শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ ঐতিহ্যের প্রাচীন শহরে মেয়েদের স্বপ্নের শিক্ষাঙ্গন

প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : প্রতœতত্তে¡র নিদর্শনসমৃদ্ধ এবং খাদি, কুটিরশিল্প, মৃৎশিল্প, রসমালাই ও শিক্ষা-সংস্কৃতির পাদপীঠ হিসেবে খ্যাত সমতটের প্রাচীন জেলা কুমিল্লা। আর শহরেই অর্ধশত বছর ধরে নারীশিক্ষা প্রসারে অভাবনীয় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ। ঐতিহ্যের প্রাচীন শহর কুমিল্লায় সরকারি মহিলা কলেজ এখন মেয়েদের স্বপ্নের শিক্ষাঙ্গন।
উইমেন্স কলেজ নামে পরিচিত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কুমিল্লা শহরের ঐতিহাসিক রাণীরদীঘি থেকে মাত্র দুইশ’ গজ দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে মনোহরপুর এলাকায় মনোরম পরিবেশে ৫ একর জমির ওপর ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় সাড়ে সাত হাজার ছাত্রী কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে লেখাপড়া করছে। চট্টগ্রাম বিভাগে মেয়েদের কলেজের মধ্যে ছাত্রীসংখ্যা ও বিষয়ের দিক থেকে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ একটি অন্যতম শিক্ষাঙ্গন। কলেজ অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ শিক্ষক রয়েছেন ৬০ জন। আবার অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছেন ১৬ জন। অফিস ও অন্যান্য বিভাগে ৪০ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কলেজটি দেশব্যাপী ব্যাপক সুনাম অর্জন করে। ১৯৯১ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ অনুষ্ঠানে সারাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি সনদ অর্জন করে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ। বর্তমানে কলেজে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, ইসলামের ইতিহাস, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, রসায়নবিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, গণিতসহ ১২টি বিষয়ে অনার্স এবং সমাজকর্ম, বাংলা, দর্শন, রসায়ন, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, গণিতসহ ৮টি বিষয়ে মাস্টার্স, বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রিলিমিনারি, পাসকোর্সসহ বিএ, বিএসএস, বিএসসি ও উচ্চ মাধ্যমিক শাখা চালু রয়েছে। ১৯৭২ সাল থেকেই এ কলেজে চালু ছিল বাংলা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স কোর্স।
প্রতিবছরই বিপুল সংখ্যক ছাত্রী ভর্তি হচ্ছে সরকারি মহিলা কলেজে। রাজনীতিমুক্ত পরিবেশে কলেজের লেখাপড়ার মান নিয়ে ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের কোন অভিযোগ নেই। সময়ের পরিক্রমায় আজ হাজারো ছাত্রীর স্বপ্নের শিক্ষাঙ্গনে রূপ নিয়েছে কুমিল্লা সরকারি মহিলা। বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক এএসএম আবদুল ওহাবের দিক নির্দেশনায় কলেজের অতীতের সুনাম, সাফল্য ধরে রাখার লক্ষ্যে শ্রম দিচ্ছেন শিক্ষকরা। ছাত্রীরা যাতে কোচিং নির্ভর না হয়ে ক্লাশমুখি হয় এজন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে উচ্চ মাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষার পাশাপাশি গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিসংখ্যানসহ চারটি নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে। তারমধ্যে কুমিল্লার অন্য কোন সরকারি কলেজে গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ও ভূগোল বিষয় নেই। অধ্যক্ষ এএসএম আবদুল ওহাব এ কলেজে যোগদানের পর যুগোপযোগী ওই তিনটি বিষয় উচ্চ মাধ্যমিকে চালু করেন।
কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে হজরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রা.) ও নওয়াব হোচ্ছাম হায়দার নামে দুটি হোস্টেল (ছাত্রীনিবাস) রয়েছে। কুমিল্লার ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধারণ করে হোষ্টেলের বিভিন্ন কক্ষের নাম দেয়া হয়েছে। এসব নামের মধ্যে রয়েছে সমতট, কমলাঙ্ক, রোহিতগিরি, গোমতি, আর্যভাটিয়া, কোটবাড়ি, মুন্সেফবাড়ি, নবাববাড়ি, সেনাইছড়ি, ডাকাতিয়া, কাকড়ি, আদালতপাড়া, মেরিকুরি প্রভৃতি। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগিয়ে রাখতে কলেজের একটি বর্ধিত ভবনের সাতটি কক্ষের নাম দেয়া হয়েছে তোমার আমার, ঠিকানা, পদ্মা, মেঘনা, যুমনা, জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। এদিকে হোস্টেল দু’টিতে প্রায় তিনশ’ ছাত্রীর আবাসন ব্যবস্থার বিপরীতে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে প্রায় ৮শ’ ছাত্রীকে। প্রতি বছরই দূর-দূরান্তের ছাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু আসন অপ্রতুলতার কারণে অনেকেরে হোস্টেলে স্থান হচ্ছে না। ছাত্রীদের আবাসন সমস্যার বিষয়টি সমাধান করা জরুরী হয়ে পড়েছে। ছাত্রীরা জানায়, ‘কলেজ থেকে প্রায় তিনশ’ গজ উত্তরে রাণীরদিঘীর পূর্বপাড়ে ফুলার নামে যে হোষ্টেলটি রয়েছে এটি একসময় সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবন ও ছাত্রীনিবাস ছিল। বর্তমানে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ফুলার হোষ্টেলটি সংস্কার করে কলেজের অধীনে এখানে ছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা করা হলে আবাসন সংকট অনেকটা কমে আসবে।’
এদিকে কলেজের পরিত্যক্ত ভবনটি ভেঙ্গে এখানে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। নতুন ভবনে থাকবে কলেজ অডিটরিয়াম, একাডেমিক ভবন ও শ্রেণীকক্ষ। কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক এএসএম আবদুল ওহাব বলেন, ‘নিঃসন্দেহে বলা যায় এ কলেজ নিরাপদ ও রাজনৈতিক গোলযোগমুক্ত মনোরম পরিবেশে মেয়েদের পড়ালেখার অন্যতম প্রতিষ্ঠান। শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবাই কলেজের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে আন্তরিক। পড়ালেখার মান, ক্রীড়া-সাংস্কৃতিকসহ সকল ক্ষেত্রে এ কলেজের সুনাম রয়েছে। তবে হোষ্টেলের আসন কম থাকায় আবসিক ছাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে এটা আমরা উপলব্ধি করছি। নতুন হোষ্টেল এবং শহরের বাইরের এলাকার ছাত্রীদের যাতায়াত সুবিধার্থে কলেজের নিজস্ব পরিবহন খুবই প্রয়োজন।’

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন