শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ বছর পর ছাত্রদল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

২০১০ সালের ১৮ জানুয়ারি ছাত্রলীগের হামলার মুখে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হয়েছিল বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল, মিটিং সভা তো দূরে থাকা ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতেও যেতে পারেনি ছাত্র সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পর গতকাল (বৃহস্পতিবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে ছাত্রদল।
সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী কয়েকশো নেতাকর্মী নিয়ে ভিসির কার্যালয়ে আসেন। শীর্ষ চার নেতাসহ কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন নেতা ভিসির কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেয়ার জন্য প্রবেশ করেন। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভিসির সঙ্গে আলোচনা করেন ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা। ভিসির কাছে ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান, ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে করা, নির্বাচনে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট নির্ধারিত বয়সসীমা (৩০ বছর) বাতিলসহ সাত দফা দাবি জানান তাঁরা। স্মারকলিপি দিয়ে বের হওয়ার পর তাদের নেতৃত্বে ভিসি চত্বর, টিএসসি, চারুকলা হয়ে হেঁটে শাহবাগ যান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এর আগে ২০১০ সালে ১৮ জানুয়ারি ছাত্রদল সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল ও সমাবেশ করে। ওই দিনি ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের হামলার মুখে পড়ে। এতে সে সময়ের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। এরপর আর ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে মিছিল করতে দেখা যায়নি। তবে এর পরের বছর ওই হামলার এক বছর প‚র্তিতে হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে ছাত্রদল শাহবাগ থেকে থেকে মিছিল বের করে ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করে। তবে পুলিশি বাধার কারণে ছাত্রদলের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
হাইকোর্টের নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপরই ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের পথ খুলে যায়। আগামী ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ মুহূর্তে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সময় দরকার। বর্তমান পরিবেশে নাটক মঞ্চস্থ হতে পারে, নির্বাচন নয়। তাই আমরা নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়েছি। তবে ভিসির বক্তব্যে আমরা আশাহত হয়েছি। অন্য যেসব দাবি আমরা জানিয়েছি, সেগুলোর ক্ষেত্রেও ভিসি আমাদের আশ্বস্ত করেননি। স্মারকলিপিতে ছাত্রদলের দাবি : তফসিল ঘোষণার পূর্বে ৩ মাস সহাবস্থান নিশ্চিত করা ছাড়া ছাত্রদলের অন্য দাবিগুলো হল অংশগ্রহণমূলক ও ভীতিহীন পরিবেশে ডাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৩০ বছর বয়সসীমার পরিবর্তে ভর্তি সেশন নির্ধারণ করা, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ছাত্র সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতাদের প্রচারণায় অংশগ্রহণে কোনো বাধা প্রদান না করা এবং হামলা ,মামলা ও গ্রেফতার না করার বিষয়টি নিশ্চিত করা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ডাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ইতোমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও নেতাদের উপর হওয়া হামলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া, ডাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটিগুলোকে পূনর্গঠন করা এবং নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য শিক্ষকদের এসব কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা, ডাকসু গঠনতন্ত্রের ৫ এর (এ) অগণতান্ত্রিক ধারাটি সংশোধন করে সভাপতি ও ছাত্র সংসদের যৌথ সিদ্ধান্তের বিষয় সংযোজন করা এবং ৮ এর (এম) ধারাটি সংশোধন করা।
ভিসির কার্যালয় থেকে বেরিয়ে ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান বলেন, ভিসি আমাদের দাবিগুলো আন্তরিকভাবে শুনেছেন এবং আমাদের দাবির যৌক্তিকতা ইতোমধ্যে মেনে নিয়েছেন। তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের যৌক্তিক দাবি প্রশাসন মেনে নেবে এবং সকলের অংশগ্রহণে একটি কার্যকর ডাকসু নির্বাচন হবে।
তফসিলের আগে তিন মাস সহাবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সহাবস্থানের বিষয়টি এমন যে এটিকে যদি কার্যকর করতে হয় তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের দরকার। আজকে সহাবস্থান দিয়ে কালকে কিন্তু এটাকে কার্যকর বা স্থায়ী বলা যাবে না। ডাকসুকে কেন্দ্র করে সহাবস্থান নয়, আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর একটি স্থায়ী সহাবস্থান থাকুক।
ছাত্রদলের স্মারকলিপি পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, আমি তাদের বলেছি যে, ডাকসুর জন্যে নির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র রয়েছে এবং একটি আচরবিধি প্রণীত হয়েছে। ডাকসুর গঠনতন্ত্র এবং আচরণবিধি অনুসরণ করে ডাকসু এবং হল সংসদ নির্বচন অনুষ্ঠিত হবে। গঠনতন্ত্রের বিধিবিধান এবং আচরণবিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর জন্য প্রযোজ্য হবে।
তিনি বলেন, ছাত্র সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক কর্মকান্ড তাদের প্রক্রিয়া মোতাবেক পরিচালিত হবে। উগ্রপন্থি এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত এবং পরিবেশ পরিষদের বাইরের অন্য কোনো সংগঠনের কর্মতৎপরতা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকবে না। তবে ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতি উদাত্ত আহবান জানাই, তারা যেন পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে সকলে যত্নশীল থাকে।
নির্বাচনের তফসিল কবে নাগাদ ঘোষণা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন পরিচালনার জন্যে একটি পরিষদ রয়েছে, চিফ রিটার্নিং অফিসার এবং তার সঙ্গে রিটার্নিং অফিসাররা রয়েছেন। তারা এ বিষয়ে তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবেন। গঠনতন্ত্র এবং আচরণবিধি অনুসরণ করে তারা সকল কর্মপ্রয়াস গ্রহণ করবেন। এটিই হলো আমাদের রীতি। তারাই এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (19)
Niaz Khan ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
ইনশাআল্লাহ, এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে।৯০এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সবথেকে বেশী ভুমিকা পালন করছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
Total Reply(0)
Rifat Ahamed ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মিছিল করছে মনে হয় ।নাকি সব আদু ভাইয়েরা মিছিল করছে ??
Total Reply(0)
মোঃ মঈনুদ্দীন যায়েদ ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
জিয়ার সকল সৈনিকদের জন্য শুভ কামনা রইল।
Total Reply(0)
Kazi Ksb ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
এই শো ডাউন সাময়িক প্রতিপক্ষ চুপ সামনে নির্বাচন বলে, ডাকসু নির্বাচনের পরে কি পারবে এমন করে মিছিল মিটিং করতে পারবে....??
Total Reply(0)
Mir Md Mofazzal Hossain ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ব্যানারে চাচা জেঠাদের মিছিলের দৃশ্য, রাজনীতির অাতুরঘর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতির জন্য লজ্জার।
Total Reply(0)
MD.ROJJOB ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
এরা ছাত্র কেউ আমারে ধর হাসি আটকাইবার পারতেছিনা
Total Reply(0)
Shah Alam Khan ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
সব ঠিক ঠাক থাকলে নির্বাচনের দিন মামা, কাকা, বাবা খালু ও প্রশাসন ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারবে না। সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের একত্র করতে না পেড়ে মামা কাকা, খালু বাবা ও ভাড়াটে দিয়ে মিছিল করে মনের শান্তনা দিয়ে নিক। নির্বাচনের দিন ৩০শে ডিসেম্বরের মতো এজেন্টও খোঁজে পাবে না। মান রক্ষার্থে বলতে হবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।
Total Reply(0)
Goljar Hossain ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
আমার মনে কয় এই ধরনের ছাত্র দের জন্য বিএনপি চাকরি তে প্রবেশ এর বয়স সীমা আজীবন করার চিন্তা করছিল
Total Reply(0)
Sarder Md. Shohel Rana ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
ভালো লাগছে...
Total Reply(0)
নাসা দীপ্ত ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
এরা কি ছাত্র, নাকি ছাত্রের বাপ? তবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে ছাত্রলীগের সহযোগিতা ও সহনশীলতা প্রয়োজন। এমনটি হলে ভালো হবে এবং ঢাবির ঐতিহ্য রক্ষা হবে, ছাত্রলীগের প্রতি ছাত্র-জনতার আস্থা বাড়বে বৈ কমবে না।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
৩০ ডিসেম্বরের "মিড নাইট " নির্বাচনের পর এই সরকারের কোন নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোন মানে হয় না!!
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকশেখ সায়ফুল্লাহ ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলদ ফিরে এসেছে জেনে ভাল লাগল। আশা করি পরিবেশ এমনই থাকবে। ঢাকসু নির্বাচন সহ অন্যান্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো না হওয়াতে রাজনীতিতে আগাছায় ভরে গিয়েছে। এদের দূর করতে হলে নতুন ছাত্র নেতাদের উঠে আসা উচিত। আর সেটা হতে পারে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের পথ ধরে।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
নির্বাচনের কয়েকদিন আগে স্বয়ং ভি সি যেখানে ছাত্র দলকে মধুর কেন্টিনে যেতে নিষেধ করেন,সেখানে নির্বাচনের পরিবেশ কি, তা সহজেই অনুমেয়!!!!
Total Reply(0)
সাহেদ শফি ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
মিছিলটি কি ছাত্রলীগের পারমিশন নিয়ে করেছে?
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
একটা মি‌ছিল খুব বড় কোন ব্যাপার না; এটা নিবাচ‌কে বৈধতা দেয়ার অন্ত্র হিসা‌বে ব্যাব‌হিত হ‌বে।
Total Reply(0)
Hasib ctg ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
কে বলেছে পরিবেশ নাই, আরে ভাই ভোটতো হবে রাত বারোটার পরে।
Total Reply(0)
MD Shahiduzzaman Sumon ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
এটাই গনতন্ত্র! সব দলের সমান ভাবে এদেশে রাজনীতি করুক।দেশে শান্তিপূন পরিবেশ ফিরে আসুক।
Total Reply(0)
Dipu Ahmeed ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
অনেক ভালবাসা থাকলো তোমাদের জন্য । শহিদ জিয়ার আদর্শেকে ভুলে যেওনা তোমার।
Total Reply(0)
Nahid hasan ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৮ পিএম says : 0
ছাত্র দলের উচিৎ গণতন্ত্র রক্ষার জন্য বুকে সাহস নিয়ে ডাকসু নির্বাচন করা এবং অগণতন্ত্রকারীদের রুখে দেয়া
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন