একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১১৭ ভাগ ভোট ডাকাতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা আসম আবদুর রব। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘ভুয়া’ ভোটের প্রতিবাদে কালো ব্যাজ ধারণ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এ অভিযাগ করেন।
আ স ম আবদুর বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হয় নাই, নির্বাচনের নামে নাটক হয়েছে। ৩০ তারিখ ভোট হওয়ার কথা, ২৯ তারিখে ভোটের ডাকাতি হয়েছে। আর সেই ভোট ডাকাতদের সরকার পুরস্কৃত করছে। পৃথিবীর ইতিহাসে সূচক হলো একশ। বাংলাদেশে ভোট ডাকাতি হয়েছে এক‘শ ১৭ পয়েন্ট তিন পারসেন্ট। এর মধ্যে ৯৭ দশমিক ৩ পারসেন্ট হলো ব্যালেটে ডাকাতি, ৫ পারসেন্ট যারা নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত ছিলো ভোট দিতে পারে নাই, ৫ পারসেন্ট হলো যারা মারা গিয়েছে, বিদেশে আছেন, ১০ পারসেন্ট হলো গার্মেন্টস শ্রমিকসহ যারা ভোট দিতে পারে নাই। মোট হচ্ছে ১১৭ দশমিক ৩। পৃথিবীর ইতিহাসে এই ধরনের জালিয়াতি, এক‘শ এর উপরে ১১৭। ঠকের ওপরে বাটপার, বাটপারের ওপরে বাটপারি-এটা বিশ্বের আর কোথাও হয়েছে বলে শুনিও নাই, বই-পুস্তকে পড়ি নাই, দেখিও নাই।
আ স ম রব বলেন, গণতন্ত্রের চেতনাকে, মানুষের বিবেককে হত্যা করে ৩০ তারিখে ভোটের ফলাফলের নামে নাটক করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু লোক, প্রশাসনের একটি অংশ মিলে যে ডাকাতি করেছে সেই ডাকাতিতে শকুনরা আজকে উৎসব করছে। শকুনদের মেলা বসেছে। ৩০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রের ভিত্তি, ক্ষমতার বিভাজন, সংবিধানের নির্দেশনা সব ধ্বংস করেছে। পৃথিবীর কোথাও এই ধরনের নিষ্ঠুর-নির্মম কান্ড ঘটে নাই।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে দলের অধীনে নেয়া হয়েছে। এখন পুরস্কার দেয়া হচ্ছে যারা ভোট ডাকাতি করেছে। ঘুষ দেয়া হয়েছে ইউনিয়ন পর্যন্ত শিক্ষকদেরকে। যারা নিতে চায়নি তাদের বলেছেন যে, না নিতে চাইলে দান করে দেবেন কিন্তু নিতে হবে। হাজার হাজার কোটি টাকার ঘুষ দেয়া হয়েছে সারা বাংলাদেশে প্রশাসন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসার সবাইকে ঘুষ দেয়া হয়েছে। যে রাষ্ট্রের সকল প্রশাসন দুর্নীতি ও ঘুষ খেয়ে ভোট ডাকাতি করে সে রাষ্ট্র আর রাষ্ট্র থাকে না।
বিএনপির কারাবন্দি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তির দাবিও জানান রব। এ সময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নেতা-কর্মীরা শ্লোগান দিতে থাকে। এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিন সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক ঘন্টার মানববন্ধন করে এই ভোট বাতিলের দাবিতে। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে সরকার গঠন করলেও বিএনপি বলছে, ‘ভোট ডাকাতি’ করে জিতেছে ক্ষমতাসীনরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ইতিহাসের পেছনে ফিরে গেলে দেখবেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটবিহীন নির্বাচন হয়েছে। মিডিয়ার কল্যাণে আমরা দেখেছি সেদিন ভোট কেন্দ্রে ভোট দিয়েছে কুকুর ও বেড়াল দেখিছি, কোনো ভোটার ভোট দেয় নাই। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন হয়নি, প্রহসন হয়েছে। দেশের জনগন ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া জানে দেশে কীভাবে প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। এবারের নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, ক্ষমতা দখল করে দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা অবসান হবে না। এই সরকারের অন্যায় শাসন বাংলাদেশের জনগন মেনে নেবে না।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ২৯ ডিসেম্বর রাতে বাংলাদেশে জনগনের অধিকার লুন্ঠন হয়েছে। বিনা জানাজায় ৩০ ডিসেম্বর তাকে কবর দেয়া হয়েছে। এই কবর যারা দিয়েছে আমলাদের সাথে পুলিশ বাহিনী তাদের পুরস্কার দেয়া শুরু হয়েছে। আপনারা দেখেছেন গত দুইদিন যাবত পুলিশরা একের পর এক তাদের পুরস্কার গ্রহন করছেন। তারা (পুলিশ বাহিনী) দুইটা পুরস্কারের কথা বলতে ভুলে গেছেন। একটা তাদের কতজনকে অ্যাম্বেসেডর বানাতে হবে সেই দাবিটা করেন নাই। আরেকটা তাদের কতজনকে মন্ত্রী বানাতে হবে- সেই দাবি করেন নাই। অপেক্ষায় থাকেন, আজকে আমলা (জনশ্রশাসন) বনাম , আজকে ডিসি বনাম এসপি সাহেবদের রঙ্গযাত্রা দেখার জন্য। সময় সামনে আসছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে একাদশ নির্বাচনে ভুয়া ভোটের প্রতিবাদে বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এই মানবন্ধন কর্মসূচি হয়। নেতা-কর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ লাগিয়ে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও গণফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশতাক আহমেদ ও বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদের পরিচালনায় মানববন্ধনে, গণফোরামের এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির সেলিমা রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কাজী আবুল বাশার, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক, রফিকুল ইসলাম পথিক, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, মমিনুল ইসলাম, গণদলের এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে গণফোরামের আমসা আমিন, বিকল্পধারা শাহ আহমেদ বাদল, বিএনপির সাহিদা রফিক, বিলকিস জাহান শিরিন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শিরিন সুলতানা, শামীমুর রহমান শামীম, আবদুল আউয়াল খান, হালিমা নেওয়াজ আর্লী, নবী উল্লাহ নবী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, রফিক হাওলাদার, ইয়াসীন আলী, এসএম জিলানী, ফখরুল আলম রবিন, রেজাওয়ানুল হাসান রিয়াজ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন