বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বার্সার ২৪, না রিয়ালের ৩৩?

প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : লা লিগার শিরোপা লড়াই পৌঁছে গেছে ‘ফাইনাল’ রাউন্ডে। একসময় পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে থাকা বার্সেলোনা এখনও আছে শীর্ষে, শেষ রাউন্ডে জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হবে তারা। তবে নির্ভার গ্রানাদার মাঠে কোনোরকম হোঁচট মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্নে হতে পারে বড় বাধা। আজ রাতে গত সপ্তাহে দারুণ এক জয়ে অবনমন এড়ানো নিশ্চিত করা গ্রানাদার মাঠে নামবে ২৪তম লিগ শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর বার্সেলোনা। তীরে এসে তরী যেন না ডোবে, তা নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক লুইস এনরিকের দল। একই সময়ে দেপোর্তিভো লা করুনার বিপক্ষে মাঠে নামবে শিরোপা লড়াইয়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ। গ্রানাদার বিপক্ষে বার্সেলোনা পয়েন্ট হারালে নিজেদের ম্যাচটি জিতলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে জিনেদিন জিদানের দল। ৩৭ রাউন্ড শেষে বার্সেলোনার পয়েন্ট ৮৮, এক পয়েন্ট কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে রিয়াল। গত সপ্তাহে শিরোপা দৌড় থেকে ছিটকে পড়া আতলেতিকো মাদ্রিদের পয়েন্ট ৮৫।
দুই মাস আগে অ্যাটলেটিকোর চেয়ে ৯ ও রিয়ালের চেয়ে ১২ পয়েন্ট এগিয়ে ছিল বার্সেলোনা। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতনে খেই হারায় দলটি; ভিয়ারিয়ালের মাঠে ড্র’র পর এপ্রিলের প্রথমভাগে টানা তিন ম্যাচ হেরে বসে লুইস এনরিকের দল। এর মধ্যে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী রিয়ালের কাছে ঘরের মাঠেও হারে লিওনেল মেসিরা। সেই সুযোগে ফেব্রæয়ারির পর থেকে কোনো ম্যাচ না হারা রিয়াল উঠে আসে শীর্ষস্থানধারীদের ১ পয়েন্টের ব্যবধানে। কাতালানদের শিরোপা স্বপ্নে আরও বড় বাধা হয়ে উঠেছিল আতলেতিকো, পয়েন্টের হিসেবে মেসিদের ধরেই ফেলেছিল দলটি। তবে গত সপ্তাহে লেভান্তের কাছে হেরে ছিটকে পড়ে তারা।
তবে বার্সেলোনার জন্য স্বস্তির বিষয় হলো, মাঝে পথ হারালেও সঠিক সময়ে নিজেদের খুঁজে পেয়েছে তারা। স¤প্রতি দলের সেরা তারকা মেসির কণ্ঠেও শোনা যায় সেই স্বস্তির কথা। গত এপ্রিলে ভালেন্সিয়ার কাছে হেরে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর কোচ এনরিকে আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে জানিয়েছিলেন, শেষ পাঁচ ম্যাচ জিতে শিরোপা উল্লাসে মাতবে তার দল। সে লক্ষ্যে টানা ৪ ম্যাচ জিতে লক্ষ্যের দুয়ারে পৌঁছে গেছে বার্সেলোনা। গত চার ম্যাচে লুইস সুয়ারেসদের পারফরম্যান্সও দুর্দান্ত; এই সময়ে ২১ বার প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছে তারা, বিপরীতে কোনো গোল খায়নি।
পুরনো রূপে ফিরতে বার্সেলোনার এই পথচলায় সবচেয়ে বড় অবদান সুয়ারেজের, শেষ চার ম্যাচে দলের ২১ গোলের ১১টিই করেন তিনি। লিগে মোট ৩৭ গোল করে পিচিচি ট্রফি জয়ের লড়াইয়েও বড় ব্যবধানে এগিয়ে তিনি। ৪ গোল কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রিয়ালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ছন্দে ফিরেছেন ‘এমএসএএন’ আক্রমণত্রয়ীর অন্য দুই তারকা মেসি ও নেইমারও। এই সময়ে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক ৩টি ও ব্রাজিল অধিনায়ক ২টি গোল করেন। সব মিলিয়েই শেষ রাউন্ডে গড়ানো শিরোপা লড়াইয়ে ‘ফেভারিট’ বার্সেলোনা। গ্রানাদার বিপক্ষে মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিসংখ্যানও মেসিদের পক্ষে; ১৭ ম্যাচের ১৫টিতেই জিতেছে তারা।
তবে গ্রানাদার সা¤প্রতিক পারফরম্যান্স বেশ ভালো, শেষ দুই ম্যাচে জেতা দলটি গত ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই অপরাজিত। ঘরের মাঠে তাদের পারফরম্যান্স আরও ভালো; শেষ ছয় ম্যাচে কোনোটিতে না হারা দলটি তিনটি করে ম্যাচ জিতেছে ও ড্র করেছে। গ্রানাদার ফরোয়ার্ড ইসাক কুয়েনকা তো বার্সেলোনার স্বপ্ন ভাঙার হুমকি দিয়ে রাখলেন, ‘শনিবার বার্সার জন্য আমরা পরিস্থিতি কঠিন করে তুলব। শেষ মিনিটে জয়সূচক গোল করাটা দারুণ হবে, চমৎকার একটা ব্যাপার হবে।’
তবে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজরা যদি নিজেদের কাজটা ঠিকমতো করতে পারেন তাহলে আর পেছনে তাকাতে হবে না বার্সেলোনাকে। ফাইনালে পরিণত হওয়া শেষ রাউন্ডের আগে সমর্থকদের প্রত্যাশা আর প্রার্থনা তাই একটা পচা শামুকে পা না কাটলেই হয়।
তাইতো আর্জেন্টিনার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হাভিয়ের মাচেরানো সতীর্থদের ছোটখাটো কোনো ভুল এড়াতেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিলেন, ‘আমরা একটি দল এবং আমরা সবাই জানি, এটা আমাদের উপর নির্ভর করে। গত কয়েক সপ্তাহে আমরা যেমন অন্য দলগুলোর বিপক্ষে খেলেছি, এটাও তেমনই একটি কঠিন ম্যাচ হবে। কোনো রকমের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সম্ভাব্য সেরা উপায়ে ম্যাচটি খেলতে চেষ্টা করব আমরা।’
একই রাতে বার্সার অমঙ্গল চেয়ে দেপোর্তিভো লা করুনার বিপক্ষে মাঠে নামছে রিয়াল। এই ম্যাচে শুধু জিতলেই লক্ষ্য পূরণ হবে না জিনেদিন জিদানের দলের; হোঁচট খেতে হবে শীর্ষে থাকা বার্সেলোনাকেও। আজ থেকে দুই মাস আগে কেউ ভাবতেও পারেনি, লা লিগার শিরোপা লড়াইয়ে বার্সেলোনাকে শেষ রাউন্ড পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ জানাবে রিয়াল। ২৯ রাউন্ড শেষে শীর্ষস্থানধারীদের চেয়ে ১২ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিল মাদ্রিদের ক্লাবটি। ওই সময় কোচ জিদান ও দলের সেরা তারকা রোনালদোসহ অনেকেই শিরোপার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। তবে বার্সেলোনার ছন্দপতনে আর নিজেরা অদম্য হয়ে ওঠায় ফিকে হয়ে যাওয়া সম্ভাবনাই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এমন অবস্থায় নিজেদের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনাটা আরবেলোয়ার কাছে অনেকটাই লটারি ভাগ্যের মতো, ‘দুই মাস আগে কেউ আমাদের এই জায়গায় ভাবতে পারেনি। এটা লটারি খেলার মতো: আপনি জিতলে চমৎকার আর না জিতলে দুর্ভাগ্য।’ হেসে রদ্রিগেস অবশ্য অতকিছু না ভেবে দেপোর্তিভোর ম্যাচ নিয়েই ভাবছেন, ঠিক অন্য সব ম্যাচের মতো। ক্লাবের ওয়েবসাইটে স্পেনের এই ফরোয়ার্ড বলেন, ‘অন্য সব ম্যাচের মতোই আমরা দেপোর্তিভো ম্যাচের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের একে অপরের চোখের দিকে তাকাতে হবে এবং মাঠে নেমে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে হবে কারণ আমাদের হোঁচট খাওয়ার সুযোগ নেই।’
মাঠে নামার আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠা রিয়াল শিবিরে অবশ্য নেই তেমন কোনো ভাবনা। অন্তত দলটির স্প্যানিশ ডিফেন্ডার আলভারো আরবেলোয়ার কথায় তেমনটাই বোঝা যাচ্ছে, ‘আমাদের হারানোর কিছু নেই। আমরা শিরোপা জিতলে সেটা হবে দারুণ আনন্দের। আর না জিতলে আমার মতে, আমাদের খুশি হওয়া উচিত এই ভেবে যে কিভাবে আমরা মৌসুম শেষ করেছি, শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছি।’
লিগে টানা ১১ ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে শেষ রাউন্ডে মাঠে নামতে যাচ্ছে রিয়াল। গ্যারেথ বেল চোট কাটিয়ে অনুশীলনে ফেরায় শিরোপা নির্ধারণী দিনে ‘বিবিসি’ আক্রমণভাগের তিন তারকাকে পাওয়ার সম্ভাবনাও জোরালো হয়েছে দলটির। সব মিলিয়ে শক্তি-সামর্থ্যে অনেকটা পিছিয়ে থাকা দেপোর্তিভোর বিপক্ষে রিয়ালের জয়ের পাল্লা তাই অনেকটাই ভারি। আর তাই নিজেদের জয়ের পাশে স্পেনের সফলতম দলটির মূল চাওয়া যেন খেই হারায় চিরপ্রতিদ্ব›দ্বীরা, তাহলেই ৩৩তম লিগ শিরোপা ঘরে তুলতে পারবে ক্লাবটি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন