চাদরটা সাদা হতেই পারে, প্রথাটা কিন্তু নিকষ কালো! সাদা চাদরে কুমারীত্বের চিহ্ন দেখাতে না পারলে বৈধই হবে না বিয়ে। অবশেষে নক্ক্যরজনক এই প্রথায় রাশ টানল ভারতের মহারাষ্ট্র সরকার ৷
মহারাষ্ট্র সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও মহিলা কুমারী কিনা জানতে চাওয়া এবং তার জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা তাঁকে যৌন হেনস্থা করার সামিল । এমনই মনে করে মহারাষ্ট্র সরকার। আর এখন থেকে এ রাজ্য বিষয়টিকে অপরাধ বলেই ধরা হবে। হবু স্ত্রীয়ের পাশাপাশি সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীয়ের ক্ষেত্রে এই নতুন নিয়ম একই ভাবে কার্যকর হবে।
রাজ্যের বেশ কয়েকটি জনজাতির মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে এ ধরনের প্রথা চলে আসছে । সেগুলি বন্ধ করতেই পদক্ষেপ করল দেবেন্দ্র ফড়নবিশ সরকার। মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী রঞ্জিত পাতিল বুধবার কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে মন্ত্রী জানান, কোনও মহিলা কুমারী কিনা জানতে কোনও রকম পরীক্ষা করা যাবে না। পরীক্ষা করলে তা অপরাধ বলেই চিহ্নিত হবে। খুব তাড়াতাড়ি এই মর্মে নির্দেশিকাও জারি করা হবে ৷
মহারাষ্ট্রে কঞ্জরভাট নামে একটি জনজাতি রয়েছে ৷ আর সেই সমাজে প্রায় ৪০০ বছর ধরে চলে আসছে মহিলাদের কুমারীত্ব প্রমাণ করার রীতি। স্বামী-স্ত্রী না চাইলেও পরীক্ষা হবেই। পঞ্চায়েত মাতব্বরদের নিদান অগ্রাহ্য করার উপায় কারওর নেই। গত বছর এই রীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন কঞ্জরভাট জনজাতিরই এক দম্পতি বিবেক-ঐশ্বর্যা। ছাই চাপা আগুনের মতোই সমাজের তরুণ প্রজন্ম প্রতিবাদ চালিয়েছিল অলক্ষ্যে।
সেই প্রতিবাদই এবার মান্যতা পেল। শতাব্দী প্রাচীন অভিশাপ থেকে মুক্তি পেল কঞ্জরভাট নারীরা। তবে এই কুমারীত্বের প্রথা আসলে কী ? বিয়ের রাতে বধূকে প্রমাণ দিতে হবে যে তাঁর যোনি অক্ষত। এই প্রথা যেমন নিন্দনীয় তেমনিই নিন্দনীয় এই প্রথার নিয়মখানিও ৷ কী সেই নিয়ম ?
কী ভাবে দিতে হবে প্রমাণ? সাদা চাদরের উপরে স্বামীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করে। কাদের কাছে এবং কী ভাবে প্রমাণ দিতে হবে? সঙ্গমের আগে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় মুখোমুখি হতে হবে সম্প্রদায়ের কোনও মহিলার। আর সঙ্গমের পরের সকালে দাগ লাগা সাদা চাদর দেখাতে হবে রাতভর দরজার বাইরে অপেক্ষায় থাকা মোড়ল-মাতব্বরদের।
বিয়ের আগে অন্য কারও সঙ্গে যৌন সঙ্গম করেননি নারী— সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতেই সতীত্ব পরীক্ষার এই প্রথা। পরীক্ষায় পাশ না করলে বিয়ে অবৈধ। অর্থাত্ সঙ্গমের পরের সকালে চাদর দেখে যদি মোড়ল-মাতব্বরদের মনে হয় যে, নববধূর সতীচ্ছদ আগেই কখনও ছিন্ন হয়েছিল, তা হলে বিয়ে তো মান্যতা পেলই না, সর্বসমক্ষে নববধূর জন্য অপেক্ষায় রইল চরম লাঞ্ছনা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন