাজের প্রতিটি মানুষের অন্তরে থাকতে হবে দৃঢ় বিশ্বাস। প্রতিটি মুহূর্তে অনুভূতি জাগ্রত থাকতে হবে আল্লাহ’র আনুগত্য, সুন্নাতের অনুসরণ, তাকওয়া অবলম্বন এবং আখিরাতের জবাবদিহি সম্পর্কে। থাকতে হবে দ্বীনি ইলমের চর্চা। পাশাপাশি চলতে হবে বৈষয়িক, আর্থিক ও বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞানের চর্চা। দিতে হবে মানুষের শৈল্পিক ও পেশাভিত্তিক মেধা বিকাশের সুযোগ। যেন হালাল জীবিকা অর্জন করতে পারে। মানুষের অন্তরে, চরিত্রে ও জীবনে আনতে হবে শুদ্ধি। সর্বোপরি মানুষের মাঝে সময় ও নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এ সকল ভিত্তির উপরই একটি আদর্শ সমাজের কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন। সে সমাজই পৃথিবীর সকল সমাজের উপর সর্বাত্মক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছিলো।

সর্বশেষ বললো, বর্তমান যুগেও একটি আদর্শ সমাজের রূপায়ন সম্ভব হবে যখন আমরা মানবতার ত্রানকর্তা, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর শিক্ষা, সীরাত ও আদর্শকে আমাদের কর্মপন্থা হিসেবে গ্রহণ করে নেব। এতেই রয়েছে মানবতার মুক্তি। এতেই রয়েছে কল্যাণ। এতেই রয়েছে সাফল্যের সোপন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন